বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [
সুরা—৫ মায়িদাহ—৪৬ থেকে ৫০ আয়াত।]
৪৬) মারইয়াম পুত্র ঈসাকে তার পূর্বে অবতীর্ণ
তওরাতের সমর্থকরূপে ওদের উত্তরসাধক করেছিলাম এবং তার পূর্বে অবতীর্ণ তওরাতের
সমর্থকরূপে এবং সাবধানীকারীদের জন্য পথের নির্দেশ ও উপদেশরূপে তাকে ইঞ্জিল
(আসমানীগ্রন্থ) দিয়েছিলাম; ওতে ছিল পথের নির্দেশ ও আলো।
মর্মার্থঃ—তওরাত ও ইঞ্জিলের ন্যায় বহু কিতাব
এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছে ঐশী গ্রন্থরূপে এবং সেগুলো সবই পথ নির্দেশক ও আলোময়
গ্রন্থ মানব জাতির জন্য। মানুষের উচিত সেই সব গ্রন্থ পাঠ করে সত্য জ্ঞানের অধিকারী
হওয়া, সেই সাথে মনের সংকীর্ণতা দূর করে এক শক্তির সাথে যুক্ত হয়ে থাকা।
৪৭)
এবং ইঞ্জিলের অনুসরণকারীদের উচিত যে, আল্লাহ্ ওতে ( ইঞ্জলে) যা অবতীর্ণ করেছেন
তদনুসারে বিধান দেয়া, আর যারা আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুসারে বিধান দেয় না
তারা শান্তি ভঙ্গকারী।
মর্মার্থঃ—তওরাত ও ইঞ্জিলের ন্যায় পবিত্র
গ্রন্থ সারা বিশ্বে খোঁজ করলে বহু রয়েছে, যা আল্লাহ্র নিকট থেকে সময়ে সময়ে
অবতীর্ণ হয়েছে। সেই সব অবতীর্ণ হওয়া গ্রন্থের বিধান মানব জাতির মঙ্গলের জন্য।
কিন্তু সেই অবতীর্ণ হওয়া বিধান ব্যতিরেকে অন্য বিধান মানব জীবনের জন্য অকল্যাণকর ও
অপবিত্র। আকাশ থেকে অবতীর্ণ হওয়া আয়াত মাত্রই পবিত্র, পবিত্র মনের মানুষের কাছে।
তাই যারা পবিত্র মনের মানুষ নয়, তারা যেমন আল্লাহ্র বিধান নিজে মানে না, তেমনি
সেই বিধান সে অন্যকেও দেয় না, এরাই হলো পৃথিবীতে অবিশ্বাসী ও অশান্তিকারীর দল।
৪৮)
এর পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের সমর্থক ও সংরক্ষকরূপে আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব
অবতীর্ণ করেছি। সুতরাং আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুসারে তুমি তাদের বিচার
নিষ্পত্তি কর এবং যে সত্য তোমার নিকট এসেছে তা ত্যাগ করে তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ
করো না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আইন ও স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি। ইচ্ছা করলে
আল্লাহ্ তোমাদেরকে এক জাতি করতে পারতেন কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে
তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য ( তিনি তা করেননি)। অতএব সৎকর্মে তোমরা প্রতিযোগিতা
কর, আল্লাহ্র দিকেই সকলের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছিলে সে
সম্বন্ধে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন।
মর্মার্থঃ—সৎকর্মে প্রতিযোগিতা না করলে
কেউ আল্লাহ্র অবতীর্ণ হওয়া আয়াতের মর্মার্থ উদ্ধার করে তা জীবনের সাথে যুক্ত করতে
সমর্থ হবে না। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে বিশ্বের সকল মানুষকে এক জাতি করতে পারতেন
কিন্তু তা করেন নি, কারণ তিনি মানুষকে জ্ঞানী সম্প্রদায়রূপে দেখতে চান। তিনি সকল
জাতির জন্য জ্ঞানের কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, সেই কিতাবগুলি মানব জাতি যখন উদার হয়ে
পড়বে তখনি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে এক জাতি, এক ধর্ম ও এক নীতির মানুষ হয়ে
উঠবে। এটাই হচ্ছে মানব জাতির জাগ্রত অবস্থা।
৪৯)
এবং ( পুনঃ বলছি) আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তুমি তদনুযায়ী তাদের মধ্যে বিচার
নিষ্পত্তি কর, তাদের খেয়াল- খুশির অনুসরণ করো না এবং এ সম্বন্ধে সতর্ক থাক, যাতে
আল্লাহ্ যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন, ওরা তার কিছু থেকে তোমাকে বিচ্যুত করতে
না পারে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখ যে, তাদের কোন কোন পাপের জন্য
আল্লাহ্ তাদের শাস্তি দিতে চান এবং মানুষের মধ্যে অনেকেই তো সত্য ত্যাগী।
মর্মার্থঃ—মানুষের মধ্যে অনেকেই তো সত্য
ত্যাগী। যারা সত্যকে জেনেছে তাদের মধ্যে ভেদজ্ঞান নেই। কিন্তু যারা সত্য ত্যাগী
তাদের ভেদাভেদের অন্ত নেই। তাই সত্যজ্ঞানীরা কেবল আল্লাহ্র অবতীর্ণ হওয়া আয়াতের
উপর নির্ভর করে বিধান দেয়, সত্য ত্যাগীদের ন্যায় খেয়াল খুশী মতো কোন বিধান দেয় না।
সেই সাথে সত্যজ্ঞানীরা আল্লাহ্র অবতীর্ণ আয়াত কখনও স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করে না,
আয়াতের গভীরে প্রবেশ করে মূলকে অক্ষুণ্ণ রেখে সেখান থেকে মানুষের মঙ্গলের জন্য
প্রচুর রত্নরাজি তুলে নিয়ে তা তারা অধিক মূল্যে বিক্রয় করে, আল্লাহ্র প্রিয়পাত্র
হয়ে উঠে।
৫০)
তবে কি তারা প্রাক ইসলামী যুগের বিচার ব্যবস্থা পেতে চায়? খাঁটি বিশ্বাসী
সম্প্রদায়ের জন্য বিচারে আল্লাহ্ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর?
মর্মার্থঃ—যখন মানুষের ধর্ম বা স্বভাব
নিম্নগামী হয়ে যায় তখনি মানব সমাজের অধঃপতন দেখা যায়। কুরআন অবতীর্ণ হবার পূর্বে
বিচার ব্যবস্থার অবনতি হয় এবং বিশ্বাসী লোকেরা গা ঢাকা দেয়, অবিশ্বাসী লোকদের
ভিড়ে। বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের বিশ্বাসকে রক্ষা করার জন্যই অবতীর্ণ হতে থাকে কুরআনের
আয়াত। আল্লাহ্ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বিচারক বিশ্বাসীদের কাছে কেউ নেই।
জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর
জয়।
No comments:
Post a Comment