বিশ্বমানব
শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৫ মায়িদাহ—১৬ থেকে ২০ আয়াত।]
১৬) যারা
আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় এর দ্বারা ( কুরআনের দ্বারা) তিনি তাদেরকে
শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে
নিয়ে যান এবং ওদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন।
মর্মার্থঃ—যারা আল্লাহ্র কৃপা লাভ করে শান্তির পথ ধরে জীবন অতিবাহিত করতে
চায় তাদের জন্য কুরআন আলোর বর্তিকা। আল্লাহ্ নিজেই এই পথের পথিকদের অন্ধকার থেকে
বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান এবং তাদেরকে সহজ- সরল জীবন ও পথ দান করেন। অবশ্যই
আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে বিশ্বজগতের প্রতিপালকের অধীনে নিজেকে উপযুক্ত
বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মীরূপে গড়ে তুলতেই হবে, নচেৎ কেউ তাঁর বিশালত্ব অনুভব করতে
পারবে না।
১৭)
নিশ্চয় তারা অবিশ্বাস করে যারা বলে, মারইয়াম পুত্র মসীহই আল্লাহ্। বল, আল্লাহ্
মারিয়াম পুত্র মসীহ, তার মাতা এবং পৃথিবীর সকলকে যদি ধ্বংস করতে ইচ্ছা করেন তবে
তাঁকে বাধা দেবার শক্তি কার আছে? আকাশ ও ভূমণ্ডলের এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তার
সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্রই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে
সর্বশক্তিমান।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্ আকাশ ও ভূমণ্ডলের মহাবিজ্ঞানী ও সর্ববিষয়ে
সর্বশক্তিমান, তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করতেও পারেন, আবার ধ্বংসও করতে পারেন। যারা
আল্লাহ্কে অবিশ্বাস করে মারইয়াম পুত্র মসীহকে আল্লাহ্ ভাবে, তারা জানে না,
আল্লাহ্ ইচ্ছা করলেই মসীহ, তার মাতা এবং পৃথিবীর সকলকে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস
করতে পারেন। তাঁকে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই, তাঁর শক্তির কাছে সবায় অসহায়।
১৮) ইহুদী
ও খ্রিষ্টানগণ বলে, আমরা আল্লাহ্র পুত্র ও তাঁর প্রিয়! বল, তবে কেন তিনি তোমাদের
পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দেন? বরং তোমরা তাঁরই সৃষ্ট মানুষ। যাকে ইচ্ছা তিনি
(আল্লাহ্) ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেন, এবং আকাশ পাতালের এবং এর
মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্রই, আর তাঁরই নিকট ফিরে যেতে হবে।
মর্মার্থঃ—ইহুদী ও খ্রিষ্টানগণ বলে, আমরা আল্লাহ্র পুত্র ও তাঁর প্রিয়,
যদি তারা সত্যই তা হতো তবে নিশ্চয় সংকীর্ণ মনোভাবের হয়ে কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে
আবদ্ধ থাকতো না ও শত্রু সৃষ্টি করে শাস্তিভোগ করতো না। আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব
সর্বব্যাপী, তাই তাঁর বান্দা, ভক্ত, অনুরাগীদের কোন সংকীর্ণতার মধ্যে তিনি রাখেন
না। তিনি উদার ও জ্ঞানী করে তাদেরকে নিজের কাছে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
১৯) হে
আসমানী গ্রন্থধারীগণ! রসূলগণের আগমন বন্ধ থাকার পর তোমাদের নিকট আমার রসূল এসেছে,
সে তোমাদের নিকট স্পষ্ট ব্যাখ্যা করছে যাতে তোমরা বলতে না পার, কোন সুসংবাদবাহী ও
সতর্ককারী আমাদের নিকট আসেনি, এখন তো তোমাদের নিকট একজন সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী
এসেছে। বস্তুত আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্
সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান, তাই তিনি কখন কোথায়, কিভাবে সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী প্রেরণ করতে হবে তা
তিনি জানেন। রসূলগণের আগমন বন্ধ থাকার পর পুনঃ তিনি রসূল প্রেরণ করেন সহজ সরল ভাষা
ও ভঙ্গীতে, যাতে স্পষ্টভাবেই সকলে তার মর্মার্থ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়।
২০) (
স্মরণ কর) মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র
অনুগ্রহ স্মরণ কর যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতে নবী করেছেন ও তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি
করেছেন এবং বিশ্বজগতে কাউকেও যা দেননি তা তোমাদেরকে দিয়েছেন।
মর্মার্থঃ—মূসা
মানব সম্প্রদায়কে বলেছিল আল্লাহ্র অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, তিনি কিভাবে তোমাদের
সম্প্রদায়ের জন্য নবী প্রেরণ করছেন তোমাদের মধ্য থেকেই, যাতে তোমরা সেই নবীকে
কাছের মানুষ, নিজের মানুষ ভাবতে পারো। তোমাদের মধ্যে থেকেই আবার রাজা করছেন, সেই
রাজাকেও যাতে তোমরা নিজের লোক ভাবতে পারো। বিশ্বজগতের অন্য কোন সম্প্রদায়ের নবী ও
রাজা নেই সত্যপথ দেখাবার জন্য। আল্লাহ্ও তেমনি তোমাদের অভিভাবক ও আপনজন।
জয়
বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment