Saturday, 25 August 2018

কুরআন সুরা মায়িদাহ --১ থেকে ৫ আয়াত


  বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৫ মায়িদাহ—১ থেকে ৫ আয়াত।]
   ১) হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। যে সব জন্তুর কথা তোমাদেরকে বলা হচ্ছে তা ছাড়া চতুষ্পদ আন’আম তোমাদের জন্য বৈধ করা হল, তবে ইহরাম রত অবস্থায় শিকার যে বৈধ তা মনে করবে না। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ যা ইচ্ছা আদেশ করেন।
       মর্মার্থঃ--- সর্বাগ্রে মানুষকে অন্তরে জ্ঞানের বাতি জ্বালিয়ে নিজ অন্তরাত্মাকে বিশ্বাস করে আল্লাহ্‌র বিশ্বাসী বান্দা হয়ে নিজের অঙ্গীকার পূর্ণ করতে হবে, তবেই মানুষ আল্লাহ্‌র অবতীর্ণ আয়াতের সত্যতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। নিজেকে আল্লাহ্‌র বৈধ বান্দা করতে সক্ষম না হলে মানুষের জন্য তাঁর রাজত্বে সবই অবৈধ। অবৈধ বান্দাদের জন্য নিশ্চয় আল্লাহ্‌ যা ইচ্ছা আদেশ করতে পারেন, কারণ তাদের কোন দায়িত্বই আল্লাহ্‌র উপর বর্তায় না।
         ২) হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ্‌র নিদর্শনের, পবিত্র মাসের, কুরবানীর জন্য কা’বায় প্রেরিত পশুর, গলায় পরান চিহ্নবিশিষ্ট পশুর এবং নিজ প্রতিপালকের অনুগ্রহ ও সন্তোষ লাভের আশায় পবিত্র গৃহ অভিমুখীদের পবিত্রতার অবমাননা করবে না। যখন তোমরা ইহরাম মুক্ত হবে তখন শিকার করতে পার। তোমাদেরকে পবিত্র মসজিদে বাধা দেবার জন্য কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনই সীমালংঘনে প্ররোচিত না করে। সৎ কাজ ও আত্মসংযমে তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে এবং পাপ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না। এবং আল্লাহ্‌কে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ শাস্তিদানে কঠোর।
         মর্মার্থঃ---নিজ প্রতিপালকের অনুগ্রহ ও সন্তোষ লাভের আশায় নিজের পশুত্ব স্বভাবকে কুরবানী দেওয়ার জন্য কা’বায় অর্থাৎ পবিত্র স্থানে যাবে। সেখানে যারা এই কুরবানী দেওয়ার জন্য যাবে তাদেরকে বাধা দিবে না। আল্লাহ্‌কে শিকার করে তাঁকেই পবিত্র ও বৈধ খাদ্যরূপে যত গ্রহণ করতে শিখবে ততই তোমরা শিকারে পারদর্শী হয়ে উঠবে। আকাশ ও ভূমণ্ডল ব্যাপী তাঁর রাজত্বে সত্যকে না জেনে কেউ অবৈধ কাজ করতে গেলেই তাঁর শাস্তি এমনভাবে বর্ষিত হবে তা কেউ টের পাবে না।
       ৩) তোমাদের জন্য হারাম (অবৈধ) করা হয়েছে মরা পশু, রক্ত ও শূকরের মাংস, আল্লাহ্‌ ভিন্ন অন্যের নামে উৎসর্গকৃত পশু, আর গলা পেঁচিয়ে মারা জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু, পতনে মৃত জন্তু, শৃঙ্গাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু; তবে যা যবেহ দ্বারা পবিত্র করেছ তা ছাড়া , আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলি দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্নয় করা, এসব পাপকার্য। আজ অবিশ্বাসীগণ তোমাদের ধর্মের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে, সুতরাং তাদের ভয় কর না, শুধু আমাকে ভয় কর। আজ তোমাদের ধর্ম (ইসলাম) পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম মনোনীত করলাম। তবে যদি কেউ ক্ষুধার তাড়নায় (নিষিদ্ধ জিনিস খেতে) বাধ্য হয়, কিন্তু ইচ্ছা করে পাপের দিকে না ঝোঁকে (তার জন্য) আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
         মর্মার্থঃ—আল্লাহ্‌র যা খাদ্য বিশ্বাসী বা জ্ঞানীদের তাই খাদ্য। আল্লাহ্‌কে যে খাদ্য বিশ্বাসী বা জ্ঞানীরা উৎসর্গ করতে সক্ষম নয়, তা তারা কিভাবে গ্রহণ করবে? তাদের লক্ষ্য আল্লাহ্‌কে শিকার করে নিজ পবিত্র গৃহে ধারণ করে রাখা এবং তাঁর জন্যই সবকিছুর ব্যবস্থা করা। মানুষের স্বভাবই হচ্ছে তাদের ধর্ম, আল্লাহ্‌ তাঁর বিধান দিয়ে মানুষের স্বভাবকে পবিত্রতার পথে অর্থাৎ ইসলামের পথে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করলেন।
        ৪) লোকে তোমাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কী কী বৈধ করা হয়েছে? বল, সমস্ত ভাল জিনিস তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে এবং শিকারী পশু পক্ষী যেগুলোকে তোমরা শিকার শিক্ষা দিয়েছ, যেভাবে আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, ঐগুলো (শিক্ষা দেয়া পশু পাখি) যা তোমাদের জন্য ধরে আনে তা ভক্ষণ করবে এবং এতে আল্লাহ্‌র নাম নেবে এবং আল্লাহ্‌কে ভয় করবে, আল্লাহ্‌ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর।
      মর্মার্থঃ—প্রথমেই আল্লাহ্‌কে ভয় করে তাঁর দেওয়া শিক্ষা ও জ্ঞানের দ্বারা নিজের অন্তর্জগৎ ও বহির্জগতের কামনা বাসনাকে নির্মূল করে নিজের চিত্তকে আল্লাহ্‌তেই স্থির করবে। তারপর আল্লাহ্‌ তোমার মনের সাথে যুক্ত হয়ে যেভাবে তোমাকে চালিত করবেন, সেইভাবেই যন্ত্রবৎ চালিত হবে। তবেই আর কোন খাদ্য- অখাদ্য দোষ তোমাকে স্পর্শ করবে না। মনে রাখবে তোমার আল্লাহ্‌ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর। তুমি এখানে কেবল খাবার খেয়ে মরার জন্য আসোনি, এই কর্মভূমি, জ্ঞানপীঠ ও তীর্থস্থানে এসেছো এজীবন সফল করে ধন্য করার জন্য।
         ৫) আজ তোমাদের জন্য সমস্ত ভাল জিনিস বৈধ করা হল, যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাদ্য দ্রব্য তোমাদের জন্য বৈধ ও তোমাদের খাদ্য দ্রব্য তাদের জন্য বৈধ করা হল,এবং বিশ্বাসী সচ্চরিত্রা নারী, তোমাদের পূর্বে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারীও তোমাদের জন্য বৈধ করা হল, যদি তোমরা বিবাহের জন্য তাদের মহর প্রদান কর, প্রকাশ্য ব্যভিচার অথবা উপপত্নী গ্রহণের জন্য নয়। আর যে কেউ অবিশ্বাস করবে তার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
     মর্মার্থঃ—যার যেমন ধর্ম বা স্বভাব তার তেমন খাদ্যে রুচি। মানুষের জন্য সমস্ত ভাল জিনিস বৈধ, যদি মানুষ উন্নত স্বভাবের হয়। উদার ও উন্নত স্বভাবের নারীর সাথে উদার ও উন্নত স্বভাবের পুরুষের বিবাহ বৈধ। মানুষ বুদ্ধিমান জীব, তাই তাকে গভীর চিন্তাশীল হয়ে পরকালকে দেখতে শিখতে হবে, যাতে কোন কাজের দ্বারা সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না হয়।
     জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।

No comments:

Post a Comment