বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৩ আলে –ইমরান—৭১ থেকে ৭৫
আয়াত।]
৭১) হে আসমানী গ্রন্থধারীগণ! তোমরা কেন সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত কর এবং
সত্য গোপন কর, যখন তোমরা তা জান?
ভাবার্থঃ--- মানব দেহ অনন্তকোটি
চৈতন্যময় কোষ দিয়ে গঠিত হয়। এই দেহের মন- বুদ্ধি ও আত্মা আসমান বা আকাশের সাথে
যুক্ত। আল্লাহ্ বা পরমাত্মা পরিচালিত এই মানব দেহই হচ্ছে সত্য মন্দির বা উপাসনালয়।
এই সত্য মন্দিরে থাকে আসমানী গ্রন্থ, এই গ্রন্থ সদায় পাঠ করতে থাকে বিবেক মন্দিরকে
পবিত্র করে রাখার জন্য। এখানে সত্যের সাথে মিথ্যা প্রবেশ করলেই তা অপবিত্র হয়ে
যায়, তখন আর সে সত্য মন্দির থাকে না। সত্য গোপন করলেই এক গুচ্ছ অবিশ্বাস এসে
মন্দিরের আলো নিভিয়ে দেয়, তখন আর অন্ধকারে কেউ আসমানী কিতাব পাঠ করতে পারে না।
সত্য জেনেও তখন আর কেউ সত্যকে দেখতে পায় না।
৭২) আসমানী গ্রন্থধারীদের এক দল বলল, যারা
বিশ্বাস করেছে তাদের প্রতি ( অর্থাৎ মুসলমানদের প্রতি) যা অবতীর্ণ হয়েছে, দিনের
প্রথম ভাগে তার প্রতি বিশ্বাস কর, এবং দিনের শেষ ভাগে তা অস্বীকার কর, হয়তো তারা
(ইসলাম থেকে) ফিরতে পারে।
ভাবার্থঃ--- ধর্মগ্রন্থের জ্ঞান বিশারদ্গনের মধ্যেও যারা বিশেষ আল্লাহ্
প্রিয় ও বিশ্বাসী তাঁরাও মানুষের চিত্তকে বিশ্বাস করতে পারেন না। আল্লাহ্ যেমন
সত্যজ্ঞান অবতীর্ণ করেন তেমনি চাকচিক্যময় জগতের বস্তু দিয়ে মানুষের সত্যজ্ঞানকে
হরণ করে পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দেন। তাই সত্যজ্ঞানের মন্দিরকে সদায় আল্লাহ্র সাথে
যে চিত্ত যুক্ত রাখে তা দিনের প্রথম ভাগে যুক্ত থাকলেও শেষ ভাগ পর্যন্ত থাকবে কিনা
তার প্রতি প্রখর দৃষ্টি দিতে হয় সাধকে। চিত্ত আল্লাহ্র জ্ঞান- বিজ্ঞানের ঘরের
সাথে যুক্ত হলেই সেখান থেকে সাধকের ঘরে আসতে থাকে তাঁর সম্পদ। এই সম্পদ দেখে সাধক
যখনি দিনের শেষ ভাগে সত্যকে অস্বীকার করে অহংকার বশে সেই সম্পদকে নিজের ভাবতে শুরু
করে তখনি সে সুদ খাওয়ার চিন্তায় বিভোর হয়ে যায়। তাই তাকে আবার সংসারে ফিরে আসতে হয়
সুদ খাওয়ার জন্য আল্লাহ্র দেওয়া সম্পদের উপর ভিত্তি করে। একবার যদি এই সুদের
প্রতি মানুষের আসক্তি জন্মে যায়, তবে তার পক্ষে এই জগত সংসার থেকে মুক্ত হয়ে
আল্লাহ্র ঘরে ফিরে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
৭৩)
এবং যারা তোমাদের মতাদর্শের অনুসরণ করে তাদের ব্যতীত আর কাকেও বিশ্বাস করো না। বল,
নিশ্চয় আল্লাহ্র নির্দেশিত পথই পথ। ( বিশ্বাস করো না) তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে
অনুরূপ অন্য কাকেও দেয়া হবে, অথবা তোমাদের প্রতিপালকের সম্মুখে তারা তোমাদের
বিরুদ্ধে যুক্তি উত্থাপন করবে। বল, অনুগ্রহ আল্লাহ্রই হাতে; তিনি যাকে ইচ্ছা তা
দান করেন। বস্তুত আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
ভাবার্থঃ--- সত্যজ্ঞানী হয়ে কেবল সত্যজ্ঞানীদেরকেই বিশ্বাস করবে এবং তাদের
সাথেই নিজের মত বিনিময় করবে। অন্যদের বিশ্বাস করতে গেলে চিত্ত চাঞ্চল্য দেখা দিবে
ফলে সত্য থেকে বিচ্যুত হবার সম্ভাবনা থাকে। নিজের চরিত্র গঠন করার জন্য যা নিজের
প্রতিপালকের নিকট থেকে পেয়েছো তাই যথেষ্ট। তোমার প্রতিপালক প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ,
তাঁকে ছেড়ে কেন অন্যের কাছে যাবে? তাঁর অনুগ্রহ লাভ করে তাঁর আশ্রয়েই থাকো, মনে
রেখো তিনি যাকে ইচ্ছা তাঁর অনুগ্রহ দান করতে পারেন। তবে তাঁর অনুগ্রহ অপবিত্র
আধারে বর্ষিত হয় না।
৭৪) তিনি যাকে ইচ্ছা নিজের অনুগ্রহের জন্য বিশেষ করে বেছে নেন। আল্লাহ্
মহা অনুগ্রহশীল।
ভাবার্থঃ---- তিনি যাকে ইচ্ছা নিজের অনুগ্রহের জন্য বেছে নেন, কিন্তু তাঁর
নির্বাচনে কোনোরূপ অসচ্ছতা বা অপবিত্রতা থাকে না। তিনি মহা অনুগ্রহশীল হয়ে সকলের
চাহিদা পূরণ করে চলেছেন, কিন্তু মানুষ কি সত্যকে বিশ্বাস করে বিশ্বাসী হয়ে নিজেকে
কৃতজ্ঞ করে গড়ে তুলছে?
৭৫) আসমানী গ্রন্থধারীদের মধ্যে
এমন লোক রয়েছে যে, বিপুল সম্পদ আমানত রাখলেও (চাওয়া মাত্র) ফেরৎ দেবে; এবং এমন
লোকও আছে যার নিকট একটি দীনার ও (রৌপ্য মুদ্রা) আমানত রাখলে তার পিছনে লেগে না
থাকলে সে ফেরত দেবে না, এই কারণে যে, তারা বলে, এই অশিক্ষিতদের প্রতি আমাদের কোন
দায়িত্ব নেই। এবং তারা জেনে শুনে আল্লাহ্র নামে মিথ্যা বলে।
ভাবার্থঃ--- যারা ধর্মগ্রন্থের আশ্রয়ে থেকে নিজের দেহ মন্দিরকে সত্যমন্দিরে
পরিণত করে তাঁরা জানে এ জগতের সমস্ত সম্পদের মালিক আল্লাহ্। তিনি কৃপা করে যা দেন
তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত, কখনো অপরের সম্পদের প্রতি লোভ করা উচিত নয়। এই আসমানী
কিতাবের আশ্রয়ে থাকা ব্যক্তিদের সততার প্রতি সামান্যও কালিমা পড়ে না, তাই এদের
কাছে কোটি টাকার আমানত জমা রেখেও কেউ ফেরত না পাবার আশঙ্কা করে না। আবার অপর
একশ্রেণির লোক আছে যাদের কাছে সামান্য একটা রোপ্য মুদ্রা বন্ধক রেখে বা জমা রেখে
ফেরত পাওয়ার জন্য ঘুরে ফিরে মরতে হয়, পরিশেষে অনেক অশিক্ষিত লোক এদের খপ্পরে পড়ে
জীবনের শেষ সঞ্চয় টুকূও হারিয়ে ফেলে। সরকার পক্ষ অশিক্ষিতদের প্রতি আমাদের কোন
দায়িত্ব নেই বলে, এই অসৎ লোকদেরকেই চিরকাল মদত দিয়ে আসছে। এই সব লোক আল্লাহ্র
দেওয়া সত্য মন্দিরকে অপবিত্র করে আল্লাহ্র নামেই মিথ্যার প্রচার করে চলেছে যুগ
যুগ ধরে।
জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment