Monday, 20 August 2018

কুরআন সুরা-- ৪ নিসা-- ১১৬ থেকে ১২৫ আয়াত

    বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৪ নিসা—১১৬ থেকে ১২০ আয়াত।]
       ১১৬) নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাঁর সাথে শরিক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না, এ ছাড়া সব কিছু (পাপ) যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, এবং কেউ আল্লাহ্‌র শরিক করলে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়।
           মর্মার্থঃ—আল্লাহ্‌ হচ্ছেন প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব জ্ঞান ও শক্তি, যা আলোর বর্তিকারূপে সত্যের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেন। নিজের জ্ঞান ও শক্তির উপর যাদের আস্থা থাকে না তারাই পরনির্ভরশীল ও পরমুখাপেক্ষী হয়ে নিজের আল্লাহ্‌, যিনি সর্বশক্তি ও সর্বগুণের আধার, তাঁকে ছেড়ে অন্যের উপাসনা করতে যায়, এটা মানুষের মনের সবথেকে বড় দুর্বলতা ও রোগ। তাই যারা নিজের আল্লাহ্‌ ছেড়ে শরিক করে তারা ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়।
      ১১৭) তাঁর ( আল্লাহ্‌র) পরিবর্তে তারা দেবীর পূজা করে এবং বিদ্রোহী শয়তানদের পূজা করে।
         মর্মার্থঃ—মানুষের অন্তর নির্মল জ্ঞানের আলোতে আলোকিত না হওয়া পর্যন্ত পার্থিব চাকচিক্যময় জগতের মোহ ত্যাগ করতে পারে না। তাই এই জগতের অধিকাংশ মানুষ শয়তানী বুদ্ধির আশ্রয়ে গিয়ে বিভিন্ন দেব- দেবীর পূজা করে বা উপাসনা করে, জাগতিক সম্পদ কামনা করে থাকে। আল্লাহ্‌কে যে যেভাবে উপাসনা করে থাকে, তিনি সেভাবেই তার মনের বাসনা পূর্ণ করে থাকেন। জাগতিক সম্পদ ও জ্ঞানের সাথে দেব-দেবীর উপাসনা যুক্ত, আর এই সম্পদ ও জ্ঞান লাভ করার জন্য মানুষ শয়তানের আশ্রয়েও যেতে ভুল করে না, আল্লাহ্‌র আশ্রয় ত্যাগ করে।
         ১১৮) আল্লাহ্‌ তাকে ( শয়তানকে) অভিসম্পাত করেন এবং সে ( শয়তান) বলে, আমি তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে গ্রহণ ( নিজের দলে) করবই।
       মর্মার্থঃ—আল্লাহ্‌ শয়তানকে অভিশাপ দেন, মানুষকে তাঁর নির্দেশ মতো সিজদা না করার জন্য। তখনি শয়তান আল্লাহ্‌কে বলেন, “ আমি মানুষের একটা অংশকে নিজের দলে নিয়ে আসবই এবং তাদেরকে দিয়ে জাহান্নাম পরিপূর্ণ করবই”।
      ১১৯) এবং তাদের পথভ্রষ্ট করবই; তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবই, আমি তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব এবং তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই, এবং তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব এবং তারা আল্লাহ্‌র সৃষ্টি বিকৃত করবেই। এবং যে আল্লাহ্‌র পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করবে, নিশ্চয় সে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
      মর্মার্থঃ—মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মিথ্যা কামনা- বাসনার পিছনে ছুটে চলেছে সত্যকে ত্যাগ করে। মিথ্যা কামনা- বাসনার মোহে পড়ে পশুহত্যা করে চলেছে, আল্লাহ্‌র সুন্দর সৃষ্টিকে বিকৃত রূপ দিচ্ছে নিজের লালসা পূর্ণ করার জন্য। মানুষের এসব কাজের মুলে রয়েছে শয়তানী বুদ্ধি, কারণ মানুষ আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে শয়তানকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করেছে, অথচ মানুষ এই সত্য উপলব্ধি করতে পারছে না।
      ১২০) সে তাদের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে, এবং শয়তান তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা মাত্র।
     মর্মার্থঃ—শয়তান মানুষের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে ছুটিয়ে নিয়ে চলেছে মানব জীবনের সাফল্যকে বিনষ্ট করে দেওয়ার জন্য। শয়তানের সৃষ্টি করা মিথ্যা বাসনার পিছনে ছুটতে ছুটতেই মানুষের জীবন যখন শেষ হয়ে যায় তখন সে বুঝতে পারে এই ছলনাময় জীবনের রহস্য।
      ১২১) এ সকল লোকের বাসস্থান জাহান্নাম, তা হতে তারা নিষ্কৃতির উপায় পাবে না।
       মর্মার্থঃ—যারা আল্লাহ্‌র আশ্রয় ত্যাগ করে শয়তানের আশ্রয়ে গিয়ে মিথ্যা কামনা- বাসনার সংসার গড়ে তোলে তাদের বাসস্থান জাহান্নাম। এখান থেকে তাদের নিষ্কৃতির কোন পথ নেই।
      ১২২) যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশাধিকার দান করব, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি সত্য, আর কে আছে আল্লাহ্‌ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী?
         মর্মার্থঃ—নিজের অন্তরের আল্লাহ্‌ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী দ্বিতীয় কেউ থাকতে পারে না, একমাত্র তাঁর প্রতিশ্রুতিই সত্য। এই সত্যকে বিশ্বাস করে যারা সৎ কাজ করে একমাত্র তাদেরকে আল্লাহ্‌ জান্নাতে প্রবেশের অধিকার দিয়ে থাকেনএই জান্নাতের পাদদেশে আনন্দধারার নদী প্রবাহিত।
      ১২৩) তোমাদের খেয়াল খুশি ও আসমানী গ্রন্থধারীদের খেয়াল খুশি অনুসারে কাজ হবে না, যে মন্দ কাজ করবে সে তার প্রতিফল পাবে, এবং আল্লাহ্‌ ভিন্ন সে তার জন্য কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।
       মর্মার্থঃ—ইচ্ছা করলেই কেউ কাউকে যেমন সৎ পথে আনতে পারে না, তেমনি কেউ ইচ্ছা করলেই কারো ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। মানুষ মন্দ কাজ করলে তাকে সেই কাজের প্রতিফল নিতেই হবে। তাই একমাত্র মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্য নির্মাণ করতে পারে তাঁর আল্লাহ্‌কে অভিভাবক ও সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করে।
      ১২৪) আর পুরুষই হোক অথবা নারীই হোক, যারাই বিশ্বাসী হয়ে সৎকাজ করবে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও জুলুম করা হবে না।
       মর্মার্থঃ—নিজ অন্তরাত্মার প্রতি বিশ্বাসী হয়ে নারী হোক বা পুরুষই হোক যদি সৎ কাজে নিজের জীবন উৎসর্গ করে তবে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও কোন প্রকার বিঘ্ন কোন দিক থেকে আসবে না।
      ১২৫) আর তার অপেক্ষা ধর্মে কে উত্তম, যে পরোপকারী হয়ে আল্লাহ্‌র নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং একনিষ্ঠভাবে ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করে? এবং আল্লাহ্‌ ইব্রাহীমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।
   মর্মার্থঃ—আল্লাহ্‌ ইব্রাহীমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন তেমনি আগে ইব্রাহীম নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে আল্লাহ্‌কে বন্ধুরূপে গ্রহণ করার সব প্রস্তুতি নিয়ে তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করেছেন, এই সত্য আগে জানতে হবে, তারপর একনিষ্ঠ হয়ে ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করতে হবে নিজের আল্লাহ্‌কে বন্ধুরূপে পাবার জন্য।
   জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।  

No comments:

Post a Comment