Sunday, 26 August 2018

কুরআন সুরা--৫ মায়িদাহ-- ১১ থেকে ১৫ আয়াত


     বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৫ মায়িদাহ—১১থেকে ১৫ আয়াত।]
     ১১)  হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন এক সম্প্রদায় তোমাদের বিরুদ্ধে হস্ত উত্তোলন করতে চেয়েছিল, তখন আল্লাহ্‌ তাদের হাত সংযত করেছিলেন, এবং আল্লাহ্‌কে ভয় কর, আর আল্লাহ্‌রই প্রতি বিশ্বাসীগণের নির্ভর করা উচিত।
       মর্মার্থঃ—বিশ্বাসীদের সদায় সুখে- দুঃখে, বিপদে- আপদে আল্লাহ্‌র প্রতিই নির্ভর করে জীবন পথে চলা উচিত। তাঁকে ভয় করে অন্তর বাহিরকে যত পবিত্র করে রাখতে সক্ষম হবে ততই আল্লাহ্‌র করুণা বর্ষিত হতে থাকবে। মানুষ কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে আবদ্ধ হলেই সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, এই সংকীর্ণ মানুষদের হাত থেকে উদার মানুষদের রক্ষা করার দায়িত্ব আল্লাহ্‌ নিজে গ্রহণ করেন।
     ১২) আর নিশ্চয় আল্লাহ্‌ বনী ইস্রাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন এবং তাদের মধ্য হতে দ্বাদশ নেতা নিযুক্ত করেছিলেন আর বলেছিলেন, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, তোমরা যদি নামায আদায় কর, যাকাত দাও, আর আমার রসূলগণকে বিশ্বাস কর ও তাদের সম্মান কর এবং আল্লাহ্‌কে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তবে তোমাদের দোষ অবশ্যই মোচন করব এবং নিশ্চয় তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশাধিকার দান করব, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, এরপরও যে অবিশ্বাস করবে সে সরল পথ হারাবে।
        মর্মার্থঃ--- মানব জাতি নিজেকে পবিত্র রেখে নিজের দেওয়া অঙ্গীকার তখনই রক্ষা করতে সক্ষম হবে, যখন তারা আল্লাহ্‌র দেওয়া বারজন নেতাকে সাথে নিয়ে সদায় সৎ কর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। আল্লাহ্‌র দেওয়া দ্বাদশ নেতা হচ্ছে পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধি, এদের সাহায্য নিয়ে সংগ্রাম করলেই মানুষ যথাযথভাবে নামায আদায় করতে পারবে, যাকাত দিতে পারবে আর সকল রসূলগণকে অন্তর থেকে বিশ্বাস করে তাদের সম্মান করতেও সক্ষম হবে। আল্লাহ্‌ এদের সমস্ত দোষ ও পাপ খণ্ডন করে দ্বাদশ নেতা সহ নিয়ে যান জান্নাতে, সেই জান্নাতে তারা প্রবেশ করার অধিকার পেয়ে মানব জীবনকে ধন্য দেখতে পায় বিশ্বাসীদের মহলে। এখানে জান্নাতের পাদদেশে প্রবাহিত হয় আনন্দধারার নদী। এই সত্যকে যারা অবিশ্বাস করবে তারাই সরল পথ হারাবে।
       ১৩) তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য তাদের অভিসম্পাত করেছি ও তাদের হৃদয় কঠিন করেছি, তারা শব্দগুলোর আসল অর্থ বিকৃত করে এবং তারা যা উপদিষ্ট হয়েছিল তার একাংশ ভুলে গেছে। তুমি সর্বদা ওদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখতে পাবে। সুতরাং ওদের ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ পরোপকারীদের ভালবাসেন।
      মর্মার্থঃ—আল্লাহ্‌র অবতীর্ণ আয়াতের শব্দগুলোর আসল অর্থ বিকৃত করে যারা নিজেদের কামনা- বাসনা চরিতার্থ করার পথ করে নেয় তারা অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য অভিশপ্ত হয়ে পড়ে। তারা সত্যকে বিকৃত করে নিজেরাই নিজেদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে বিশ্বাসঘাতক হয়ে পড়ে এবং আল্লাহ্‌র উপদিষ্ট আয়াত ভুলে যায়। এদেরকে তুমি উপেক্ষা করবে ও ক্ষমা করবে। আল্লাহ্‌ পরোপকারীদের খুব ভালবাসেন।
       ১৪) যারা বলে, আমরা খ্রিষ্টান, তাদেরও অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম, কিন্তু তারা যা উপদিষ্ট হয়েছিল তার একাংশ ভুলে গেছে। সুতরাং আমি তাদের মধ্যে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী শত্রুতা ও বিদ্বেষ জাগরুক রেখেছি, তারা যা করত আল্লাহ্‌ তাদের তা জানিয়ে দেবেন।
       মর্মার্থঃ—যারা বলে, আমরা খ্রিষ্টান, তারা সকলেই সংকীর্ণমনা ও আল্লাহ্‌কে দেওয়া অঙ্গীকার ভঙ্গকারী। তারা নিজেদের সঙ্কীর্ণ অহংকারের জন্য সত্য ভুলে গেছে। এই সত্যত্যাগী সংকীর্ণমনাদের সাথে আল্লাহ্‌র শত্রুতা ও বিদ্বেষ কিয়ামত পর্যন্ত জাগ্রত থাকবে। পরবর্তীতে তারা জানতে পারবে নিজেদের সংকীর্ণতার কথা। যারা ধর্মের নামে নিজেদেরকে সংকীর্ণ করবে তাদের সকলের সাথেই আল্লাহ্‌র শত্রুতা কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। এরা নিজের জীবন সত্যকে কিছুতেই সংকীর্ণ মন নিয়ে উদ্ধার করতে পারবে না।
        ১৫) হে আসমানী গ্রন্থধারীগণ! আমার রসূল তোমাদের নিকট এসেছে, তোমরা কিতাবের যা গোপন করতে সে তার অনেক অংশ তোমাদের নিকট প্রকাশ করে এবং অনেক কিছু উপেক্ষা করে থাকে। আল্লাহ্‌র নিকট হতে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট অবশ্যই এসেছে।
      মর্মার্থঃ—আল্লাহ্‌র নিকট থেকে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট ধর্মগ্রন্থ অবশ্যই এসেছে মানবজাতির জন্য, তাঁর রসূলের মাধ্যমে। ধর্মগ্রন্থধারীগণ মানব ধর্মের অনেক কিছুই গোপন করতো, ফলস্বরূপ মানুষ জীবন সত্যকে জেনে নিজের চরিত্র গঠন করতে সক্ষম হতো না নিজ প্রতিপালকের জন্য। জীবন সত্যকে গোপন করে বা উপেক্ষা করে কেউ সত্যকে জানতে সক্ষম হয় না। সত্যই হচ্ছে জীবন জ্যোতি অন্ধকার থেকে মুক্ত করে আলোর জগতে নিয়ে যাবার জন্য।
     জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।  

No comments:

Post a Comment