বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৪ নিসা—১৩১
থেকে ১৩৫ আয়াত।]
১৩১) আকাশে ও
ভূতলে যা কিছু আছে সব আল্লাহ্রই; তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের
ও তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করবে এবং তোমরা অবিশ্বাস
করলেও আকাশে ও পাতালে যা কিছু আছে তা আল্লাহ্রই এবং আল্লাহ্ অভাবমুক্ত,
প্রশংসাভাজন।
মর্মার্থঃ—আকাশে,
পাতালে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ্র। মানবজাতিও তাঁরই, তাই তারা তাঁর অধীনে আকাশ,
পাতাল ও ভূমণ্ডলের কর্মচারী হয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। একজন সৎ কর্মচারী
যেভাবে তার মালিককে ভয় করে ও অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করে, ঠিক সেইভাবে বা তার থেকেও বেশী
অন্তর থেকে ভয় ও শ্রদ্ধা করে মানুষ তিনলোকের যেকোন স্থানে সৎ কর্ম করার অধিকার
পেয়ে চলেছে, তাঁরই নিকট থেকে কিতাব ও প্রজ্ঞা লাভ করে। আল্লাহ্ অভাবমুক্ত,
প্রশংসাভাজন হয়ে যখন কোন মানুষকে গ্রাস করেন তখনি সে তাঁর হয়ে যায় এবং সেই মানুষ
তখন আর আল্লাহ্ ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে দেখতে পায় না।
১৩২) আর আকাশে ও
ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ্র, এবং কর্ম বিধায়ক হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
মর্মার্থঃ—আকাশ
ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ্র দ্বারা পরিচালিত, তিনিই সবার কর্ম কর্তা।
এখানে সবায় যন্ত্র আর তিনিই একমাত্র যন্ত্রী, তাই এখানে কারো তাঁর বিরুদ্ধে যাবার
শক্তি নেই। তিনিই মানুষের অন্তরে জাগ্রত হয়ে মানুষকে অবশ করে রেখে এই পৃথিবীর বুকে
সব কিছুর বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছেন। মানুষ মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে এই সত্য বিশ্বাস করতে না
পেরে অহংকারী হয়ে উঠছে।
১৩৩) হে মানুষ! তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে
অপসারিত করতে ও অপরকে আনতে পারেন, এবং আল্লাহ্ এটা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম।
মর্মার্থঃ—এই
পৃথিবীকে তিনি মানুষের মিলনক্ষেত্র করেছেন, আবার ইচ্ছা করলেই তিনি মুহূর্তের মধ্যে
এখান থেকে অপসারিত করে অন্য কাউকে এই পৃথিবীতে আনতে পারেন। এই কাজ তিনি চিন্তা করা
মাত্র করতেও সক্ষম। তাই মানুষের এখানে কোন অহংকার করা সাজে না।
১৩৪) যে কেউ ইহকালের পুরষ্কার চাবে তবে (জেনে রাখুক)
আল্লাহ্র কাছে ইহকাল ও পরকালের পুরষ্কার রয়েছে। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা,
সর্বদ্রষ্টা।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা হয়ে তাঁর সৃষ্টিতে রয়েছেন এবং
যে যা কামনা করছে তিনি তা পূর্ণ করার ব্যবস্থা করছেন। তাঁর কাছে ইহকালের কামনা –বাসনা
পূরণের যেমন পুরষ্কার রয়েছে তেমনি পরকালের জন্যও রয়েছে। যার যেমন স্বভাব, সেই
স্বভাবের উপর ভিত্তি করে জীবের চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে এবং সেই চাহিদা মেটানোর সব
ব্যবস্থা তিনি সকলের অভিভাবক হয়ে করে চলেছেন।
১৩৫) হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ন্যায় বিচারে দৃঢ়
প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তোমরা আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দেবে, যদিও তা তোমাদের
নিজেদের অথবা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়- স্বজনের বিরুদ্ধে হয়; সে বিত্তমান হোক অথবা
বিত্তহীনই হোক আল্লাহ্ উভয়েরই যোগ্যতর অভিভাবক। সুতরাং তোমরা ন্যায় বিচার করতে
কামনার অনুগামী হয়ো না। যদি তোমরা পেঁচালো কথা বল অথবা পাশ কেটে চল, তবে ( জেনে
রাখ) তোমরা যা কর আল্লাহ্ তার খবর রাখেন।
মর্মার্থঃ—সত্যে
স্থির থেকে জীবন অতিবাহিত করবে, পিতা- মাতা, আত্মীয়- স্বজন যেই হোক না কেন, তারা
যদি সত্যত্যাগী হয়, তবে কখনও তাদের পক্ষ অবলম্বন করবে না। কামনা- বাসনার অনুগামী
হয়ে সত্যের বিরুদ্ধে পেঁচালো কথা যেন অন্তর থেকে বের না হয়। ন্যায় বিচারে দৃঢ় থেকে
নিজের অন্তরকে পবিত্র রেখে আল্লাহ্র হয়ে থাকবে এই জগত সংসারে।
জয় বিশ্বমানব
শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের জয়।
No comments:
Post a Comment