Monday, 30 July 2018

কুরআন সুরা--৩ আলে-- ইমরান-- ৮৬ থেকে ৯০ আয়াত


  বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা-৩ আলে- ইমরান—৮৬ থেকে ৯০ আয়াত।]
   ৮৬) বিশ্বাসের পর ও রসূলকে সত্য বলে সাক্ষ্যদান করার পর এবং তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পর যে সম্প্রদায় সত্য প্রত্যাখ্যান করে ( সে সম্প্রদায়কে) আল্লাহ্‌ কিরূপে সৎপথের নির্দেশ দেবেন? আল্লাহ্‌ সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়কে সৎপথের নির্দেশ দেন না।
      ভাবার্থঃ—এখানে সম্প্রদায় বলতে এক শ্রেণির মানুষকে বুঝানো হয়েছে, যারা অন্তরে সত্যকে বিশ্বাস করে, আলোদানকারী রসূলকে সত্য বলে মেনে নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যায় এবং সত্যের অনেক স্পষ্ট নিদর্শন পেয়ে সত্যজ্ঞানীর পদে বসেও সত্যকে নিজ স্বার্থে প্রত্যাখ্যান করে, নিজেদের পার্থিব জীবনের সুখ- স্বাচ্ছন্দের চিন্তা করে। এই সব স্বভাবের মানুষে সমাজ পরিপূর্ণ, যারা নিজের অন্তরের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করে। এই সম্প্রদায়ের মানুষকে আল্লাহ্‌ কিরূপে সৎ পথের নির্দেশ দিবেন? আল্লাহ্‌ সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়কে সৎপথের নির্দেশ দেন না, তাই মানুষ নিজের বিবেককে জিজ্ঞাসা করলেই জেনে যেতে পারবে সে কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। মানুষের স্বভাবের যত উন্নতি ঘটবে ততই তাদের আধ্যাত্মিক জীবনের উন্নতি ঘটতে থাকবে, আর যত অবনতি হবে ততই পতন ঘটবে।
    ৮৭) এ সকল লোকের প্রতিফল এই যে, এদের উপর আল্লাহ্‌র, ফিরিশতাগণের এবং মানুষের সকলেরই অভিশাপ।
      ভাবার্থঃ--- যারা সত্যকে জেনে, সত্যজ্ঞানীর সান্নিধ্য পেয়েও নিজেকে অন্ধকার থেকে মুক্ত করে আলোর পথে নিয়ে যাবার জন্য সাধনা করে না, তাদের প্রতি আল্লাহ্‌র, ফিরিশতাগণের ও সকল মানুষের অভিশাপ বর্ষিত হয়।
       ৮৮) তারা( নরকে) স্থায়ী হবে, তাদের শাস্তি লঘু করা হবে না এবং তাদের বিরামও দেয়া হবে না।
          ভাবার্থঃ--- সত্যত্যাগী সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়, এদের স্থান হবে নরকে। তাদের শাস্তি লঘু করা হবে না এবং তাদের বিরামও দেয়া হবে না। যে কোন জীবের বাসস্থান হলো নিজের দেহ। এই সব লোক যে বাসস্থানের জন্য দেহ পাবে তা হবে নরকের দেহ। তাই মানুষকে চিন্তা করে পরকালের বাসস্থানকে আগে-ভাগেই পবিত্র করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করতে হয়। এই দুর্লভ মানব জীবন অনেক সাধ্য- সাধনার ফসল, তাই জীবন পেয়েও যারা সত্যের সাধনা করে না, তারা তো এখানেই জীবনটাকে নরক করে তোলে, তাহলে পরকালে কি হবে তা তো সে নিজেই উপলব্ধি করতে পারে।
       ৮৯) তবে এরপর যারা তওবা করে (অনুতপ্ত হয়) ও নিজেদের সংশোধন করে (তাদের রেহাই)। বস্তুত আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
           মর্মার্থঃ—আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু, তাই মানুষ পাপ করে সীমালংঘন করার পরেও তাকে স্বভাব সংশোধনের সময় দেওয়া হয়, যদি একবার কেউ নিজেকে সমর্পণ করে নিজের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চায় তাহলেই তিনি ক্ষমাশীল হয়ে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু যে মানুষদের ভাল-মন্দ, ন্যায়- অন্যায় বোধ নেই, তারা তো বার বার সীমালংঘন করার পথেই পা রাখবে। যারা নিজের স্বভাবের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না, তারা নিজেদের স্বভাব দোষেই শাস্তি পাবে ইহলোকে ও পরলোকে।
       ৯০) নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করার পর অবিশ্বাস করে এবং যাদের অবিশ্বাস প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাদের তওবা কখনও মঞ্জুর করা হয় না। এরাই তো পথভ্রষ্ট।
       ভাবার্থঃ—যারা সুযোগ সন্ধানী, তারা সুযোগ নেওয়ার জন্য সব পথেই পা বাড়াতে প্রস্তুত থাকে। এরা সু্যোগ পেয়ে গেলেই বিশ্বাসঘাতকের ভূমিকা গ্রহণ করে অবিশ্বাসী হয়ে পড়ে এবং এদের অবিশ্বাস প্রবৃত্তি দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এদের লোভ- মোহ এত বৃদ্ধি পেতে থাকে যে পাপ –পুণ্যের জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে। এদের অনুতাপ লোকদেখানো ভণ্ডামি, তাই এরা যতই তওবা করুক না কেন এদের তওবা মূল্যহীন হয়ে যায় আল্লাহ্‌র ঘরে। এই সুযোগ সন্ধানীরাই তো পথভ্রষ্ট।
      জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।  

No comments:

Post a Comment