Tuesday, 31 July 2018

কুরআন --সুরা--৩ আলে --ইমরান -- ১০১ থেকে ১০৫ আয়াত

   বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৩ আলে- ইমরান—১০১ থেকে ১০৫ আয়াত।]
   ১০১) এবং কিরূপে তোমরা অবিশ্বাস করবে? যখন আল্লাহ্‌র আয়াত তোমাদের নিকট পাঠ করা হয় এবং তোমাদের মধ্যেই তাঁর রসূল রয়েছে। যে আল্লাহ্‌কে অবলম্বন করবে সে অবশ্যই সরল পথ পাবে।
       মর্মার্থঃ—আল্লাহ্‌র জ্ঞান- বিজ্ঞানময় বাক্যকে অস্বীকার করার শক্তি মানুষের নেই, তাই তারা সেইসব বাক্যকে অবিশ্বাস করবে কিভাবে? এই জ্ঞান- বিজ্ঞানময় বাক্যকে অন্তরে ধারণ করে জীবনের সাথে যুক্ত করতে পারলেই জীবন আলোকময় হয়ে উঠবে এবং নিজের রসূলকে নিজের মধ্যেই দেখতে পাবে। তাই যখন আসমানী কিতাব বা ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা হয় তখন সবার অন্তরে আল্লাহ্‌র রসূল জাগ্রত হয়ে থাকেন, সেই বাক্যকে আলোকিত করে অন্তর্জ্ঞানচক্ষু খুলে দেওয়ার জন্য। তাই এক কথায় বলা যায়, যে আল্লাহ্‌কে অবলম্বন করবে সে অবশ্যই সরল পথ পাবে। যার যেমন নিজের আল্লাহ্‌কে নিয়ে ভাবনা সে তেমন পথ ধরেই চলতে থাকবে, তাই সহজ সরল জীবন ও সহজ সরল কথা দিয়ে যারা আল্লাহ্‌কে অবলম্বন করে আছে তারাই সরল পথের অধিকারী।
       ১০২) হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ্‌কে যথার্থভাবে ভয় কর এবং (দেখ), তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে মরো না।
     মর্মার্থঃ—নিজ আত্মার আত্মা পরমাত্মা বা আল্লাহ্‌, তিনি ছাড়া আর দ্বিতীয় কেউ সত্যজ্ঞান দেওয়ার নেই, তাই তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ তোমার উপাস্য নেই। তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ তোমাকে পবিত্র করে নিজের ঘরে তোলার শক্তি রাখে না। এই সত্য জেনে তাঁকে যথার্থভাবে ভয়- শ্রদ্ধা করে নিজের অন্তর্জগৎ ও বহির্জগৎ -কে শাসন করে আবর্জনা থেকে মুক্ত থাকো। আর এই দেহত্যাগের আগেই নিজের প্রতিপালকের সাথে এক হয়ে নিজেকে তাঁর চরণে সমর্পণ কর।
 ১০৩) তোমরা সকলে আল্লাহ্‌র রশিকে ( ধর্ম বা কুরআনকে) শক্ত করে ধর এবং ( পরস্পর) বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহকে স্মরণ কর, তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন। ফলে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই (ভাই) হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুণ্ডের (জাহান্নামের) প্রান্তে ছিলে, অতঃপর তিনি (আল্লাহ্‌) তা থেকে তোমাদেরকে উদ্ধার করেছেন। এরূপে আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শন স্পষ্টভাবে বিবৃত করেন, যাতে তোমরা সৎপথ পেতে পার।
     মর্মার্থঃ—মানব দেহ ঈশ্বরের দান। ঈশ্বর এই দেহ দান করতে গিয়ে দেবতা, শয়তান সহ অন্যান্য সকলের বাধা পান। কারণ এই নরককুণ্ডের আত্মাদের সম্পর্কে সবার জানা ছিল। এরা সকলেই ছিল পরস্পরের শত্রু এবং কলহ প্রিয় আত্মা। যতবার কিয়ামত বা প্রলয় হয় ততবারই এইসব আত্মাকে আবর্জনা স্বরূপ নরক কুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয় শাস্তি দিয়ে। সেখান থেকে আবার উদ্ধার করে এই পৃথিবীর বুকে জ্ঞান- বিজ্ঞানময় দেহ দান করে আল্লাহ্‌ নিজে তাঁদের অন্তরে অবস্থান করেন অন্তর্যামীরূপে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু হয়ে তাদেরকে পবিত্র করে নিজের ঘরের ফসল রূপে তুলে নেওয়ার জন্য। এতশত জানার পরেও যদি কেউ তাঁকে বিশ্বাস না করে ও তাঁর দেওয়া রশিকে বা জ্ঞানকে শক্ত করে ধরে না  থাকে তবে সে কিভাবে পবিত্র হয়ে তাঁর ঘরে যাবে? আল্লাহ্‌র এই অনুগ্রহ ও নিদর্শনসমূহের কথা যারা ভুলে যায় তারা তো বার বার বেইমানের ভূমিকা নিয়ে এই রঙ্গমঞ্চে পাঠ করে ফিরে যায় পুনঃ নরককুণ্ডে কিয়ামতকালে। তারপর আবার কতকোটি বছর অপেক্ষা করতে হয় সেই নরককুণ্ডের জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করে দেহলাভ করে মুক্তি পাবার জন্য তা তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ জানেন না।
   ১০৪) তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (লোককে) কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দিবে ও অসৎ কার্য থেকে নিষেধ করবে; এবং এ সকল লোকই হবে সফলকাম।
     মর্মার্থঃ—নিজে জ্ঞানী হতে গেলে, অবশ্যই অপরকে জ্ঞানী করে তোলার কাজে লিপ্ত থাকতে হবে তেমনি নিজে সৎ হতে গেলে অবশ্যই মানুষকে সৎ ও কল্যাণের পথে আহ্বান করতে হবে। মানুষ নরক থেকে উঠে আসা জীব তাই তারা কলহ প্রিয়। এদেরকে অসৎ কর্মে বা মন্দ কর্মে বাধা দিতে গেলে ক্ষেপে উঠে তোমাদেরকে আক্রমণ করবে। এই সত্য জেনে তাদেরকে জ্ঞানের চাবুক মেরে শায়েস্তা করতে হবে এবং তাদের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে। তারা নিজের জীবন সত্য জেনে নিলেই শান্ত হয়ে সৎ পথের দিশারী হয়ে উঠবে। সত্যজ্ঞানীদের দল গড়ে এই কাজ করার নির্দেশ আল্লাহ্‌ মানব জাতিকে দিয়ে আসছেন, মানব জাতির কল্যাণের জন্যই।
        ১০৫) এবং তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পর ( বিভিন্ন দলে) বিভক্ত হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।
       মর্মার্থঃ—মানবাত্মা যখন নরককুণ্ডে ছিল তখন কারো সাথে কারো মিল মহবত ছিল না। তাদের কোন অভিভাবকও ছিল না।  এই পৃথিবীতে মানবাত্মা জ্ঞান –বিজ্ঞানময় দেহ লাভ করেছে আল্লাহ্‌র দান স্বরূপ। তারপরেও যদি তারা কলহ প্রিয় হয়ে রক্তপাত ঘটাতে থাকে তাহলে তো পুনঃ তাদেরকে মহাশাস্তি পেয়ে সেখানেই ফিরে যেতে হবে। কেন মানুষ সত্যজ্ঞান পাবার পরেও নিজেদের ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ নিয়ে মতভেদ করবে? কেনো সত্যজ্ঞানের উপরে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন দলে তারা বিভক্ত হবে? যদি সত্যজ্ঞান পাবার পরও মানুষের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি হয় এবং মানুষ বিভিন্ন দলে, মতে, ধর্মে, সম্প্রদায়ে ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে, তবে তো তারা এই মানুষের মহামিলন কেন্দ্র পৃথিবীকেও নরককুণ্ডে পরিণত করবে।
        বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।

No comments:

Post a Comment