বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৩ আলে—ইমরান – ৯১ থেকে ৯৫
আয়াত।]
৯১) নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস করেছে
এবং অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা গেছে, তাদের পক্ষে পৃথিবী পূর্ণ স্বর্ণ বিনিময় স্বরূপ
প্রদান করলেও তা কখনও কবুল করা হবে না। এ সকল লোকের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং
এদের কোন সাহায্যকারীও নেই।
মর্মাথঃ--- মানব জীবন দুর্লভ জীবন। এই সত্য বিশ্বাস করে এই জীবনকে সাধনার
উপযুক্ত করে তুলতে হয় নিজেকে সত্যের নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং এই দেহ মন্দিরকে
সত্যের মন্দিরে রূপান্তরিত করতে হয় আসমানী কিতাবের সত্যতা বিশ্বাস করে ও তার
সাহায্য নিয়ে। যারা অবিশ্বাস করে তারা তো নিজের
দিব্যস্বরূপকেই অবিশ্বাস করে পথভ্রষ্ট হয়ে অন্ধকার জগতে চলে যায়। অন্ধকার জগতে থেকে কেউ মারা গিয়ে নিশ্চয় আলোর
জগতকে দেখতে পাবে না। নরক হলো অন্ধকার জগত, সেখানে গিয়ে কেউ যদি পৃথিবী পূর্ণ
স্বর্ণ বিনিময় করে একবারের জন্যেও আলোর জগত জান্নাত দেখতে চায়, সেটাও তাদের কাছে
নিরর্থক হয়ে উঠে। কেউ তাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করে না। এই জগতে মানুষের যত রকম
সাধ্য সাধনার ব্যবস্থা রয়েছে অন্য কোথাও তা নেই। অন্য সব লোকে কেবল শাস্তি- কঠোর
শাস্তির ব্যবস্থাই আছে, নেই কোন সাহায্যকারীর দল, নেই কোন সুপারিশকারীর দল।
৯২) তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের মমতার ( তোমরা
যে জিনিষ ভালবাস) জিনিষ আল্লাহ্র পথে ব্যয় কর এবং তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয়
আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।
মর্মার্থঃ--- নিজের জীবনের থেকে প্রিয় নিজের সন্তানের জীবন। নিজের সন্তানকে
আল্লাহ্র পথের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য নিজের জীবনের সবকিছু ব্যয় করা বা নিজের
জীবন উৎসর্গ করায় হচ্ছে আল্লাহ্র পথে ব্যয় করা। নিজের সন্তানকে যে আল্লাহ্র পথের
উপযুক্ত রূপে গড়ে তোলার সাধনা করবে, সেও তো স্বাভাবিকভাবে আল্লাহ্র প্রিয় হয়ে
উঠবে। মনে রাখতে হবে পৃথিবী পূর্ণ স্বর্ণের বিনিময়েও একজন সৎকর্মশীল আল্লাহ্র
প্রিয় মানুষ গড়ে তোলা সম্ভব হয় না। তাই কেউ অর্থ সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহ্র পথ ক্রয়
করতে পারবে না। তাঁর পথ হচ্ছে সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, জ্ঞানের ও আলোর পথ। এই পথ
তৈরি করার জন্য যারা অর্থ- সম্পদ ব্যয় করছে তাদের সকলকেই তিনি ভালভাবেই জানেন ও
চিনেন।
৯৩) তওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে ইসরাইল নিজের জন্য যা অবৈধ করেছিল তা
ব্যতীত বনী ইস্রাঈলের জন্য যাবতীয় খাদ্যই বৈধ ছিল। বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে
তওরাত আন এবং পাঠ কর।
মর্মার্থঃ—জীবনের জন্য খাদ্য, খাদ্যের জন্য জীবন নয়। যতক্ষণ দেহে জীবন থাকে
ততক্ষণ খাদ্যের প্রয়োজন হয় প্রাণকে দেহে রক্ষা করার জন্যে। জ্ঞানের পবিত্রতার সাথে
খাদ্যের পবিত্রতার একটা নিবির সুসম্পর্ক আছে। তাই তওরাত সহ সমস্ত আসমানী গ্রন্থ
খাদ্যের পবিত্রতা ও অপবিত্রতা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং মানব দেহকে কিভাবে পবিত্র
জ্ঞানের মন্দির রূপে গড়ে তোলা যায় তারই ইঙ্গিত দিয়ে গেছে। যারা সত্যবাদী
সত্যজ্ঞানের উপর স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকে তারা খাদ্যের অপচয় রোধ করার ব্যবস্থা করে
এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা খরচ যেমন করে না তেমনি দেহ ধারণের জন্য যেটুকু খাদ্যের
প্রয়োজন তার অতিরিক্ত গ্রহণও করেনা। আল্লাহ্ প্রত্যেক জীবের জন্য খাদ্যের ভাণ্ডার
আলাদা আলাদা করে সাজিয়ে রেখেছেন তেমনি মানুষের জ্ঞান- বুদ্ধি- বিদ্যা – শক্তির পবিত্রতা
রক্ষার জন্যও খাদ্যের ভাণ্ডার সাজিয়ে রেখেছেন।
৯৪) এরপরও যারা আল্লাহ্ সম্পর্কে
মিথ্যা দোষ দেয়, তারাই সীমালংঘনকারী।
মর্মার্থঃ—সত্য জানার পরেও যারা সত্যের পথ ধরে, জ্ঞানের পথ ধরে, আলোর পথে
এগিয়ে চলে না, তারাই আল্লাহ্ সম্পর্কে মিথ্যা দোষ দেয় পথভ্রষ্ট হয়ে। এরাই
প্রকৃতপক্ষে সীমালংঘনকারী দল সৃষ্টি করে পৃথিবীকে অগ্নিগর্ভ করে রাখছে এবং মানব
জাতিকে নরকের পথে আহ্বান করে চলেছে।
৯৫) বল, আল্লাহ্ সত্য বলেছেন। সুতরাং তোমরা
একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর, সে মুশরিকের দলভুক্ত নয়।
মর্মার্থঃ—নিজের অন্তরের অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে আল্লাহ্র দেওয়া
সত্যজ্ঞানের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শিখো, “ আমার আল্লাহ্ যা বলছেন তা সত্য বলছেন, তিনি
বিশ্ব জগতের প্রতিপালক”। ইব্রাহীম ছিলেন একনিষ্ঠ বিশ্ব জগতের প্রতিপালকের
ইবাদতকারী ও সত্যজ্ঞানী। যারা জাগতিক সমস্ত সংকীর্ণতা ত্যাগ করে নিজেকে বিশ্ব
জগতের প্রতিপালকের অধীনে বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী ভাবে তারাই ইব্রাহীমের
অনুসরণকারী। তারা কোনদিনই মুশরিক বা অজ্ঞদের দলভুক্ত হতে পারে না, আর মুশরিকরা
এদের দলে আসতে পারে না। আলো আর অন্ধকার কোনদিন একই বিছানায় শয়ন করতে পারে না তারা
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে তুললেও।
জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment