বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [
সুরা—৩ আলে- ইমরান—৩৬ থেকে ৪০ আয়াত।]
৩৬) অতঃপর যখন সে (ইমরানের স্ত্রী) ওকে (সন্তান) প্রসব করল, তখন সে বলল, হে
আমার প্রতিপালক! আমি কন্যা প্রসব করেছি। বস্তুত আল্লাহ্ সম্যক অবগত সে যা প্রসব
করেছ। ছেলে তো মেয়ের মত নয়, আমি তার নাম মারইয়াম রেখেছি। এবং অভিশপ্ত শয়তান হতে
তার ও তার বংশধরদের জন্য তোমার শরণ নিচ্ছি।
মর্মার্থঃ—সন্তানের পিতা- মাতা হলেই হয় না, সেই সন্তানকে অভিশপ্ত শয়তানের
হাত থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা আগে-ভাগেই করতে হয় নিজ প্রতিপালকের আশ্রয়ে গিয়ে।
যারা বিশ্বাসী নর-নারী তারা সদায় নিজের প্রতিপালকের মনের সাথে নিজের মনকে যুক্ত
রেখে আত্মরক্ষার কৌশল আয়ত্ত করে রাখে। ফলস্বরূপ নিজেরা ও নিজেদের বংশধররা নিজেদের
প্রতিপালকের আশ্রয় থেকে মুহূর্তের জন্যেও অন্যত্র যায় না। তাদের এই সুরক্ষিত বলয়ে
মায়াবী শয়তান প্রবেশ করতে পারে না।
৩৭)
অতঃপর তার প্রতিপালক তাকে ভালভাবেই গ্রহণ করেন এবং তাকে ভালভাবেই মানুষ করেন এবং
তিনি তাকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে রেখেছিলেন। যখনই যাকারিয়া কক্ষে তার সঙ্গে দেখা
করতে যেত তখনই তার নিকট খাদ্যসামগ্রী দেখতে পেত। সে বলত, হে মারইয়াম! এ সব তুমি
কোথা থেকে পেলে? সে বলত, এটা আল্লাহ্র কাছ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা অশেষ
জীবিকা দান করেন।
মর্মার্থঃ—যারা নিজের প্রতিপালকের মনের সাথে নিজের মন যুক্ত করে রাখে
তাদেরকে এজগতের মায়া স্পর্শ করতে পারে না। তারা নিজ মনের দাসত্ব করে না, মন-ই
তাদের দাসত্ব করে-- এ জগতের চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করে প্রতিপালকের মনের সাথে
যুক্ত হয়ে। এই মনের শক্তি কত এবং কত দ্রুতগামী হয়ে যেকোন কাজ করতে সক্ষম তা সাধারণ মানুষের
বোধে আসবে না। তাই মারাইয়ামের কক্ষে সদায় অদ্ভুত অদ্ভুত খাদ্য সামগ্রী সহ অন্যন্য
সামগ্রী সুসজ্জিত থাকতো। আল্লাহ্ বা ঈশ্বরের কৃপা যারা লাভ করে, তারাই কেবল এই
রহস্য উপলব্ধি করতে পারে।
৩৮)
সেখানেই যাকারিয়া তার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে
তুমি তোমার নিকট থেকে সৎ বংশধর দান কর। নিশ্চয় তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।
মর্মার্থঃ—মারাইয়ামের সান্নিধ্যে থেকে আল্লাহ্র কৃপা লাভের রহস্য জানেন
যাকারিয়া এবং তিনিও প্রার্থনা জানান নিজ প্রতিপালকের কাছে সৎ বংশধর দান করার জন্য।
নিজ প্রতিপালকের মনের সাথে মনকে যুক্ত করে প্রার্থনাকারী যে প্রার্থনা করবে সেই
প্রার্থনায় তিনি শুনতে পাবেন, প্রার্থনা শ্রবণকারী রূপে।
৩৯) যখন( যাকারিয়া) কক্ষে নামাযে রত ছিল তখন ফিরিশতাগণ তাকে সম্বোধন করে
বলল, নিশ্চয়, আল্লাহ্ তোমাকে ইহাহইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন, সে হবে আল্লাহ্র বাণীর
সমর্থক, নেতা, জিতেন্দ্রিয় এবং পুণ্যবানদের মধ্যে একজন নবী।
মর্মার্থঃ—যাকারিয়া নিজ প্রতিপালকের মনের সাথে নিজের মনকে যুক্ত করে, তার
সাথে একাত্মা হয়ে গেলেন প্রার্থনার মাধ্যমে। তখনি তিনি দেবতাগন বা ফিরিশতাগণের
মাধ্যমে জানতে পারলেন নিজ পুত্রের সংবাদ, তার নাম হবে ইহাহইইয়া, সে হবে একজন নবী
এবং সমস্ত গুণের অধিকারী।
৪০) সে ( যাকারিয়া) বলল, হে আমার প্রতিপালক!
আমার পুত্র হবে কি রূপে? আমার তো বার্ধক্য এসেছে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা! তিনি (
আল্লাহ্ ) বললেন, এভাবেই; আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তা করেন।
মর্মার্থঃ—যাকারিয়া তার প্রতিপালকের মনের সাথে মনকে এক করে এই আয়াতের
কথাগুলি চিন্তা করছিলেন, তখনি জানতে পারলেন তার প্রতিপালকের ইচ্ছায় শেষ ইচ্ছা,
তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই হয়। তিনি যার মনের সাথে যুক্ত হয়ে যান, তিনি তাকে নিজের মনের
শক্তি দান করে অদ্ভুত অদ্ভুত কাজের সাক্ষী করে রাখেন। সমস্ত সৃষ্টিই তো তাঁর মন
থেকে, কে তার মনের ইচ্ছাশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করবে? তাঁর ইচ্ছাশক্তি, ক্রিয়াশক্তি
ও জ্ঞানশক্তির স্রোত যাদের দেহ-মনের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাদের দেহ- মনে
বার্ধক্য বা বন্ধ্যাত্ব কোথা থেকে আসবে?
জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment