বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৪
নিসা—১০৬ থেকে ১১৫ আয়াত।]
১০৬)
এবং আল্লাহ্র কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু।
মর্মার্থঃ—নিজের অন্তরের আল্লাহ্র কাছে ভুল
হলে ক্ষমা প্রার্থনা কর, সেই সাথে এ জীবনের সাথে প্রতিনিয়ত কত পাপ চিন্তা ও কাজ
যুক্ত হয়ে এর পবিত্রতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে, যা তুমি হয়ছো বুঝতে পারছো না, তার
জন্য বার বার ক্ষমা ভিক্ষা কর। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
১০৭) আর তুমি তাদের পক্ষে কথা বল না – যারা
নিজেদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে। নিশ্চয় আল্লাহ্ বিশ্বাসঘাতক পাপিষ্ঠকে ভালবাসেন
না।
মর্মার্থঃ—যাদের নিজেদের অন্তরের আল্লাহ্র
পবিত্র শক্তির প্রতি বিশ্বাস নেই, তাদের নিজেদের সততার প্রতিও বিশ্বাস নেই, এরাই
অবিশ্বাসী বিশ্বাসঘাতক, এরা নিজেদের প্রতি প্রতিনিয়ত বিশ্বাসঘাতকতা করে চলে কিন্তু
এদেরকে তাদের ভুল ধরিয়ে দিলেও তা বিশ্বাস করে না, এরাই হলো পাপিষ্ঠ, আল্লাহ্ এই
বিশ্বাসঘাতক পাপিষ্ঠদের ভালবাসেন না।
১০৮) এরা মানুষকে লজ্জা করে, কিন্তু
আল্লাহ্কে লজ্জা করে না এবং রাত্রে যখন তারা তিনি ( আল্লাহ্) যা পছন্দ করেন না
এমন বিষয়ের পরামর্শ করে, তখন তিনি( আল্লাহ্) তাদের সঙ্গেই থাকেন এবং তারা যা করে
তা সর্বতোভাবে আল্লাহ্ জ্ঞানায়ত্ত।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্ সদায় চিরসাথী হয়ে
মানুষের সাথেই আছেন, এই বিশ্বাস যাদের অন্তরে প্রবল তারা বিশ্বাসী হয়ে দিনে রাতে
কোন সময়েই অসৎ কাজ করতে পারে না, তারা কেবল আল্লাহ্র সন্তুষ্টি বিধানের জন্য যা
করা প্রয়োজন তাই করে চলে নিজে কর্তব্য কর্ম রূপে। আর যারা নিজের সাথে আল্লাহ্
বিরাজ করছেন এই সত্যে বিশ্বাসী নয় তাদের তাঁকে লজ্জা পাবারও কথা নয়, তাই তারা
মানুষকে ভয় ও লজ্জা করে এবং অজ্ঞানের অন্ধকারে অর্থাৎ রাত্রে যত প্রকার পাপ কাজের
শলাপরামর্শ করতে থাকে। আল্লাহ্ এদের ব্যাপারে সব জানেন।
১০৯)
দেখ, তোমরাই পার্থিব জীবনে তাদের পক্ষে কথা বলছ; কিন্তু কিয়ামতের দিন ( শেষ
বিচারের দিন) আল্লাহ্র সম্মুখে কে তাদের পক্ষে কথা বলবে, অথবা তাদের উকিল হবে?
