বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৩ আলে—ইমারান- ৬৬ থেকে ৭০
আয়াত।]
৬৬) দেখ, যে বিষয়ে তোমাদের কিছু জ্ঞান ছিল তোমরা সে বিষয়ে তর্ক করেছ, তবে
যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কেন তর্ক করছ? বস্তুত আল্লাহ্ জ্ঞাত
আছেন এবং তোমরা জ্ঞাত নও।
ভাবার্থঃ—মানবাত্মার স্থান পরমাত্মার মন্দিরে হলেও, সে অণু পরিমাণও জ্ঞাত
নয় তার প্রতিপালকের কার্যকলাপ সম্পর্কে, তাই ক্ষুদ্র হয়ে বিশালত্বকে নিয়ে তর্ক
করা, মূর্খতার পরিচয় দিয়ে, কেবল সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু নয়। যে যেটুকু সত্য জেনেছে
তা কেবল তাঁর প্রশংসা করার জন্য পরিবেশন করায় হচ্ছে তাঁর রাজত্বে বুদ্ধিমানের কাজ।
আর যে বিষয়ে জ্ঞান নেই তা নিয়ে তর্ক না করে শ্রদ্ধাশীল অন্তরে অবনত মস্তকে তা
গ্রহণ করার প্রচেষ্টা করায় মানবাত্মার ধর্ম। পরমাত্মা সকল বিষয়ের জ্ঞান রাখেন
কিন্তু ক্ষুদ্র মানবাত্মার পক্ষে তা সম্ভব নয়, কারণ মানবাত্মা দেহ- কাল ও গুণের
মধ্যে আবদ্ধ কিন্তু পরমাত্মা এই তিনের কোনটার মধ্যেই আবদ্ধ নন।
৬৭) ইব্রাহীম ইহুদীও ছিল না, খ্রিস্টানও ছিল না;
সে ছিল একনিষ্ঠ আত্মসমর্পণকারী এবং সে মুশরিকদের দলভুক্ত ছিল না।
ভাবার্থঃ--- পবিত্র আত্মা দেহধারণ করলেও নিজেকে দেহ- কাল ও গুণের মধ্যে
আবদ্ধ করে দেখেন না। তাই তাঁদেরকে জাগতিক কোন নাম-ধাম- ধর্ম স্পর্শ করতে পারে না। তাঁরা
জন্মসিদ্ধ পুরুষ হয়ে সত্যের কাছে একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে আত্মসমর্পণ করেন এবং কোন রূপ
অজ্ঞান বা সংকীর্ণতাকে জীবন সত্যের সাথে যুক্ত করেন না। তাই এই আয়াতের মাধ্যমে
মানব জাতিকে জ্ঞাত করা হয়েছে ইব্রাহীম ইহুদী- খ্রিস্টান বা এই জাগতিক কোন ধর্মের
সংকীর্ণ নামের সাথে যুক্ত ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক পবিত্র মানবাত্মা।
৬৮) যারা ইব্রাহীমের অনুসরণ করেছিল তারা এবং এই
নবী ও বিশ্বাসীগণ মানুষের মধ্যে ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠতম। আর আল্লাহ্ বিশ্বাসীদের
অভিভাবক।
ভাবার্থঃ—পবিত্র ও সত্যজ্ঞানের দ্বারায় নিজ আত্মাকে পবিত্র করে বের করে
আনতে হয় আবর্জনার স্তূপ থেকে পবিত্র আত্মার সান্নিধ্যে গিয়ে। পবিত্র আত্মা অজর অমর
হয়ে অধিষ্ঠান করেন সর্বত্র। তাই যারা ইব্রাহীমের আত্মার অনুসরণ করেছিলেন তাঁরা সহ
সবকালের নবী, রসূল ও বিশ্বাসীগণ তাঁর ঘনিষ্ঠতম হয়ে রয়েছেন আল্লাহ্র
জ্ঞান-বিজ্ঞানের ঘরে। সকল বিশ্বাসী শ্রদ্ধাশীল জ্ঞানীদের অভিভাবক আল্লাহ্, তিনিই
তাঁর বলয়ের মধ্যে সকলকে আশ্রয় দিয়ে ধারণ করে আছেন- ছিলেন ও থাকবেন।
৬৯) আসমানী গ্রন্থধারীদের এক দল
তোমাদেরকে বিপথগামী করতে চেয়েছিল; অথচ তারা তাদের নিজেদেরই বিপথগামী করে, কিন্তু
তারা তা উপলব্ধি করে না।
ভাবার্থঃ—ধর্মগ্রন্থের আবির্ভাব ঘটে মানবজাতিকে সত্যজ্ঞানী করে তুলে
শান্তির পরিমণ্ডলে ধরে রাখার জন্য, কখনো মানুষের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করার জন্য নয়।
কিন্তু কিছু মানুষ এই সব ঐশীগ্রন্থকে নিয়ে ব্যবসা শুরু করার ফলে মানুষ বিভ্রান্ত
হয়ে পড়ে। যারা মানুষকে সত্যজ্ঞানী করে গড়ে তোলার পরিবর্তে দলভারী করে নিজেদের রুজি
রোজগারের লক্ষ্যে ধর্মগ্রন্থগুলির প্রচার ও প্রসার করার পথে যায়, তারা কেবল
মানুষকে বিভ্রান্ত করে পথভ্রষ্ট করে না, নিজেরাও বিভ্রান্ত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে।
এই সব ব্যক্তিরা নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করতে গিয়ে সত্যত্যাগী হয়ে পড়ে, কিন্তু তা
তারা উপলব্ধি করতে পারে না।
৭০) হে আসমানী গ্রন্থধারীগণ! তোমরা কেন আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার
কর, যখন তোমরাই (সত্যতার) সাক্ষ্য বহন কর?
ভাবার্থঃ—মানব জাতি নিজের ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ নিয়ে গর্ব করে। কিন্তু সেই
ধর্মগ্রন্থের উপদেশ জীবনে চলার পথে কেউ মেনে চলে না। মানব দেহ আল্লাহ্র নিদর্শনের
সত্যতার সাক্ষ্য বহনকারী মন্দির। নিজের মন্দিরের সত্যতাকে অস্বীকার করে কে আসমানী
গ্রন্থের সত্যতাকে চাক্ষুষ করবে? যারা নিজের সত্য মন্দির- মসজিদের জীবন্ত আল্লাহ্কে
অস্বীকার করে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় তারা কিভাবে তাঁর সত্যতার সাক্ষ্য বহন করবে ও
আসমানী গ্রন্থধারী হবে?
জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment