বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৪ নিসা—১৪৬ থেকে ১৫২ আয়াত।]
১৪৬) কিন্তু যারা তওবা ( অনুশোচনা) করে,
নিজেদের সংশোধন করে, আল্লাহ্কে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে এবং আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে
তাদের ধর্মকে নির্মল করে তারা বিশ্বাসীদের সঙ্গে থাকবে এবং বিশ্বাসীগণকে আল্লাহ্
মহাপুরষ্কার দেবেন।
মর্মার্থঃ--- যারা নিজেদের আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে, নিজেদের ধর্ম অর্থাৎ
স্বভাবকে পবিত্র করে, তারাই বিশ্বাসী সত্তায় পরিণত হয়। এরা নিজেদের আল্লাহ্র নিকট
কোনকিছুই দাবী রাখে না। তিনি কৃপা করে যা দেন তাকেই মহাপুরষ্কার ভেবে সদায়
সন্তুষ্ট মনে, কেবল তাঁকেই তুষ্ট করার জন্য, সৎ চিন্তা ও সৎ কর্মে লিপ্ত থাকে।
নিজের চরিত্রের সংশোধন নিজেকেই করতে হয়, এই সংশোধন করার জন্য বিত্তের দরকার হয় না,
দরকার হয় চিত্তের। চিত্ত যখন আল্লাহ্কে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে থাকে, তখনি মানুষ
আল্লাহ্র গুণ- শক্তি ও জ্ঞানে পূর্ণ হয়ে নিজের ধর্মকে নির্মল করতে সক্ষম হয়।
১৪৭) তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং বিশ্বাস কর, তবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে
শাস্তি দিতে চান না, বস্তুত আল্লাহ্ পুরষ্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।
মর্মার্থঃ—স্রষ্টা নিশ্চয় তাঁর সৃষ্টিকে কোন প্রকার শাস্তি দেওয়ার জন্য
সৃষ্টি করেন নি। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে সুন্দরভাবে ধরে রাখার জন্যই সৃষ্টি করেছেন।
কিন্তু সৃষ্টি যদি স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে, তাঁর সৃষ্টিরই প্রতি
অত্যাচারী হয়ে উঠে, তবে তো তাকে শাস্তি না দিয়ে, স্রষ্টার কোন উপায় থাকে না।
আল্লাহ্ পুরষ্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ হয়ে তাঁর সৃষ্টির সাথেই রয়েছেন এবং পুরষ্কার ও
শাস্তির মাধ্যমে নিজের সুন্দর সৃষ্টিকে রক্ষা করে চলেছেন।
১৪৮) মন্দ কথার প্রচারণা আল্লাহ্ ভালবাসেন না;
তবে যার উপর জুলুম করা হয়েছে তার কথা স্বতন্ত্র, এবং আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা,
সর্বজ্ঞ।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ হয়ে তাঁর সৃষ্টির সাথেই থাকেন, তাই
তিনি কোন প্রকার মন্দ কথার প্রচার ভালবাসেন না। যদি কেউ জুলুমের শিকার হয় তাহলে তো
স্বাভাবিকভাবে তা প্রচারিত হবে।
১৪৯) যদি তোমরা সৎকাজ প্রকাশ্যে কর
অথবা গোপনে কর অথবা অপরাধ ক্ষমা কর, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ও ক্ষমাশীল, শক্তিমান।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও শক্তিমান হয়ে সবার সাথেই থাকেন, কিন্তু তিনি
না ডাকলে সাড়া দেন না। যারা সৎকাজ প্রকাশ্যে বা গোপনে করে তাদের তিনি শক্তিদাতা,
তেমনি যারা শত অপরাধ করলেও জীবকে ক্ষমা করে, তাদের কাছেই তিনি ক্ষমাশীল।
১৫০) যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলগণকে অবিশ্বাস করে, আর ইচ্ছা করে আল্লাহ্ ও
রসূলদের মধ্যে পার্থক্য করে এবং বলে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অবিশ্বাস করি
এবং এদের মধ্যবর্তী এক পথ অবলম্বন করতে চায়।
মর্মার্থঃ—যারা একে অপরের আল্লাহ্ ও রসূলদের প্রতি অবিশ্বাসী হয়ে আল্লাহ্
রসূলদের মধ্যে ভেদ সৃষ্টি করে, তারা সকলেই অপরাধী, অজ্ঞানী,অজ্ঞ ও অবিশ্বাসী
নাস্তিক। এরা আল্লাহ্ ও রসূলের ব্যাপারে সত্য জানে না, তাই তারা নিজেদের কামনা-
বাসনার বশবর্তী হয়ে মধ্যবর্তী এক পথ অবলম্বন করে সত্যত্যাগী হয়ে পড়ে।
১৫১) প্রকৃতপক্ষে এরাই অবিশ্বাসী,
এবং অবিশ্বাসীদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি।
মর্মার্থঃ—প্রকৃতপক্ষে যারা আল্লাহ্ বলতে কোন সম্প্রদায়ের দেওয়া নামকে
ছাড়া অন্য সম্প্রদায়ের নামকে বিশ্বাস করে না, রসূলকে বিশ্বাস করে না তারাই
অবিশ্বাসী ও সাম্প্রদায়িক। যে কোন সম্প্রদায় বিশালত্বের সাথে যুক্ত কিন্তু কোন
সাম্প্রদায়িক ও অবিশ্বাসীরা বিশালত্বের সাথে যুক্ত নয়, এরাই লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি
ভোগ করার জন্য এখানে সর্বপ্রকার প্রয়াস চালায়।
১৫২) আর যারা আল্লাহ্ এবং তাঁর
রসূলগণে বিশ্বাস করে এবং তাদের একের সাথে অপরের পার্থক্য করেনা তাদেরই তিনি
পুরষ্কার দেবেন, এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
মর্মার্থঃ—যারা বিশ্বের সমস্ত সম্প্রদায়ের আল্লাহ্ এবং রসূলদের বিশ্বাস
করে এবং তাদের একের সাথে অপরের পার্থক্য করেনা, আল্লাহ্ তাদেরকেই ভালবাসেন ও
পুরষ্কার দেন। তিনি সবার প্রতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ও সমদর্শী। তিনি বিশেষ কোন
সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতীত্ব দেখান না, তিনি কেবল যে কোন সম্প্রদায়ের
সাম্প্রদায়িকদের শাস্তির ব্যবস্থা করেন।
জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment