বিশ্বমানব
শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা –৫ মায়িদাহ—৩১ থেকে ৩৫ আয়াত।]
৩১) অতঃপর
আল্লাহ এক কাক পাঠালেন, যে তার ভাই এর শবদেহ কিভাবে গোপন করা যায় তা দেখাবার
উদ্দেশ্যে মাটি খনন করতে লাগল। সে বলল, হায়! আমি কি এ কাকের মতও হতে পারলাম না,
যাতে আমার ভাই এর শবদেহ গোপন করতে পারি? অতঃপর সে অনুতপ্ত হল।
মর্মার্থঃ—মানুষ
বুদ্ধিমান জীব কিন্তু যদি অন্যায় পথে বুদ্ধি প্রয়োগ করে তবে সে বুদ্ধিহীন হয়ে
দিশেহারা হয়ে যায়। তখন দেখা যায় সে একটা কাকের থেকেও বুদ্ধিতে অধম হয়ে যায়। অন্যায়
অপরাধ করার পর অনুতপ্ত হতে হয় নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য, কিন্তু তখন আর পথ থাকে না
পূর্বকৃত পাপ থেকে নিষ্কৃতি পাবার।
৩২) এ কারণেই বনী ইস্রাঈলের প্রতি এ বিধান দিলাম
যে, নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করার কারণ ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে
যেন পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করল, আর কেউ কারও প্রাণরক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর
সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। তাদের নিকট তো আমার রসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণ এনেছিল,
কিন্তু এরপরও অনেকে পৃথিবীতে সীমালংঘনকারীই রয়ে গেল।
মর্মার্থঃ—কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করলো,
আর কেউ কারও প্রাণরক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো।
আল্লাহ্র নিকট থেকে এই আয়াত অবতীর্ণ হবার পর কি এই পৃথিবীতে মানুষে মানুষে হত্যা-
হানাহানি ও কোন ধ্বংসাত্মক কাজ মানব সমাজে চলতে পারে? পৃথিবীর জ্ঞানী- অজ্ঞানী-
বিশ্বাসী- অবিশ্বাসী সকল মানুষকে সর্বাগ্রে এই আয়াতের শিক্ষায় দেওয়া উচিত বিভিন্ন
মাধ্যমকে কেন্দ্র করে।
৩৩) যারা
আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করে তাদের
শাস্তি এই যে, তাদের হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে অথবা বিপরীত দিক হতে
হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ হতে নির্বাসিত করা হবে। পৃথিবীতে এটাই
তাদের লাঞ্ছনা ও পরকালে তাদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে।
মর্মার্থঃ—পূর্ববর্তী
আয়াতকে অমান্য করে যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে
ধ্বংসাত্মক কাজ করে ও নরহত্যা করে তাদের এমন শাস্তি দেওয়া উচিত যে তাদের শাস্তি
দেখে দ্বিতীয় আর কেউ সেই কাজে পা বাড়াতে যাবে না।
৩৪) তবে, তোমাদের আয়ত্তাধীনে আসার পূর্বে যারা
তওবা (অনুশোচনা) করবে, তাদের জন্য নয়। সুতরাং জেনে রাখ যে, আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম
দয়ালু।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তাই তিনি ধ্বংসাত্মক কাজ ও
নরহত্যা করার পরেও যদি সে নিজের ভুল ধরতে পারে ও অনুশোচনা করে তবে তিনি তাদেরও
শাস্তি মুকুব করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। শান্তির পরিমণ্ডল গড়ে তোলার জন্য ও মানুষের
উত্তম চরিত্র গঠন করার জন্য এর থেকে বেশী আর কিসের প্রয়োজন?
৩৫) হে
বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ্কে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর ও তাঁর পথে
সংগ্রাম কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
মর্মার্থঃ—নিজের
চরিত্র নিজেকেই গঠন করতে হবে উদার মন নিয়ে আল্লাহ্র আশ্রয়ে থেকে অর্থাৎ তাঁর
অবতীর্ণ আয়াতের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে। আল্লাহ্ নিজের সাথেই আছেন এই সত্যে পূর্ণ
আস্থা রেখে কেবল তাঁর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য সৎ কর্ম করাটায় ধর্ম ও তাঁর পথে
সংগ্রাম। সৎ পথে থেকে উদার মন নিয়ে বাইরের জগতের সব ধর্ম ত্যাগ করে কেবল
অন্তর্জগতের সত্যকে নিয়ে গবেষণা করলেই আল্লাহ্কে নিজের সাথে দেখতে পাবে এবং তোমরা
সফলকাম হবে এতে কোন দ্বিধা নেই।
জয়
বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment