[ গীতার রস অমৃতের রস। এই রস যে একবার ভক্তি
সহকারে পান করে, সেই অমরত্ব লাভ করে অমরলোকে যাত্রা করে ব্রহ্মভূত হয়ে। “বাসুদেব
সর্ব্বং” এই জ্ঞানধনে যিনি ধনী, তিনিই একমাত্র ব্রহ্মভূত। সর্ব্বদা তিনি
অন্তরাত্মায় প্রাপ্ত চিন্ময় আনন্দে নিমজ্জিত। কোন শোক নাই, সর্ব্বদা সূর্য্যের
ন্যায় নিজ আকাশে বিরাজ করে সকলকে আলোদান করে চলেছেন। কোন আশা- আকাঙ্ক্ষার বালাই
নেই, সর্ব্বদা প্রশান্ত চিত্ত ও সর্ব্বত্র ভেদবুদ্ধি- দৃষ্টি- রহিত। সর্ব্বভূতে
সমান দৃষ্টি – শ্রদ্ধা ও প্রেম। এটাই হলো পবিত্র গীতার জ্ঞানের স্তম্ভ। আজকে
মোক্ষযোগের ১১ থেকে ২২ মন্ত্র আমরা সকলে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে উচ্চারিত করে আকাশ- বাতাস
মুখরিত করে তুলবো। প্রকৃতির সবায় যাতে পবিত্র গীতার জ্ঞানে ধনী হয়ে সদায় আনন্দজগতে
বিরাজ করেন, সেই দায়িত্ব আমরা সকলেই গ্রহণ করবো এক একটি চলমান গীতা বিশ্ববিদ্যালয়
হয়ে। পৃথিবী চলছে
তাঁর সাথে আমরাও চলছি কিন্তু কাকে আশ্রয়
করে চলছি তা আমরা জানি না ও উপলব্ধি করতে পারি না। হরি ওঁ তৎ সৎ।]
১১) ন হি দেহভূতা শক্যং ত্যক্ত্বং কর্ম্মাণ্যশেষতঃ।
যস্তু কর্ম্মফলত্যাগী স ত্যাগীত্যভিধীয়তে।।
অনুবাদঃ-- দেহধারী ব্যক্তির পক্ষে সম্পূর্ণরূপে
কর্ম্মত্যাগ করা সম্ভবপর নয়। অতএব যিনি কর্ম্মের ফল ত্যাগ করেন, তিনিই প্রকৃত
ত্যাগী বলে কথিত হন।
১২) অনিষ্টমিষ্টং মিশ্রঞ্চ ত্রিবিধং কর্ম্মণঃ ফলম।
ভবত্যত্যাগিনাং প্রেত্য ন তু সন্ন্যাসিনাং ক্কচিৎ।।
অনুবাদঃ-- কর্ম্মের ফল তিন প্রকার—কল্যাণকর,
অকল্যাণকর এবং কল্যাণ- অকল্যাণ মিশ্রিত। যারা ফলকামনা ত্যাগ করেন না, সেই অত্যাগী
পুরুষগণের মৃত্যুর পরে কর্ম্মানুসারে এই ফল লাভ হয়। কিন্তু সন্ন্যাসীদের এই ফল
বর্ত্তায় না।
১৩)পক্ষেমানি মহাবাহো কারণানি নিবোধ মে।
সাংখো কৃতান্তে প্রোক্তানি সিদ্ধয়ে সর্ব্বকর্ম্মণাম।।
অনুবাদঃ-- হে মহাবাহু, সকল কর্ম্ম সিদ্ধির জন্য সাংখ্য
বেদান্ত শাস্ত্রে পাঁচটি কারণ বর্ণিত আছে। ইহা আমার নিকট শ্রবণ কর।
১৪) অধিষ্ঠানং তথা কর্ত্তা করণঞ্চ পৃথগবিধম।
বিবিধাশ্চ পৃথক চেষ্টা দৈবঞ্চৈবাত্র পঞ্চমম।।
অনুবাদঃ-- এই পাঁচটি কারণের চারটি হল, এই
দেহ, অহংকার, নানা প্রকার ইন্দ্রিয় ও প্রাণ- অপাণ ইত্যাদি ব্যাপার এবং পঞ্চম কারণ
হল দৈব।
১৫)
শরীরবাঙমনোভির্ষৎ কর্ম্ম প্রারভতে নরঃ। ন্যায্যং বা বিপরীতং বা পঞ্চৈতে তস্য
হেতবঃ।।
অনুবাদঃ-- মানুষ শরীর, মন ও বাক্য দ্বারা যে নায্য বা
অনায্য কর্ম্ম করে, উপরিউক্ত পাঁচটিই তার কারণ।
১৬) তত্রৈবং সতি
কর্ত্তারমাত্মানং কেবলং তু যঃ। পশ্যত্যকৃতবুদ্ধিত্বান্ন স পশ্যতি দুর্ম্মতিঃ।।
অনুবাদঃ-- কর্ম্মসিদ্ধির বাস্তব অবস্থা এরূপ হলেও যে
দুর্ম্মতি মনে করে যে, আমি নিজেই কর্ত্তা, শাস্ত্রাদি দ্বারা বুদ্ধি পরিমার্জ্জিত
না হওয়ায় সে প্রকৃত সত্য বুঝতে পারে না।
১৭) যস্য নাহংকৃতো
ভাবো বুদ্ধির্যস্য ন লিপ্যতে। হত্বাপি স ইমাল্লোকান ন হন্তি ন নিবধ্যতে।।
অনুবাদঃ-- যার মনে ‘আমি কর্ত্তা’ বলে অহংকার নাই, বুদ্ধি ও
কর্ম্মে যিনি নির্লিপ্ত, এই জগতের সবাইকে বধ করলেও তিনি কাউকেই বধ করেন না। অতএব
তাঁর কর্ম্মের বন্ধন হয় না।
১৮)জ্ঞানং জ্ঞেয়ং
পরিজ্ঞাতা ত্রিবিধা কর্ম্মচোদনা। করণং কর্ম্ম কর্ত্তেতি ত্রিবিধঃ কর্ম্মসংগ্রহঃ।।
অনুবাদঃ-- জ্ঞান, জ্ঞেয় ও পরিজ্ঞাতা এই তিনটি সকল কর্ম্মের
প্রবর্ত্তক। আবার করণ, কর্ম্ম ও কর্ত্তা, এই তিনটি হইল কর্ম্মের আশ্রয়।
১৯) জ্ঞানং কর্ম্ম
চ কর্ত্তা চ ত্রিধৈব গুণভেদতঃ। প্রোচ্যতে গুণসংখ্যানে যথাবচ্ছুণু তান্যপি।।
অনুবাদঃ-- সাংখ্যদর্শনে জ্ঞান, কর্ম্ম ও কর্ত্তা, ইহাদের
প্রত্যেকটি গুণভেদে তিন প্রকার কথিত আছে। তা যথাক্রমে শ্রবণ কর।
২০) সর্ব্বভূতেষু
যেনৈকং ভাবমব্যয়মীক্ষতে। অভিভক্তং বিভক্তেষু তজজ্ঞানং বিদ্ধি সাত্ত্বিকম।।
অনুবাদঃ-- সমস্ত প্রাণী পরস্পর ভিন্ন, কিন্তু আত্মা এক এবং
অবিভক্ত—যে জ্ঞান দ্বারা এই পরমাত্মাবিষয়ক তত্ত্ব উপলব্ধ হয়, তাকে সাত্ত্বিক জ্ঞান
বলে।
২১) পৃথকত্বেন তু
যজজ্ঞানং নানাভাবান পৃথগ্বিধান। বেত্তি সর্ব্বেষু ভূতেষু তজজ্ঞানং বিদ্ধি রাজসম।।
অনুবাদঃ-- যে জ্ঞান দ্বারা বিভিন্ন প্রাণীতে পৃথক পৃথগ
ভাবে এবং অনুভূতি জন্মে, তাকে রাজস জ্ঞান বলে।
২২) যত্ত্ব
কৃৎস্নবদেকস্মিন কার্য্যে সক্তমহৈতুকম। অতত্ত্বার্থবদল্পঞ্চ তৎ তামসমুদাহৃতম।।
অনুবাদঃ-- যে জ্ঞান দ্বারা কোন একটি স্থূল পদার্থে, ‘ইহাই
সমস্ত কিছু’ এই নিখিল তত্ত্ব আরোপ করা হয়, এই অযৌক্তিক অযথার্থ তুচ্ছ জ্ঞানকে তামস
জ্ঞান বলে।
[ জয় বেদভগবান
শ্রীকৃষ্ণের জয়। জয় পবিত্র গীতা মাতার জয়।]
No comments:
Post a Comment