বিশ্বমানব
শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৩ আলে ইমরান—১১ থেকে ১৫ আয়াত।]
১১) ফির’আউনের বংশধরগণও তাদের পূর্ববর্তীগণের
মত আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করেছিল, ফলে আল্লাহ্ তাদের পাপের জন্য তাদেরকে
শাস্তিদান করেছিলেন। বস্তুত আল্লাহ্ দণ্ডদানে অত্যন্ত কঠোর।
মর্মার্থঃ—এই পৃথিবীর বুকে ফির’আউনের বংশধরগণদের
ন্যায় কত বংশধরের মানুষ বাস করে, তার হিসেব এখানে দেওয়া হয় নি, কেবল উপমা স্বরূপ
একটা বংশধর ও তাদের পূর্ববর্তীদের কথা তুলে ধরা হয়েছে, মানবজাতিকে শিক্ষা দেওয়ার
জন্য। মানব জাতির মধ্যে যারাই ধর্মীয় জ্ঞানকে মিথ্যা মনে করে পার্থিব জীবনের সুখ
খুঁজতে যাবে তারাই অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। কেউ কারো পাপের জন্য দায়ী থাকবে না,
পাপীদেরকে তাদের পাপের জন্য শাস্তি পেতেই হবে। আল্লাহ্র বিধান অত্যন্ত কঠোর, তিনি
যেমন ভাল কাজের জন্য পুরষ্কারের ব্যবস্থা করেছেন, তেমনি মন্দ কাজের জন্য
শাস্তিদানেরও ব্যবস্থা রেখেছেন।
১২)
যারা অবিশ্বাস করে তাদেরকে বল, তোমরা শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং তোমাদের নরকে একত্রিত
করা হবে। আর সেটা অতি মন্দ স্থান।
মর্মার্থঃ—যারা নিজের দিব্যশক্তির প্রতি
অবিশ্বাস করে তারাই অবিশ্বাসী। এই অবিশ্বাসী মানুষ বিশ্বাসঘাতক। এরা নিজের প্রতি
যেমন বিশ্বাসঘাতকতা করে তেমনি নিজে আল্লাহ্র প্রতিও বিশ্বাসঘাতকতা করে। এদের পতন
এরাই ডেকে আনে নরক ভর্তি করার জন্য। তাই এই আয়াতে বলা হয়েছে – তোমাদের নরকে
একত্রিত করা হবে।
১৩) দুটি দলের ( বদর যুদ্ধে) পরস্পর
সম্মুখীন হওয়ার মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন ছিল। একদল আল্লাহ্র পথে সংগ্রাম
করছিল, এবং অন্যদল অবিশ্বাসী ছিল। তারা ( অবিশ্বাসীগণ) চোখের দেখায় ওদেরকে (
মুসলমানদের) দ্বিগুণ দেখছিল। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা নিজ সাহায্য দ্বারা শক্তিশালী
করেন। নিশ্চয় এতে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লোকের জন্য উপদেশ রয়েছে।
মর্মার্থঃ—এই আয়াত চিরন্তন সত্য। এটা কোন
ঐতিহাসিক যুদ্ধের বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এই আয়াতে বিশ্বাসী- জ্ঞানী –
ধার্মিক মানুষের জয় সর্বত্র এটাই তুলে ধরা হয়েছে, যথা ধর্ম তথা জয় এটাই হচ্ছে
ধর্মের মূল কথা। আল্লাহ্ সদায় ন্যায় বা ধর্মের দিকে থাকেন, অন্যায় বা অধর্মকে
বিনাশ করার জন্য। অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল সত্যকে দেখতে পান এবং সবই তাঁর
শক্তিবলে হয়ে চলেছে আকারে ইঙ্গিতে সেটাও তারা উপলব্ধি করতে পারেন।
১৪) নারী, সন্তান, সোনা ও রূপার ভাণ্ডার, এবং
ঘোড়া ও চতুষ্পদ জন্তু এবং ক্ষেত খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট লোভনীয় করা
হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্যবস্তু। আর আল্লাহ্, তাঁর নিকট উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে।
মর্মার্থঃ—ইহজীবনের ভোগ্যবস্তুকে মানুষের
জন্য লোভনীয় করা হয়েছে, এর মূল উদ্দেশ্য তাদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে পবিত্র
করে নিয়ে, এই মৃত্যুলোক থেকে তুলে নেওয়ার জন্য। মানুষের এই মৃত্যুলোকের আসক্তি বড়ই
লোভনীয়, তাই সহজে কেউ এই লোভ থেকে মুক্ত হয়ে এই লোক ছাড়তে চায় না। কিন্তু মানুষের
জন্য এর থেকেও উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে, তা বার বার তার প্রতিপালক অন্তরে আঘাতের
মাধ্যমে জানাতে থাকেন। কিন্তু মানুষ তাঁর ডাকে সাড়া না দিয়ে তাঁকেই ডাকতে থাকেন এই
মৃত্যুলোকে অজ্ঞের ন্যায়।
১৫) বল, আমি কি তোমাদেরকে এ সব হতে উৎকৃষ্ট
কোন কিছুর সংবাদ দেব? যারা সাবধান হয়ে চলে তাদের জন্য রয়েছে উদ্যানসমূহ, যার
পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে, তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী এবং
আল্লাহ্র সন্তুষ্টি রয়েছে।
মর্মার্থঃ—এই মৃত্যুলোকে যা
কিছু রয়েছে সবই অস্থায়ী, ক্ষণিকের জন্যে। তাহলে কি ঈশ্বরের রাজত্বে মানুষের জন্য
কোন স্থায়ী বাসভূমি নাই? যা মানুষের স্বপ্নে বা কল্পনায় রয়েছে তাই তাঁর রাজত্বে
বাস্তবে রয়েছে। নারী- পুরুষ যাদের স্বপ্ন পবিত্র জীবন, তারা নিশ্চয় পবিত্র জীবন
লাভ করবে। এখানে পবিত্র জীবনের সাধনা করেই যেতে হয় মানুষকে নিজ নিজ সাধনলোকে। এই
সব সাধনলোকের বর্ণনা এখানে সংক্ষেপে অবতীর্ণ হয়েছে। এখানকার সাধনক্ষেত্র যেমন
অস্থায়ী সেখানকার সাধনক্ষেত্র স্থায়ী। মানুষের সাধনার জন্য যা যা প্রয়োজন এখানে
যেমন সংগ্রাম করে সংগ্রহ করতে হয়, সেখানে সেটার প্রয়োজন হয় না। উদ্যান- নদী-
পবিত্র সঙ্গী- পবিত্র সঙ্গিনী সবই সহজ লভ্য হয়ে উঠে সাধকের জন্যে। আল্লাহ্র
সন্তোষটির জন্য যাতে সাধক সদায় সবকিছু চাওয়া মাত্র পায় তার সমস্ত ব্যবস্থা সেখানে
তিনিই করে রেখেছেন সাবধানী মানুষদের জন্য।
জয় বিশ্বমানব
শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।।
No comments:
Post a Comment