Thursday, 23 August 2018

কুরআন সুরা--৪ নিসা-- ১৫৩ থেকে ১৬০ আয়াত

      বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৪ নিসা—১৫৩ থেকে ১৬০ আয়াত।]
  ১৫৩) গ্রন্থধারীগণ তোমাকে তাদের জন্য আকাশ থেকে কিতাব (ধর্মগ্রন্থ) অবতীর্ণ করতে বলে, কিন্তু তারা মূসার কাছে এর থেকেও বড় দাবি করেছিল। তারা বলেছিল, প্রকাশ্যে আমাদেরকে আল্লাহ্‌ দেখাও। তাদের সীমালংঘনের জন্য তারা বজ্রাহত হয়েছিল, অতঃপর স্পষ্ট প্রমাণ তাদের নিকট প্রকাশ হওয়ার পরও তারা বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল, এটাও ক্ষমা করেছিলাম, এবং মূসাকে স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করেছিলাম।
        মর্মার্থঃ—যারা ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে পণ্ডিত বা ধার্মিক হয়, তাদের অন্তর সেই ধর্ম পুস্তকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, বিশাল মহাকাশে প্রতিনিয়ত যে সমস্ত ঘটনা ঘটে চলেছে তা প্রত্যক্ষ করার মতো তাদের চক্ষুর উদয় হয় না। আবার যাদের হৃদয়াকাশ আকাশের সাথে যুক্ত,  তাদের কাছে কিতাবের সত্যতাকে বিশ্বাসের জন্য কোন প্রমাণ দাখিল করতে হয় না। যারা গ্রন্থধারী হয়েও বাছুরকে অর্থাৎ পার্থিব জগতের সম্পদকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে তারা কিভাবে অপার্থিব জগতের সম্পদকে দেখতে পাবে? আল্লাহ্‌র শক্তিবলে এই জগত সংসার চলছে এই সত্যের স্পষ্ট প্রমাণ মূসা সহ অনেক নবী প্রদান করেছেন কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তারা যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থাতেই থেকে গেছে, নিজেদের অহংকারের জন্য। অন্তরে সত্যজ্ঞানের অহংকার থাকলে কেউ সত্যকে দেখতে সক্ষম হয় না। সত্যজ্ঞানীদেরও যদি অন্তরে অহংকার থাকে তবে সেই অহংকার-ই একদিন তাকে বজ্রাঘাত করবে।
          ১৫৪) আর তাদের অঙ্গীকার নেবার সময় তুর পর্বতকে তাদের উপর উচ্চ করে ধরেছিলাম এবং তাদের বলেছিলাম, নতশিরে (শহরের) দ্বারে প্রবেশ কর। এবং তাদের বলেছিলাম, শনিবারে ( বিশ্রামের দিন মাছ ধরে) সীমালংঘন করো না এবং তাদের নিকট থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম।
           মর্মার্থঃ—আল্লাহ্‌র কাছে অহংকার দেখাতে গিয়ে সীমালংঘন করলেই মানুষের সমূহ বিপদ প্রতি পদে পদে। আল্লাহ্‌র দিকে অহংকার করে মানুষ একটা পাথর ছুঁড়লে তিনি তুর পর্বতকে ছুঁড়ে দিতে সক্ষম। অহংকারী হয়ে মানুষ যত ইট-পাথরের সভ্যতা গড়বে ততই তারা নিজের নম্রস্বভাব ধ্বংস করতে থাকবে এবং মানবিক সভ্যতার ধ্বংস ডেকে এনে বিশ্রামের দিনের কথা ভুলে যাবে।  তারপরেই আসবে তাদের গড়ে তোলা মায়া সভ্যতার বিনাশ বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের ন্যায়।
      ১৫৫) এবং তারা তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য (অভিশপ্ত হয়েছিল), আল্লাহ্‌র আয়াতকে অবিশ্বাস করার জন্য, নবীদের অন্যায় ভাবে হত্যা করার জন্য এবং ‘আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত’ তাদের এই উক্তির জন্য, এবং তাদের অবিশ্বাসের জন্য আল্লাহ্‌ই তাদের ( হৃদয়ে) মোহর মেরে দিয়েছেন, ফলে তাদের অল্পই বিশ্বাস করে।
       মর্মার্থঃ—অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কেউ নিজের সৎ চরিত্র গঠন করতে পারে না। যারা অঙ্গীকার ভঙ্গকারী ও অবিশ্বাসী তাদের অন্তর সংকীর্ণ। এই সংকীর্ণ হৃদয়ে কিভাবে আনন্দধারার নদী প্রবেশ করবে এবং জীবনকে আনন্দধারার স্রোতের সাথে যুক্ত করে আল্লাহ্‌র রাজত্বের সাথে যুক্ত করবে ?
        ১৫৬) এবং তারা তাদের অবিশ্বাসের জন্য এবং মারইয়ামের বিরুদ্ধে জঘন্য অপবাদের জন্য (অভিশপ্ত হয়েছিল)।
             মর্মার্থঃ—মানুষের অন্তর যত সংকীর্ণ হবে ততই অবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। আর অবিশ্বাসীরা কখনো সত্যকে মেনে নিতে পারে না, তারা সত্যের বিরুদ্ধে জঘন্য অপবাদ ও কুৎসা রটাতে দ্বিধাবোধ করে না। মারইয়ামের ন্যায় কত মহীয়সী নারীদের এই পৃথিবীর বুকে অবিশ্বাসীদের খাদ্য হতে হয় তার হিসেব কে রাখে?
         ১৫৭) আর ‘আমরা আল্লাহ্‌র রসূল মারইয়াম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য। তারা তাকে হত্যা করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি, কিন্তু তাদের এরূপ মনে হয়েছিল। যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, তারা নিশ্চয় এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল এবং এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ছাড়া তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত যে তারা তাকে হত্যা করেনি।
        মর্মার্থঃ—কে আত্মাকে হত্যা করবে? যারা বলে – আমরা আল্লাহ্‌র আত্মা বা রসূলকে হত্যা করেছি, তারা ভুল বলে ও ভুল দেখে।
          ১৫৮) বরং আল্লাহ্‌ তাকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছিল, এবং আল্লাহ্‌ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
           মর্মার্থঃ—আল্লাহ্‌ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়, তিনি যাকে মনে করেন পবিত্র করে গ্রাস করেন বা তুলে নেন।  তাঁর নিজের ঘরে তুলে নেওয়ার পদ্ধতি কে বুঝতে পারবে?
      ১৫৯) আসমানী গ্রন্থধারীদের মধ্যে প্রত্যেকে তার মৃত্যুর পূর্বে তাকে (ঈসাকে) বিশ্বাস করবেই, এবং কিয়ামতের দিন সে (ঈসা) তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
          মর্মার্থঃ--- প্রত্যেক ঐশী গ্রন্থধারী মানুষ মৃত্যুর পূর্বে নিজের আত্মাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে এবং এই আত্মায় কিয়ামতের দিন বিশ্বাসীদের স্বভাবের বা ধর্মের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে।
        ১৬০) ভাল ভাল জিনিস যা ইহুদীদের জন্য বৈধ ছিল, তা তাদের জন্য অবৈধ করেছি তাদের সীমালংঘনের জন্য এবং আল্লাহ্‌র পথে অনেককে বাধা দেবার জন্য।
     মর্মার্থঃ—যারা সীমালঙ্ঘনকারী এবং আল্লাহর পথে বাধাদানকারী তাদেরকে  প্রাপ্য জিনিস থেকে বঞ্চিত হতে হয়। তাদের পূর্বপুরুষগণদের জন্য যে সমস্ত জ্ঞান বৈধ ছিল এবং তা লাভ করে তারা সহজেই আনন্দধারার সাথে যুক্ত হয়ে যেতে পারতো, এখন সীমালঙ্ঘন করার জন্য তা অবৈধ হয়ে পড়েছে।
   জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।


No comments:

Post a Comment