বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের
আলো। [ সুরা—৩ আলে – ইমরান – ৩১ থেকে ৩৫ আয়াত।]
৩১) বল, তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ্
তোমাদেরকে ভালবাসেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। বস্তুত আল্লাহ্ অত্যন্ত
ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
মর্মার্থঃ—অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যম দিয়েই মানুষকে শিক্ষা গ্রহণ করে
সত্যজ্ঞান লাভ করতে হয়। এখন মানুষ কাকে অনুসরণ ও অনুকরণ করবে? যারা নিজের অন্তরের
আল্লাহ্কে ভালবাসে তারা সদায় সত্যজ্ঞানী বা স্বরূপবিজ্ঞানীকে অনুসরণ ও তাঁদের জীবনীকে
অনুকরণ করে নিজের চরিত্র গঠন করার জন্য সাধনা- চেষ্টা –সংগ্রাম চালায়। যারা
আল্লাহ্র নির্দেশিত পথে চলে তাদেরকে তিনি ভালবাসেন এবং তাদের সব অপরাধ ক্ষমা
করেন, পিতা –মাতা যেমন শিশু সন্তানের সব অপরাধ হাসি মুখে ক্ষমা করে দেন, ঠিক তেমন
ভাবেই তিনি ক্ষমাশীল ও পরমদয়ালু হয়ে সদায় সাথে থেকে তাঁর বান্দা বা ভক্তদের অপরাধ
ক্ষমা করে দেন।
৩২) বল, আল্লাহ্ ও রসূলের অনুগত
হও। কিন্তু তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখ আল্লাহ্ অবিশ্বাসীদের ভালবাসেন
না।
মর্মার্থঃ—নিজের অন্তরের আল্লাহ্কে জেনে অর্থাৎ নিজেকে জেনে, সেই
স্বরূপবিজ্ঞানের শক্তির অনুগত হও, সেই সাথে যারা স্বরূপবিজ্ঞানের জ্ঞানের আলোতে
আলোকিত তাদের অনুগত হও, নিশ্চয় তোমার জীবন সত্যজ্ঞানের আলোতে আলোকিত হয়ে উঠবে।
রসূলের সান্নিধ্য সবার জীবনেই আসে, যদি তাঁকে চেনার মতো তোমার অন্তরে বিশ্বাস
থাকে। আর যদি তাঁর জাগতিক জীবনের কার্যকলাপ দেখে মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে সব হারিয়ে
তুমি অবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। অবিশ্বাসীদের আল্লাহ্ ভালবাসেন না, তাই তিনি তাদের
অন্তরে জাগ্রত হন না এবং তাদেরকে সহজ – সরল- সঠিক পথ দেখান না। তাদের জীবনকে
বিভ্রান্তময় করে তোলেন।
৩৩) নিশ্চয় আল্লাহ্ আদমকে, নূহ ও ইব্রাহীমের
বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে বিশ্বজগতে মনোনীত করেছেন।
মর্মার্থঃ—এই আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ্ আদম, নূহ, ইব্রাহীম এবং ইমরানের
বংশধরকে বিশ্বজগতে মনোনীত করেছেন। এর অর্থ তিনি মানব জাতিকেই বিশ্বজগতের জন্য
মনোনীত করেছেন। তারা যেমন বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী হয়ে বিশ্ব জগতের প্রতিপালকের
অধীনে সৎ কাজ করতো এই পৃথিবীর বুকে, এই আয়াতের দ্বারা মানব জাতিকে তাই করতে
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সমস্ত প্রকার দলাদলি ও মতভেদ মুছে ফেলে।
৩৪)
বংশানুক্রমে এরা পরস্পর পরস্পরের বংশধর, এবং আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
মর্মার্থঃ—বংশানুক্রমে মানব জাতি পরস্পর পরস্পরের বংশধর। কালের কবলে পড়ে ও
বিশ্ব প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক গড়ে স্বভাবের পরিবর্তন ঘটাতে গিয়ে মানব জাতি নিজের
ইতিহাস বিস্মৃত হয়ে যায়। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ হয়ে সবই জানেন, তাঁর আশ্রয়ে
এলেই মানুষ পূর্ব স্মৃতি ফিরে পেয়ে তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়।
৩৫)
(স্মরণ কর), যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমার গর্ভে যা আছে তা
একান্ত তোমার জন্য আমি( সেচ্ছায়) উৎসর্গ করলাম। সুতরাং আমার পক্ষ থেকে তা গ্রহণ
কর, নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
মর্মার্থঃ—আল্লাহ্ বা বিশ্ব জগতের প্রতিপালক হচ্ছেন পবিত্র সত্তা, এই
সত্তার অস্তিত্ব কোনকালেই বিনাশ হয় না। অবিনাশী প্রতিপালকের নিকট যা কিছু পবিত্র
তা উৎসর্গ করলে সেই পবিত্র বস্তুও অবিনাশী হয়ে যায়। বিশ্বাসী নারীরা জানেন তাদের
গর্ভে যে ফল উৎপন্ন হয় তা তার প্রতিপালকের দান। তাই এই ফল একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য,
তাই তারা জন্মের আগেই তা তার প্রতিপালককে উৎসর্গ করে, তাঁর পবিত্রতার সাথে যুক্ত
করে দেয়। উদাহরণ স্বরূপ ইমরানের স্ত্রীকে এখানে টেনে এনে মানব
জাতিকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তাদের বংশধরদের
পবিত্র সত্তারূপে টেনে এনে বিশ্ব জগতের সম্পদ রূপে রেখে যাবার জন্য। বংশধর উজ্জ্বল
তারকা স্বরূপ আলোদানকারী পবিত্র সত্তা না হলে, কি লাভ সেই বংশধরদেরকে নরকের আগুনের
মুখে ফেলার জন্য টেনে আনার?
জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment