Sunday, 22 July 2018

কুরআন সুরা--৩ আলে- ইমরান --১৬ থেকে ২০ আয়াত

   বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৩ আলে- ইমরান—১৬ থেকে ২০ আয়াত।]
  ১৬) যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা বিশ্বাস করেছি; অতএব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা কর, এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর।
      মর্মার্থঃ—যারা নিজের দিব্যস্বরূপের প্রতি জ্বলন্ত বিশ্বাস নিয়ে নিজ নিজ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানায় এই পার্থিব জগতের আবর্জনা থেকে নিজ আত্মাকে  মুক্ত রাখার জন্য, তাদেরকে কোন পাপ স্পর্শ করতে পারে না। তাদের অপরাধ প্রবণ মনও থাকে না, তাই তারা জাহান্নামের শাস্তির কথা মনেও আনে না। এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, মানুষকে অপরাধ প্রবণ মন থেকে সদায় মুক্ত রাখার জন্যে।
    ১৭) তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, দাতা এবং প্রভাতকালে ক্ষমাপ্রার্থী।
    মর্মার্থঃ—অপরাধ প্রবণ মন ও অন্তর থেকে যারা মুক্ত, তারাই ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, দাতা এবং প্রভাতকালে অর্থাৎ অপরাধ করার পূর্বেই ক্ষমাপ্রার্থী। এদেরকে অপরাধ করার কুমন্ত্রণা দেওয়ার জন্য অপরাধ জগতের লোকেরা তাদের সান্নিধ্যে আসে এবং প্রস্তাব দেয় বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে, তারা সাথে সাথে তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে সেই প্রস্তাব বাতিল করে দেয় নিজের পক্ষ থেকে, এদেরকেই প্রভাতকালের ক্ষমাপ্রার্থী বলা হয়েছে।
    ১৮) আল্লাহ্‌ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই; ফিরিশতাগণ এবং ন্যায়ে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিগণও সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই এবং তিনি ন্যায় নীতিতে প্রতিষ্ঠিত, পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
   মর্মার্থঃ—এই আয়াতে স্বরূপবিজ্ঞানের জ্ঞান দিয়ে আল্লাহ্‌ বলতে নিজের অন্তরাত্মাকে বুঝানো হয়েছে। এই অন্তরাত্মা ভিন্ন কেউ কারো উপাস্য হতে পারে না। সবায়কেই নিজ অন্তরাত্মার উপর ভর করেই কর্ম করতে হয় ও জ্ঞান লাভ করে নিজেকে পবিত্র হতে হয়,  আর পবিত্রতায় হচ্ছে অন্তরাত্মার ধর্ম। নিজের অন্তরাত্মাকে মানুষ নিজের রুচি অনুসারে যেকোন নামে আহ্বান করতে পারে। মানুষের এই অন্তরাত্মা সকল ফিরিশতা বা দেবতাদের সাথে যেমন যুক্ত, তেমনি ন্যায় নীতিতে প্রতিষ্ঠিত সকল মানবাত্মার সাথে যুক্ত, তাই এই আত্মার উপাস্য দেবতা, ন্যায় নীতিতে প্রতিষ্ঠিত, পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
       ১৯) নিশ্চয়, ইসলাম আল্লাহ্‌র একমাত্র ধর্ম। যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তারা পরস্পর বিদ্বেষবশত তাদের নিকট জ্ঞান আসার পরও তাদের মধ্যে মতনৈক্য ঘটিয়েছিল। আর যে আল্লাহ্‌র নিদর্শনসমূহকে অবিশ্বাস করবে, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর।
    মর্মার্থঃ--- এই আয়াতে ইসলাম কথাটির অর্থ পবিত্রতা এবং আল্লাহ্‌ কথাটির অর্থ অন্তরাত্মা। তাই স্বরূপবিজ্ঞানের তত্ত্বানুসারে অন্তরাত্মার একমাত্র ধর্ম হলো পবিত্রতা। এক খণ্ড মেঘ যেমন আকাশে বিশাল সূর্যকে ঢেকে ফেলে, তেমনি সামান্য মলিনতা ও অপবিত্রতা বিশাল হৃদয়াকাশের আত্মাকে অন্ধকার করে তোলে। তাই অন্তরাত্মার ধর্মই হলো পবিত্রতা রক্ষা করে চলা। যাদের কাছে কিতাবের জ্ঞান বা স্বরূপবিজ্ঞানের সত্যজ্ঞান এসেছিল, তারাও বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে সত্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করে। যাদের নিজের অন্তরাত্মার প্রতি ও স্বরূপবিজ্ঞানের সত্যজ্ঞানের প্রতি বিশ্বাস নেই, তারা তো বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে কোথাও সত্যকে খুঁজে না পেয়ে ঈশ্বরের সমস্ত নিদর্শনকে অর্থাৎ নিজের আত্মাকে অবিশ্বাসী করে তুলবে। এই অবস্থায় পরমাত্মার দরবারে অন্তরাত্মার কোন হিসেবই মিলবে না, কারণ তিনি হিসেব নিতে তৎপর। তাই এই আয়াত ইসলাম ধর্ম নামে কোন ধর্মের প্রতিষ্ঠা বা প্রচার কল্পে অবতীর্ণ হয় নি। এই আয়াত অবতীর্ণ হয় মানুষের অন্তরাত্মাকে পবিত্র ও সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল রূপে গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে।
    ২০) অতঃপর যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় তবে তুমি বল, আমি ও আমার অনুসারীগণ আল্লাহ্‌র কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আর যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের ও নিরক্ষরদের বল, তোমরা কি আত্মসমর্পণ করেছ? যদি তারা আত্মসমর্পণ করে তবে নিশ্চয় তারা পথ পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তোমার কেবল প্রচার করা কর্তব্য। বস্তুত আল্লাহ্‌ বান্দাদের দ্রষ্টা।
    মর্মার্থঃ—মানুষ তর্ক প্রিয় জাতি। এরা সত্যকে নিয়েও তর্ক করে, মন্তব্য করে। তাই জ্ঞানীরা বৃথা বিতর্কে লিপ্ত হয় না, তারা সত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করে নিজের অন্তর গুহায় মহানন্দে নিজের প্রতিপালকের সাথে সময় অতিবাহিত করে। আল্লাহ্‌ একটি পবিত্র সত্তার নাম, যার অস্তিত্ব আছে সকল বস্তুর মধ্যে, সকল প্রাণের মধ্যে এবং এই সত্তা কোন মায়ার বিজ্ঞানের দ্বারা বশীভূত নন, তিনি স্বরূপবিজ্ঞানের আলোতে আলোকিত। মায়ার বিজ্ঞান যার কোন অস্তিত্ব নেই, সেই মায়ার বিজ্ঞান দ্বারা তিনি জগতকে বশীভুত করে রাখলেও তিনি তা থেকে মুক্ত। মায়ায় আসক্ত জীব কখনো সত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না জাগতিক ধর্মকে ত্যাগ করে। এখানে আপনি আচরি ধর্ম অন্যরে শিখায় কথাটি মনে রেখে জ্ঞানীদেরকে সত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়, তারপর অন্যকে সত্য জানাতে হয় এবং আত্মসমর্পণ করে পবিত্র জীবন-যাপনের কথা বলতে হয়। মানুষ যে আসবেই নিজের অহংকার ত্যাগ করে এই ভরসা কম জেনেও তাদের কাছে সত্য বার্তা পৌঁছে দেওয়ায় সত্যজ্ঞানীর ধর্ম। তিনি যে ভাল কাজ করেন তারও যেমন দ্রষ্টা, যে মন্দ কাজে লিপ্ত তারও দ্রষ্টা, তিনিই উভয়েই কর্মের ফল প্রদান করেন।
   জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের জয়।  

No comments:

Post a Comment