বিশ্বমানব
শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৩ আলে- ইমরান—১০৬ থেকে ১১০।]
১০৬) সেদিন কতগুলো মুখ সাদা( উজ্জ্বল) হবে এবং
কতগুলো মুখ কাল হবে। যাদের মুখ কাল হবে ( তাদের বলা হবে), বিশ্বাসের পর কি তোমরা
অবিশ্বাস করেছিলে? সুতরাং তোমরা যা অবিশ্বাস করেছিলে তার জন্য শাস্তি ভোগ কর।
মর্মার্থঃ—আমি অন্যায় করবো না এবং
অন্যায়কারীদের দলভুক্ত হবো না, এই বিশ্বাস নিয়ে যারা সারাজীবন চলে তাদের আত্মাকে
কেউ কলুষিত করতে পারে না। তাদের মুখ যেমন ইহলোকে উজ্জ্বল থাকে তেমনি পরলোকে গিয়েও
উজ্জ্বল থাকে। আর যারা কথায় কথায় নিজের ধর্ম ত্যাগ করে বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায়
দুলে তাদের মুখ যেমন ইহলোকে কাল থাকে তেমনি গিয়ে পরলোকে কাল থাকবে। পবিত্রতায়
হচ্ছে আত্মার ধর্ম, মানবাত্মা পবিত্র না থাকলে অন্তরে সত্যজ্ঞানের উদয় হয় না।
সত্যজ্ঞান প্রাণ না পেলে ঐশী কিতাবের মর্ম কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। অন্তরে
অবিশ্বাস নিয়েই তাকে দেহত্যাগ করতে হয় এবং অবিশ্বাসী অন্তরের জন্য তাকে শাস্তি ভোগ
করতে হয়।
১০৭)
আর যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহে থাকবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী
হবে।
মর্মার্থঃ—যারা সত্যজ্ঞানের আলোকে উজ্জ্বল,
তাদের আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস অতি দৃঢ় এবং তাঁর আলোতেই তারা আলোকিত। অতএব এদের
কোন স্থানেই ভয় থাকে না, তারা সর্বত্র তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভ করে থাকে।
তাদের স্থায়ীত্বের ব্যাপারেও চিন্তা থাকে না।
১০৮) এগুলো আল্লাহ্র আয়াত, তোমার নিকট
সঠিকভাবে পড়ছি, এবং আল্লাহ্ বিশ্ব জগতের প্রতি অত্যাচার করতে চান না।
মর্মার্থঃ—মানুষের অন্তরে আল্লাহ্ রয়েছেন,
তিনিই সঠিকভাবে নিজের কথা অন্তরে থেকে পাঠ করে চলেছেন। তিনি নিজে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তিনি বিশ্ব জগতের প্রতি অত্যাচার করতে
চান না। এখন মানুষ যদি নিজ গৃহের আল্লাহ্কে অবিশ্বাস করে বিশ্ব জগতের প্রতি
অত্যাচার করে তবে তার কি শাস্তি হতে পারে? এই অত্যাচারী সম্প্রদায়কে কি আল্লাহ্
পছন্দ করবেন, না তাদেরকে জান্নাতের আলো দেখিয়ে সৎ পথের দিশারী করবেন?
১০৯)
এবং আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ্র; আল্লাহ্রই কাছে সব কিছু ফিরে
যাবে।
মর্মার্থঃ—আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে
সবই আল্লাহ্র; এই সত্য জেনে অত্যচারী মনোভাব থেকে তোমরা মুক্ত হও। আল্লাহ্র কাছে
সব কিছুই ফিরে যাবে এবং সবায় সাক্ষী দিবে কার প্রতি কিভাবে মানব জাতি অত্যাচার
করেছে। এখন যারা কথা বলছে না নিরবে অত্যাচার সহ্য করে চলেছে তারা তখন সবায় কথা
বলবে। জ্ঞানী মানব সত্তার তখন মুখ ঢাকার কোন পথ থাকবে না।
১১০) তোমরাই শ্রেষ্ঠ দল, মানব জাতির জন্য
তোমাদের অভ্যুত্থান হয়েছে, তোমরা সৎকার্যের নির্দেশ দান কর, আর অসৎ কার্য ( করা
থেকে) নিষেধ কর এবং আল্লাহ্তে বিশ্বাস কর। যদি আসমানী গ্রন্থধারীগণ বিশ্বাস করত
তবে সেটা তাদের জন্য ভাল হত, তাদের মধ্যে বিশ্বাসী আছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশ সত্য
ত্যাগী।
মর্মার্থঃ—সত্যজ্ঞানীরাই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ দল।
মানব জাতির উন্নতির মূলে এই জ্ঞানী সম্প্রদায়। সত্যকে ত্যাগ করে আল্লাহ্তে
বিশ্বাস স্থাপনের অর্থ চোরাবালিতে বিশাল ইমারত নির্মান করা। তাই মানুষকে সত্য
স্তম্ভে দাঁড়িয়ে থেকে সৎ কাজ করতে হবে এবং অপরের জন্যেও সৎ কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি
করে দিতে হবে। যারা অসৎ কাজে লিপ্ত আছে তাদের মুখ ঘুরানোর ব্যবস্থা করতে হবে
সত্যজ্ঞান স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে। আসমানী গ্রন্থকে বিশ্বাস করে কিন্তু সত্য ত্যাগী
এরূপ লোকেই পৃথিবী ভরে গেছে, এই গ্রন্থধারীগণ যদি সত্যমুখী হয়ে বিশ্বাসী হতো তবে
নিশ্চয় এই পৃথিবীই মানুষের জন্যে জান্নাত হয়ে উঠতো।
জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment