Saturday, 28 July 2018

কুরআন সুরা-- ৩ আলে --ইমরান --৭৬ থেকে ৮০ আয়াত

    বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৩ আলে- ইমরান—৭৬ থেকে ৮০ আয়াত।]
  ৭৬) হাঁ, যে তার অঙ্গীকার পালন করে এবং সাবধান হয়ে চলে, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সাবধানীদের ভালবাসেন।
      ভাবার্থঃ—এই পৃথিবীর বুকে অমৃত যেমন আছে তেমনি গরলও নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে আছে। আল্লাহ্‌ বা পরমাত্মা মানবাত্মাকে গরলের আশে-পাশে না যাবার জন্য নানাভাবে সতর্ক বাণী প্রেরণ করতে থাকেন। তা সত্ত্বেও যারা তাঁর নির্দেশ পালন না করে গরল পান করতে থাকবে তারা তো নিজ আত্মার সৎ সত্য সুন্দর ও জ্যোতির্ময় রূপ দেখতে পাবে না, উলটো নিজের এই মহৎ আত্মাকে বার বার হত্যার পথেই এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর যারা আল্লাহ্‌র বিধান মান্য করে, সাবধানী হয়ে নিজ আত্মাকে জাগ্রত করার পথে এগিয়ে যায় তারা তাঁর সব রকম সাহায্য সহযোগিতা পেতে থাকে এবং তাঁর অতি প্রিয় হয়ে উঠে। প্রকৃতপক্ষে যারাই সাবধানী তারাই জ্ঞানী এবং জ্ঞানী সত্তা আল্লাহ্‌র অতি প্রিয়। তিনি তাঁদের মাধ্যম নিয়েই নিজের কাজ সব-লোকে দায়িত্ব দিয়ে করিয়ে থাকেন।
        ৭৭) যারা আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করে পরকালে তাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে চেয়ে দেখবেন না এবং তাদের পরিশুদ্ধ করবেন না, এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
           মর্মার্থঃ—যারা নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিজেরাই পালন করে না তারা কিভাবে আল্লাহ্‌র দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করবে? তারা তো নিজের জীবনকে খেলো করে নিজের শপথ নিজে পালন করতে পারে না, কাম- ক্রোধ- লোভ- মোহের বশবর্তী হয়ে সৎ শপথকে স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করে দুর্লভ মানব জীবনকে সকলের চোখে হেয় করে তোলে। তাদের সাথে তো মানুষ কথা বলতে ঘৃণা করে, তাহলে মহান আল্লাহ্‌র কাছে তারা কি আশা করতে পারে?
      ৭৮) তাদের মধ্যে এক দল লোক এমনও আছে, যারা এরূপভাবে জিভ নেড়ে নেড়ে পাঠ করে, যাতে তোমরা মনে কর তা আল্লাহ্‌র কিতাব, কিন্তু ( আসলে) তা কিতাবের অংশ নয় এবং তারা বলে তা আল্লাহ্‌র নিকট থেকে, কিন্তু তা আল্লাহ্‌র নিকট থেকে প্রেরিত নয় এবং তারা জেনেশুনে আল্লাহ্‌র নামে মিথ্যা বলে।
        ভাবার্থঃ—মানুষের মধ্যে একটা বিরাট অংশ সত্যত্যাগী হয়ে মুখরোচক বাক্যবাণে মানুষকে মোহিত করে এবং সে সব বাক্য আল্লাহ্‌র প্রেরিত বাক্য বলে অর্থ উপার্জনের স্থায়ী পথ করে নেয়। এরা জেনে শুনে আল্লাহ্‌কে দোষ দিয়ে থাকে এবং নিজ আত্মাকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে। মানুষ নিজের জ্ঞান- বুদ্ধি- বিবেককে জাগ্রত করে সৎ চিন্তাশীল না হলে সত্য- মিথ্যা, ভাল- মন্দ, আত্মা- অনাত্মার জ্ঞানের সত্যতার বিচার করতে সক্ষম হয় না।
     ৭৯) ( হে আসমানী গ্রন্থধারীগণ!) কোন মানুষের পক্ষে এ হতে পারে না যে, আল্লাহ্‌ তাকে কিতাব, প্রজ্ঞা ও নবুওয়ত দান করেন, তারপর সে লোকদের বলে, তোমরা আল্লাহ্‌কে ছেড়ে আমার দাস হয়ে যাও, বরং সে বলবে, তোমরা রববানী হও ( এক উপাস্যের সাধক হও)। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দাও এবং যেহেতু তোমরা অধ্যয়ন কর।
         ভাবার্থঃ—সত্যজ্ঞান লাভ করার পর কোন প্রজ্ঞাবান মানুষ নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে এই পৃথিবীতে কোন কাজ করতে পারে না। তাই যারা নিজের স্বার্থে আল্লাহ্‌কে ছেড়ে দিয়ে দল করে তারা মানুষকে দাস বানানোর জন্যেই করে থাকে। দলদাস কোন দিন মুক্ত চিন্তার অধিকারী হতে পারে না। আর আল্লাহ্‌ বা পরমাত্মার দাস কোনদিন কোথাও আবদ্ধ থাকতে পারে না, তারা মুক্ত পুরুষ হয়ে সবার সাথেই থাকে আবার কারো সাথেই থাকে না। তাদের কেউ প্রিয়ও হয় না আবার অপ্রিয়ও হয় না। এরাই হলো প্রকৃত আসমানী গ্রন্থধারী সত্তা।
        ৮০) ফিরিশতাগণকে ও নবীগণকে প্রতিপালকরূপে গ্রহণ করতে সে তোমাদের নির্দেশ দিবে না। মুসলমান হওয়ার পর ( আত্মসমর্পণকারীর পদমর্যদা পাবার পর) সে কি তোমাদেরকে কাফির ( সত্য প্রত্যাখ্যানকারী) হতে বলবে?
        ভাবার্থঃ—মুসলমান মানুষের এমন একটা গুণ, যে গুণের তুলনা অন্য কারো সাথেই করা চলে না। সত্যজ্ঞানী হয়ে নিজ আত্মাকে পরমাত্মার নিকট যারা সমর্পণ করে তারা কিছুতেই কোন প্রলোভনে কাফির অর্থাৎ সত্যপ্রত্যাখ্যানকারী হতে পারে না। গরুর বাট থেকে যে দুধ একবার বেড়িয়ে যায়, তাকে যেমন আর সেই বাটে কোন প্রক্রিয়াতেই ঢুকানো সম্ভব হয় না, তেমনি কেউ সত্যজ্ঞানী হয়ে একবার আত্মসমর্পণকারী হয়ে গেলে তাকে আর ইহজগতের ধর্মে ফেরানো সম্ভব হয় না। ফিরিশতাগন ও নবীগণ সত্যজ্ঞানীদের সাথেই থাকেন এক আল্লাহ্‌র বলয়কে কেন্দ্র করে।
      জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।

No comments:

Post a Comment