বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র
কুরআনের আলো। [ সুরা—৪ নিসা—১৬১ থেকে ১৬৮ আয়াত।]
১৬১) এবং তাদের সুদ গ্রহণের জন্য, যদিও তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল
এবং অন্যায়ভাবে লোকের ধন সম্পদ গ্রাস করার জন্য। তাদের মধ্যে যারা অবিশ্বাসী তাদের
জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্র কথা কোন এক সম্প্রদায়কে
লক্ষ্য করে বলা হলেও তা বিশ্বের সকল মানব সম্প্রদায়ের জন্যই তা প্রযোজ্য। কেউ যদি
সুদের কারবার করে তাহলে যেমন তা তার নেশায় পরিণত হয়, তেমনি কেউ যদি একবার অন্যায়
কাজ করে লাভবান হয় তবে সেই কাজ তার নেশায় পরিণত হয়। মদ খাওয়া যেমন সকলের জন্যই
মহাপাপ, তেমনি মানুষের উপর অত্যাচার, অন্যায় করা মহাপাপ। এই সব লোক নিজেদের জীবনে যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তির ব্যবস্থা নিজেরাই করে আল্লাহ্র বিধানকে অমান্য করে।
১৬২) কিন্তু তাদের মধ্যে যারা
স্থিত প্রাজ্ঞ তারা ও বিশ্বাসীগণ তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তোমার পূর্বে
যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতেও বিশ্বাস করে এবং যারা যথাযথভাবে নামায পড়ে, যাকাত দেয়
এবং আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাস করে তাদেরই মহাপুরষ্কার দেব।
মর্মার্থঃ--- সারা বিশ্বে মানুষের নামায পড়ার, যাকাত দেওয়ার, আল্লাহ্ ও
পরকালে বিশ্বাস করার পদ্ধতি বা পথ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। আল্লাহ্ এসব পথ ও
পদ্ধতিকে গুরুত্ব দেন না। তিনি দেখেন মানুষের অন্তরের বিশ্বাস- প্রেম- শ্রদ্ধার
দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জ্ঞান ও কর্মকে। তাই যেকোন সম্প্রদায়ের জ্ঞানী- প্রজ্ঞাবান -
ধীর- স্থির ব্যক্তিই তাঁর কাছে প্রিয়। চিরকাল এরাই আল্লাহ্র নিকট থেকে
মহাপুরষ্কার পেয়ে আসছে ও আসবে।
১৬৩) তোমার নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যেমন নূহ ও তার পরবর্তীগণের নিকট প্রেরণ
করেছিলাম, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক ইয়া’কুব ও তার বংশধরগণ, ঈশা, আইউব, ইউনুস,
হারুন এবং সুলায়মানের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে জবুর দিয়েছিলাম।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্র জ্ঞানের সাগর থেকে রসূলের স্রোত চিরকাল এই পৃথিবীর
বুকে প্রবাহিত হয়ে আসছে। কখন কোন জায়গায় রসূলের আবির্ভাব ঘটবে তা আল্লাহ্ জানেন
এবং সেই জায়গার পরিবেশ- পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি নিজের ফিরিশতা বা দেবতা, সেই
রসূলের নিকট পাঠান, সেই এলাকার মানুষকে সতর্ক করে পবিত্র করে তুলে নেওয়ার জন্য।
এখানে আল্লাহ্ কয়েকজন রসূলের নাম করেছেন কেবল উৎসাহ দিয়ে সত্যের অনুসন্ধান করার
জন্য। ওহী হচ্ছেন আল্লাহ্র এক বার্তাবাহক অদৃশ্য শক্তি, এই শক্তি যে কোন মানব
দেহের অন্তরে প্রবেশ করে আল্লাহ্র অন্তরের কথা মানুষের অন্তরের মাধ্যমে প্রকাশ
করতে থাকে অদ্ভুত কৌশলে।
১৬৪) অনেক রসূল ( প্রেরণ করেছি) যাদের কথা পূর্বে তোমাকে বলেছি এবং অনেক
রসূল যাদের কথা তোমাকে বলিনি। এবং মূসার সাথে আল্লাহ্ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ
করেছিলেন।
মর্মার্থঃ—মূসার ন্যায় পূর্ণ রসূল যারা আসেন তাদের সাথে আল্লাহ্ সরাসরি
কথা বলেন। এই পৃথিবীতে যতদিন জীবের বাস থাকবে ততদিন তিনি তাঁর সৃষ্টিকে সুরক্ষিত
রাখার জন্যে রসূল পাঠানোর স্রোতকে জীবন্ত করে রাখবেন।
১৬৫) সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী
প্রেরণ করেছি, যাতে রসূল (আসার) পর আল্লাহ্র বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না
থাকে। এবং আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়, তাই তিনি এই পৃথিবীকে সুরক্ষিত
রাখার জন্য কত সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারীকে প্রতিনিয়ত প্রেরণ করেন তা কেবল জ্ঞানীরাই
জানে। নিজের স্রষ্টার বিরুদ্ধে কারা অভিযোগ করে? নিশ্চয় অজ্ঞ, সংশয়ী, পাষণ্ডরা নিজ
স্রষ্টাকে না জানার জন্য এই অভিযোগ করে থাকে। এদেরকেই অন্ধকার থেকে আলোর অভিমুখে
নিয়ে যাবার জন্যই আল্লাহ্ সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারীর স্রোতের প্রবাহ সদায়
প্রাণবন্ত করে রাখেন।
১৬৬) কিন্তু আল্লাহ্ যা তোমার
প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তা তিনি জেনেশুনে করেছেন। আল্লাহ্ এর সাক্ষী এবং ফিরিশতাগণও
সাক্ষী, এবং সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্র কাছে যে যা আকাঙ্ক্ষা করে সে তাই পেয়ে যায় বিভিন্ন পথ
দিয়ে। আল্লাহ্ তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তা তিনি তোমার অন্তর পরীক্ষা করে
ফিরিশতাগণকে সাক্ষী রেখেই করেছেন। যদিও আল্লাহ্ই সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট তবুও তিনি
সমস্ত কাজই ফিরিশতা বা দেবতাদের মাধ্যমেই করেন।
১৬৭) যারা অবিশ্বাস করে ও আল্লাহ্র পথে বাধা দেয় তারা ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট
হয়েছে।
মর্মার্থঃ—যারা কল্যাণকারী কাজে বিশ্বাস করে না তারাই অবিশ্বাসী এবং তারাই
আল্লাহ্র পথে বাধা দেয়। আল্লাহ্ প্রত্যেক মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল, তাই তিনি
প্রত্যেক মানুষকে সৎকর্মশীলরূপে গড়ে তোলার পরিবেশ গড়ে রেখেছেন এই কর্মভূমি-
জ্ঞানপীঠ ও তীর্থস্থানে। যারা মানুষের এই পবিত্র মিলনভূমিকে নিজের স্বার্থে
ব্যবহার করে, তারাই আল্লাহ্র পথে বাধাদানকারী। এরাই আল্লাহ্র চোখে ভীষণভাবে
পথভ্রষ্ট হয়েছে।
১৬৮) যারা অবিশ্বাস করেছে ও অত্যাচার করেছে আল্লাহ্ তাদের কখনও ক্ষমা
করবেন না, এবং তাদের কোন পথও দেখাবেন না।
মর্মার্থঃ—যারা এই পৃথিবীকে নিজেদের কর্মভূমি, জ্ঞানপীঠ ও তীর্থভূমি রূপে
বিশ্বাস না করে নিজেদের বিশালত্বকে ক্ষুদ্র করতে থাকে তারাই অবিশ্বাসী ও অত্যাচারী
সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। যারা সংকীর্ণ মনোভাবের তাদেরকে আল্লাহ্ যেমন ক্ষমা করেন না
তেমনি তাদেরকে সৎ পথ বা আলোর পথও দেখান না।
জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment