বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান(৩৮৮) তারিখঃ—২৯/
০৮/ ২০১৮
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ- [ বেদযজ্ঞ করে বিদুরের
ন্যায় সকলের হিতের জন্য সুপরামর্শ দিবে, সত্য বাক্য হিতপুর্ণ হলেও দুরাচারী-
কদাচারীদের কাছে তা চিরকাল অপ্রিয় হয়ে থাকে।]
বিদুর পাণ্ডবদের
প্রতি যেমন সহানুভতিসম্পন্ন ছিলেন, তেমনই তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠভ্রাতা রাজা ধৃতরাষ্ট্র
এবং তাঁর পুত্রদের প্রতিও স্নেহ ও আত্মীয়বোধসম্পন্ন ছিলেন। তাঁদের হিতের প্রতিও
তাঁর দৃষ্টি ছিল এবং তিনি সর্বদা তাঁদের সুপরামর্শ দিতেন। ‘হিতং মনোহারি চ দুর্লভং
বচঃ’—এই সিদ্ধান্ত অনুসারে তাঁর বাক্য সত্য এবং হিতপূর্ণ হলেও দুর্যোধনের কাছে অপ্রিয়
মনে হত। তাই দুর্যোধন এবং তাঁর সঙ্গীরা তাঁর ওপর সর্বদাই অসন্তুষ্ট থাকতেন। কিন্তু
বিদুর তাঁদের অসন্তুষ্টির পরোয়া না করে সর্বদা তাঁদের মঙ্গল কামনা করতেন এবং
তাঁদেরকে কুপথ থেকে ফেরাবার জন্য অনবরত চেষ্টা করে যেতেন। ধৃতরাষ্ট্রও তাঁর
দুরাত্মা পুত্রের প্রভাবে থাকায় যদিও সবসময় বিদুরের কথায় আমল দিতেন না এবং তার
জন্য কষ্টও পেতেন, তবুও বিদুরের ওপর তাঁর খুবই বিশ্বাস ছিল। তিনি তাঁকে বুদ্ধিমান,
দূরদর্শী এবং নিজের পরম হিতাকাঙ্ক্ষী বলে মানতেন এবং অনেক সময়ই তাঁর পরামর্শ বিনা
কোনো কাজ করতেন না। পাণ্ডবদের বিষয়ে ইনি বিশেষভাবে বিদুরের পরামর্শ নিতেন। তিনি
জানতেন যে, পাণ্ডবদের ব্যাপারে তাঁর পরামর্শ পক্ষপাতশূন্য হবে।
কুবুদ্ধি দুর্যোধন যখন মাতুল শকুনির পরামর্শে
পাণ্ডবদের সঙ্গে পাশা খেলার প্রস্তাব নিয়ে পিতার কাছে যান, তখন ধৃতরাষ্ট্র
নিয়মানুযায়ী বিদুরকে পরামর্শের জন্য ডেকে পাঠান। তাঁর কথা না মানলে দুর্যোধন
ধৃতরাষ্ট্রকে প্রাণত্যাগ করার ভয় দেখান; কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে ‘
বিদুরের থেকে পরামর্শ না নিয়ে আমি তোমাকে পাশা খেলার অনুমতি কখনও দিতে পারি না’।
দুর্যোধনের পাপপূর্ণ কুপ্রস্তাব শুনে বিদুর বুঝে যান যে কলিযুগ আগতপ্রায়। তিনি এই
প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করেন এবং ধৃতরাষ্ট্রকে বোঝান যে, ‘ পাশা খেললে আপনার
পুত্র ও ভ্রাতুষ্পুত্রদের মধ্যে শত্রুতা বৃদ্ধি পাবে। এতে তাদের কারোই মঙ্গল হবে
না। তাই পাশা খেলার আয়োজন না করাই ভালো। এতে দু’পক্ষেরই মঙ্গল’। ধৃতরাষ্ট্র
বিদুরের মতের প্রশংসা করে দুর্যোধনকে অনেক বোঝান, কিন্তু তিনি কোনো কথাই শোনেন না।
তিনি পাণ্ডবদের পাশাখেলায় হারিয়ে, তাঁদের অপদস্ত করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলেন।
পাণ্ডবদের অতুল বৈভব দুর্যোধন সহ্য করতে পারছিলেন না। দুর্যোধন কিছুতেই মেনে না
নেওয়ায় শেষে ধৃতরাষ্ট্র তাঁর প্রস্তাবে রাজী হন এবং বিদুরকেই পাঠান ইন্দ্রপ্রস্থ
থেকে তাঁদের আহ্বান করার জন্য। যদিও বিদুরের এই বিষয় ভালো লাগেনি, তবুও
জ্যেষ্ঠভ্রাতার আদেশ উল্লঙ্ঘন করা ঠিক নয় বলে তিনি তা পালন করেছিলেন। জয় বেদযজ্ঞের
জয়।
No comments:
Post a Comment