Saturday, 25 August 2018

কুরআন সুরা--৪ নিসা-- ১৬৯ থেকে ১৭৬ আয়াত


বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৪ নিসা—১৬৯ থেকে ১৭৬ আয়াত।]
   ১৬৯) জাহান্নামের পথ ব্যতীত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে এবং এ তো আল্লাহ্‌র পক্ষে সহজ।
        মর্মার্থঃ—আল্লাহ্‌র পক্ষে কোন কাজই কঠিন নয়। তিনি যাকে যেখানে খুশী রাখার ব্যবস্থা করতে পারেনতাঁর বিশাল রাজত্বে ভাল- মন্দ- অতি উৎকৃষ্ট মনোরম স্থানের যেমন অভাব নেই, তেমনি অতি নিকৃষ্ট জঘন্য স্থানেরও অভাব নেই। এই পৃথিবী সব মানুষের কর্মভূমি, জ্ঞানপীঠ ও তীর্থস্থান, এখান থেকে সবায়কে ফিরে যেতে হয় তিন স্তরের প্রশংসাপত্র নিয়ে, এখন যদি কেউ এখান থেকে তা না নিয়ে ফিরে যায় তবে কি সে কোন পদে নিয়োজিত হতে পারবে?
         ১৭০) হে মানব! রসূল তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সত্য এনেছে, সুতরাং তোমরা বিশ্বাস কর, এ হবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর। এবং তোমরা অবিশ্বাস করলেও আকাশে ও ভূমণ্ডলে যা আছে সব আল্লাহ্‌রই এবং আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
    মর্মার্থঃ—আকাশে ও ভূমণ্ডলে যা আছে সব আল্লাহ্‌র এই সত্যকে জানলেই মানুষের সবকিছুই জানা হয়ে যায়, কারণ তার বিশালত্বের মধ্যেই মানুষের অবস্থান। মানুষকে এই সত্য জানাবার জন্য আল্লাহ্‌ মানুষের মধ্যে থেকেই কাউকে রসূল মনোনীত করেন এবং তার অন্তরের আত্মার সাথে নিজের আত্মার যোগসেতু নির্মাণ করে দেন ওহীর মাধ্যমে।
        ১৭১) হে আসমানী গ্রন্থধারীগণ, ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না ও আল্লাহ্‌ সম্বন্ধে সত্য বল। মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা মসীহ আল্লাহ্‌র রসূল এবং তাঁর বাণী, যা তিনি মারইয়ামের নিকট প্রেরণ করেছিলেন এবং রূহ তাঁর নিকট থেকেই আগত। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস কর এবং বল না যে, (আল্লাহ্‌) তিন  (জন)। নিবৃত্ত হও, তোমাদের মঙ্গল হবে। আল্লাহ্‌ই তো একমাত্র উপাস্য, তাঁর সন্তান হবে তিনি এর অনেক ঊর্ধ্বে। আকাশে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সব আল্লাহ্‌রই, কর্মবিধায়ক হিসাবে আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট।
         মর্মার্থঃ—সত্যজ্ঞানীরা কেবল সত্যকেই হৃদয়ে ধারণ করে থাকেন, তারা ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থের বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করে না। এক আল্লাহ্‌ ছাড়া তাদের দ্বিতীয় কোন উপাস্য থাকে না। আকাশে ও ভূমণ্ডলে যখন সবকিছুই আল্লাহ্‌র তখন দ্বিতীয়ের চিন্তা আসে কোথা থেকে? যা ছিল, যা আছে এবং যা থাকবে সবকিছু সৃষ্টির মূলে এক আল্লাহ্‌। তিনি যা মনে করেন তাই সৃষ্টি হয়ে যায়, অতএব সবকিছুই তাঁর মন থেকেই সৃষ্টি হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে।
      ১৭২) মসীহ আল্লাহ্‌র বান্দা হওয়াকে হেয় জ্ঞান করে না, এবং ঘনিষ্ঠ ফেরেশতাগণও নয়, বস্তুত যারা তাঁর ‘ইবাদত করতে লজ্জা বোধ করে আর অহংকার করে, তিনি তাদের সকলকে তাঁর নিকট একত্র করবেন।
      মর্মার্থঃ—আল্লাহ্‌র মন থেকে সকল সৃষ্টিই তাঁর বান্দা, উপাসক, ভক্ত, সাধক, কর্মী হয়ে তাঁর উপাসনা তাঁরই দেওয়া বিধান অনুসারে করে চলেছে। যারা অহংকারে ও লজ্জায় তাঁর উপাসনা বা পূজা করে না, তাদেরকে তিনি যথাসময়ে একত্র করবেন, তখন যে যে শাস্তি তাঁর কাছে কামনা করবে সে সেই শাস্তিই পাবে।
    ১৭৩) যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে তিনি তাদেরকে পূর্ণ পুরষ্কার দান করবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দেবেন, কিন্তু যারা হেয় জ্ঞান করে ও অহংকার করে তাদের তিনি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দান করবেন এবং আল্লাহ ছাড়া তাদের জন্য তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।
      মর্মার্থঃ—যারা সত্যকে মান্য করে জীবন সত্যের পথে চলবে তারা পুরষ্কার পাবে। জীবন সত্যকে মান্য করে যারা চলে তারা কখনও কোথাও নিরাশ হয় না। আল্লাহ্‌কে সাহায্যকারী ও অভিভাবক রূপে না পেলে কেউ কোনরূপ সৎ কাজ করতে সক্ষম হয় না, সে যতই এ জগতের বিত্তশালী লোক হোক না কেন। বিত্ত মানুষকে সৎ ও জ্ঞানীরূপে গড়ে তুলতে সক্ষম হয় না, বিত্ত মানুষকে অহংকারী, কদাচারী, অত্যাচারী করে তোলে, যদি না তার অভিভাবক আল্লাহ্‌ না হয়ে অন্য কেউ হয়।
        ১৭৪) হে মানব! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট প্রমাণ এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি স্পষ্ট জ্যোতি অবতীর্ণ করেছি।
          মর্মার্থঃ—আল্লাহ্‌র জ্যোতি মানব জাতির জন্য অবতীর্ণ হয় চিত্তকে সংশোধন করে স্থির করার জন্য। চিত্ত স্থির হলেই মানুষ জ্ঞাননেত্রে সত্যকে দেখে পবিত্র চরিত্র সহজেই গঠন করতে সক্ষম হয়। বিত্ত কখনো আল্লাহ্‌র জ্ঞান- বিজ্ঞানের ঘরে মানুষকে নিয়ে গিয়ে সত্যজ্ঞানী করতে সক্ষম হয় না, চিত্তই মানুষকে তাঁর সান্নিধ্যে নিয়ে গিয়ে সত্যজ্ঞানী করে তোলে।
         ১৭৫) অতঃপর যারা আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস করে ও তাঁকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে তাদেরকে তিনি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশাধিকার প্রদান করবেন এবং তাকে সরল পথে পরিচালিত করবেন।
          মর্মার্থঃ—মানুষের মন যত উদার হবে ততই মানুষ আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাসী হয়ে উঠবে এবং তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ করার অধিকার লাভ করবে।
      ১৭৬) লোকে তোমার নিকট জানতে চায়। বল, পিতামাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্বন্ধে তোমাদের আল্লাহ্‌ পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছেন, কেউ মারা গেলে সে যদি সন্তানহীন হয় এবং তার এক ভগিনী থাকে তবে তার জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ, এবং সে যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে, আর দুই ভগিনী থাকলে তাদের জন্য তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ, আর যদি তাই বোন উভয়ই থাকে তবে এক পুরুষের অংশ দুই নারীর অংশের সমান। তোমরা পথভ্রষ্ট হবে এ আশংকায় আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছেন এবং আল্লাহ্‌ সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
  মর্মার্থঃ—সংসারে থাকলে সংসারের সকলের সুযোগ সুবিধার কথায় চিন্তা করতে হয়। এই সংসারে কেউ যাতে দুঃখ না পায় এবং পার্থিব জগতের সম্পদের জন্য আত্মিক জগতের জ্ঞান লাভ থেকে কেউ যাতে বঞ্চিত না হয় তার ব্যবস্থা স্বরূপ এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। পার্থিব জগতের নায্য সম্পদ না পাওয়ার ও দেওয়ার জন্য উভয় পক্ষের মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।
      জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।



No comments:

Post a Comment