মর্মার্থঃ—এই জীবনে অন্যায়কারীদের পক্ষ নিয়ে
হাজার হাজার লোক সুপারিশ করছে এবং তাদেরকে পদে বসাচ্ছে লোভে-মোহে পড়ে। কিয়ামতের
দিন আল্লাহ্র সম্মুখে এদের কাউকে দেখা যাবে না পক্ষে বলার জন্য, এমনকি কোন উকিলও
পাবে না তারা তাদের হয়ে ওকালতি করার জন্য।
১১০) আর যে কেউ মন্দ কার্য করে অথবা
নিজের প্রতি জুলুম করে, কিন্তু আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চায়, সে আল্লাহ্কে ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু (রূপে) পাবে।
মর্মার্থঃ--- এমন অনেক লোককে দেখা যায়, যারা
পরিবেশ ও পরিস্থিতির শিকার হয়ে মন্দ কার্য করে এবং অপরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য নিজের
প্রতি জুলুম করতে বাধ্য হয়, এরা কিন্তু নিজের ভুল হচ্ছে জেনেও ভুল করে এবং আল্লাহ্র
কাছে বার বার ক্ষমা চেয়ে নেই। এরাই শেষে আল্লাহ্কে ক্ষমাশীল ও পরমদয়ালু রূপে পায়।
১১১) আর যে কেউ পাপ কাজ করে সে তা দিয়ে
নিজেরই ক্ষতি করে এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
মর্মার্থঃ—নিজের অন্তরের আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ,
প্রজ্ঞাময় হয়ে সাথে আছেন জেনেও যে পাপ কাজ করে, সে কিন্তু নিজের অন্তরের আল্লাহ্র
কোন ক্ষতি করতে পারে না, তা দিয়ে সে নিজেরই ক্ষতি করে।
১১২)
কেউ কোন দোষ বা পাপ করে পরে তা কোন নির্দোষ ব্যক্তির প্রতি আরোপ করলে সে মিথ্যা
অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।
মর্মার্থঃ—নিজে দোষ বা পাপ কাজ করে
অপরের ঘাড়ে সেই দোষ বা পাপ চাপিয়ে দেওয়ার লোকের অভাব নেই। যারা এই কাজ করে তারাই
এই মিথ্যা অপবাদ ও পাপের বোঝা বহন করে।
১১৩) আর যদি তোমার প্রতি আল্লাহ্র
অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত তবে তাদের একদল তো তোমাকে পথভ্রষ্ট করতে চেষ্টাই করেছিল,
কিন্তু তারা নিজেদের ছাড়া আর কাউকেও পথভ্রষ্ট করে না, এবং তোমার কোন ক্ষতি করতে
পারে না। আল্লাহ্ তোমার প্রতি কিতাব ও বিশেষ জ্ঞান অবতীর্ণ করেছেন এবং তুমি যা
জানতে না তা তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, আর তোমার প্রতি আল্লাহ্র মহাঅনুগ্রহ রয়েছে।
মর্মার্থঃ—মানব জাতির প্রতি আল্লাহ্র মহাঅনুগ্রহ রয়েছে বলেই এই জাতি যা
জানতো না তা শিক্ষা পেয়ে যাচ্ছে। এই জাতির উপর ধর্মগ্রন্থ যখনি প্রয়োজন হচ্ছে
অবতীর্ণ হয়ে চলেছে। শয়তান এই জাতিকে পথভ্রষ্ট করার জন্য সদায় তৎপর হয়েও সবায়কে তার
দলে টানতে সক্ষম হচ্ছে না। এই জাতির প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে, এই
জাতির উন্নতি স্তব্ধ হয়ে যেত এবং এরা পথভ্রষ্ট জাতিতে পরিণত হত।
১১৪)
তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোন কল্যাণ নেই, তবে যে দান- খয়রাত, সৎকাজ ও মানুষের
মধ্যে শান্তি স্থাপনের নির্দেশ দেয় (তাতে) কল্যাণ আছে। আর আল্লাহ্র সন্তুষ্টি
লাভের আকাঙ্ক্ষায় যে ঐরূপ করবে তাকে মহাপুরষ্কার দেব।
মর্মার্থঃ—যারা গোপন পরামর্শ করে, নিজেদের দল গঠন করার জন্য কাজ করে, তাদের
পরামর্শে কোন কল্যাণ নিহিত থাকে না। দান- খয়রাত, সৎকাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি
স্থাপনের জন্য যারা আল্লাহ্র আশ্রয়ে থেকে কাজ করে তারাই তাঁর কৃপাধন্য হয়।
১১৫) আর যে
ব্যক্তি তার নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং বিশ্বাসীদের পথ
ভিন্ন অন্য পথ অনুসরণ করে, সে যে দিকে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং
জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব, আর তা কত মন্দ আবাস!
মর্মার্থঃ—সত্যকে
জানার পরেও যারা সেই পথে না গিয়ে সেই পথের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা তো নিজের অন্তরের
আলোর বর্তিকা নিজেই নিভিয়ে দেয়, জাহান্নামে অর্থাৎ মন্দ আবাসে থাকার জন্য।
জয়
বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment