বিশ্বমানব
শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৫ মায়িদাহ—৬৬ থেকে ৭০ আয়াত।]
৬৬) আর যদি
তারা তওরাত, ইঞ্জিল ও যা তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে
তাতে প্রতিষ্ঠিত থাকত, তাহলে তারা সকল দিক দিয়ে প্রাচুর্য লাভ করত। তাদের মধ্যে
একদল রয়েছে যারা মধ্যপন্থী, কিন্তু তাদের অধিকাংশ যা করে তা নিকৃষ্ট।
মর্মার্থঃ—তওরাত,
ইঞ্জিলের ন্যায় প্রচুর ধর্মগ্রন্থ মানবজাতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ
হয়েছে। মানবজাতি যদি সেই সব গ্রন্থের আশ্রয়ে থেকে পবিত্র জীবন- যাপন করতে অভ্যস্থ
হতো তবে তারা সবদিক থেকেই প্রাচুর্য লাভ করে পরম শান্তিতে পৃথিবীর বুকে বাস করতে
পারতো। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সেই পথে না গিয়ে পরনির্ভরশীল হয়ে মানব জীবন গঠন করে।
তাই তারা জীবনের আবর্জনা মুছে ফেলে ভাল কিছুই গ্রহণ করতে পারে না। যারা মধ্যপন্থী
অবস্থায় থাকে তাদের অধিকাংশ, জীবনকে নিয়ে যা করে তা অতি নিকৃষ্ট।
৬৭) হে
রাসুল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার কর,
যদি না কর তবে তো তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না। আল্লাহ্ তোমাকে মানুষ হতে
রক্ষা করবেন। বস্তুত আল্লাহ্ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সৎ পথে পরিচালিত করেন না।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্
অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সৎ পথে পরিচালিত করেন না। তাই হে রাসুল! তোমার প্রতিপালকের
নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার কর, তাঁর বার্তা প্রচারে অনীহা
দেখাতে যেও না। তিনি তোমাকে মানুষ হতে রক্ষা করবেন। মানুষই হচ্ছে মানুষের সব থেকে
বড় শত্রু, কারণ মানুষের ন্যায় স্বার্থপর প্রজাতির জীব আর দ্বিতীয় নেই।
৬৮) বল, হে আসমানী গ্রন্থকারীগণ! তওরাত, ইঞ্জিল
ও যা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, তোমরা তা
প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ভিত্তি নেই। তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে
তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও অবিশ্বাসই বৃদ্ধি
করবে। সুতরাং তুমি অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ করো না।
মর্মার্থঃ—মানবজাতির
জন্য যেসব ধর্মগ্রন্থ অবতীর্ণ হয়, তা অধিকাংশ মানুষ জানে না ও সেসব গ্রন্থে কি
জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তা পড়েও দেখে না। ফল স্বরূপ অধিকাংশ মানুষ কেবল বাহ্যিক ধর্ম যা
কেবল লোকদেখানো ধর্ম তার উপর নির্ভর করে জীবন যাপন করে। এর ফলে তাদের জীবনের
ভিত্তি স্থাপন হয় না। ভিত্তিহীন জীবনের কোন মূল্য থাকে না। তাই যারা সত্যজ্ঞানের
প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে তাদের বিরুদ্ধে এই সব লোকের বিরূপ মনোভাব তাদেরকে
বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ করে ও তাদের ধর্মদ্রোহিতা ও অবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে থাকে
আলোর বর্তিকা ছুটে গেলেই তাদের দিকে।
৬৯) নিশ্চয় যারা বিশ্বাসী, ইহুদী, সাবেয়ী ও
খ্রিষ্টান, তাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাস করবে এবং সৎকাজ করবে
তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।
মর্মার্থঃ—কে ইহুদী, সাবেয়ী, খ্রিষ্টান সেটা বড় কথা নয়, দেখতে হবে তাঁর
অন্তঃকরণ কতটা উদার, যে মানুষ নিজের প্রতিপালককে বিশ্বাস করে, নিজের পরকালের
জীবনকে বিশ্বাস করে সৎকাজ করে সেই মহান। তার ইহকালে ও পরকালে কোন ভয় থাকে না ও কোন
দুঃখও তাকে কোথাও আক্রান্ত করতে পারবে না।
৭০) আমি বনী ইস্রাঈলের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ
করেছিলাম ও তাদের নিকট রসুল প্রেরণ করেছিলাম। যখনই কোন রসূল তাদের নিকট এমন কিছু
আনে না তাদের মনঃপুত নয় তখনই তারা কতককে মিথ্যাবাদী বলে ও কতককে হত্যা করে।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্
মানব জাতির কাছে অঙ্গীকার নিয়েই এই পৃথিবীতে রসূল পাঠান। কিন্তু সেই সব রসূলদের
সহজ –সরল সত্য কথা মনঃপুত না হলেই দেখা গেছে মানুষ তাদের উপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার
করেছে ও অনেককে হত্যা করেছে। এই প্রবাহ পৃথিবীর বুকে এখনও চলছে।
জয় বিশ্বমানব
শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment