বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ
অভিযান(৩৫৮) তারিখঃ—৩০/ ০৭/ ২০১৮ আজকের
আলোচ্য বিষয়ঃ-- [বেদযজ্ঞে বিশ্বমানব শিক্ষার জ্ঞান নিয়ে আলোচনা।]
আজকে আমি বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান মঞ্চে বিশ্বমানব শিক্ষার জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করবো। মানুষ কেন এই জ্ঞান লাভ করবে?
মানুষ এই জ্ঞান লাভ করবে, তার কারণ প্রত্যেক মানুষ এক বিজ্ঞানময় আনন্দলোকে যেতে
চায়। এই বিজ্ঞানময় আনন্দলোকে যেতে গেলে অবশ্যই তাকে এই জ্ঞান তরীতে চাপতেই
হবে। এই জ্ঞান তরীর উপর ভর করেই মানুষকে
সেই বিজ্ঞানময় আনন্দলোকে যেতে হয়। কেউ সেখানে যাব বললেই যেতে পারে না। সেখানে
যাবার জন্যই মানুষের এই পৃথিবীতে আসা- যাওয়া লেগেই আছে। যারার জন্য মানুষ কতরকম
প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তূ সেই বিজ্ঞানময় আনন্দলোকে পারি দিয়েও আবার ফিরে আসতে
হচ্ছে পৃথিবীর মায়ার টানে।
কিভাবে সেই বিজ্ঞানময় আনন্দলোকে যাওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা এবার
করছি। জ্ঞানের ন্যায় পবিত্র সত্তা আর দ্বিতীয় নেই। একমাত্র এই সত্তায় বিজ্ঞানময়
আনন্দলোকে বিরাজ করতে পারেন। তা’হলে মানুষকে ঘোর অন্ধকারময় খোলস ত্যাগ করে জ্ঞানময়
সত্তায় আগে রূপান্তরিত হতে হবে।
কিভাবে ঘোর অন্ধকারময় অজ্ঞানের খোলস ত্যাগ করা যায়? তা প্রথম জানতে হবে
মানুষকে। প্রথমেই জেনে নাও একমাত্র তোমার জ্ঞান বা পবিত্র সত্তায় তোমার বন্ধু ও
সাহায্যকারী। তুমি এই পবিত্র সত্তা ছাড়া অন্য কারও উপাসনা করবে না। এই সত্তা অবিচল
ও অদ্বিতীয়—মনের থেকেও দ্রুতগামী। তাই এই সত্তাকে স্থির রাখা মনের পক্ষে বড় কঠিন
কাজ। এই সত্তাকে জেনে নিলে তাঁকে ধরে রাখা খুব সহজ। তাঁকে ধারণ করে রাখাটাই
মানুষের ধর্ম। কারণ এই ধর্মের উপর ভর করেই মানুষকে পরলোকে পারি দিতে হয়।
যে
ধীমান ব্যক্তি আপন সত্তাতেই যাবতীয় সৃষ্টিকে দর্শন করেন এবং যাবতীয় সৃষ্টির মধ্যে
আপন সত্তাকেই দর্শন করেন—তিনি অতি সহজেই সেই বিজ্ঞানময় আনন্দলোকে পৌঁছে যান। তখন
সেই ব্যক্তির হৃদয় থেকে যাবতীয় হিংসা, দ্বেষ, ঘৃণা, সংকোচ, ভয় দূরীভুত হয়। তাঁর
দৃষ্টিতে আর যাবতীয় সৃষ্টি আপন সত্তারই ভিন্ন ভিন্ন রূপ হয়েই প্রতিফলিত হয়। তাঁর
দৃষ্টিতে আর বহুরূপ নয়, একরূপ জ্ঞানরূপে ধরা পড়ে। সেই একত্ব দৃষ্টিসম্পন্ন
বিজ্ঞানীর মোহ-শোক- দুঃখ কিছুই থাকে না। তিনি তখন মোহ- শোকের অতীত হয়ে সেই
বিজ্ঞানময় আনন্দলোকে বিরাজ করেন।
কিভাবে আমরা সেই জ্ঞানময় সত্তাকে জানতে পেরে তার উপর ভর করতে পারি? এ নিয়ে
আলোচনা করতে গেলে আমরা দেখতে পাবো, অধিকাংশ মানুষ নিজেকে জানতে চায় না। পশুরা যেমন
নিজেকে জানতে চেষ্টা করে না, মানুষও সেই পশুর মতোই পথ অবলম্বন করে জন্মায়, বৃদ্ধি
পায়, পরিণত হয় আর শেষ দশায় মৃত্যু বরণ করে। নিজেকে জানার জন্য যে জ্ঞান সাধনার
প্রয়োজন—তারা সে পথে যায় না। যদি কেউ যায়—তবে দেখা যায় তারা না জেনে অজ্ঞতা নিয়ে
ভুল পথে উপাসনা বা সাধনা করে। ফলস্বরূপ তারা আরও অজ্ঞানের অন্ধ- তমসায় ডুবে যায়।
আর যারা জেনে শুনে জ্ঞান সহকারে সাধনা করে, তারাও কিন্তূ ফের সেই অন্ধকারেই ডুবে
যায়—অহংকার ত্যাগ না করার জন্যে।
তাহলে
প্রথম স্তরে জ্ঞান তাপসকে অহংকার ত্যাগ করে, ত্যাগ ও সেবার পথে আসতেই হবে। মনে
রাখতে হবে জেনে কোনকিছু করার ফল একরকম, আর না জেনে করার ফল অন্যরকম। এই সুত্র ধরে
বলতে হয় আমি কিছুই জানি না—এই ভাবটা থাকলেই কোন অহংকার আসবে না। তবে কে জানেন—তিনিই
সব জানেন। এই তিনিই হচ্ছেন জ্ঞান তাপসের গুরু বা ভগবান। তার প্রতি অবিচল বিশ্বাস ও
শ্রদ্ধা রেখে তাঁর চরণতলে বসে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তখন আসল তথ্য ও তত্ত্ব উঠে
আসবে জ্ঞান তাপসের অন্তরে। সে তখন জানা ও অজানা, জ্ঞান ও অজ্ঞান, বিদ্যা ও অবিদ্যা
উভয়কে মিলিয়ে প্রকৃত সত্য জানতে পারবে। এই পদ্ধতিতে যে জ্ঞান তাপস বিশ্বমানব
শিক্ষার পতাকা তলে বসে জ্ঞান লাভে প্রয়াসী হবে, সেই অজ্ঞতা রূপ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে
পরিশেষে জ্ঞানময় অমৃতলোকে বিরাজ করতে সক্ষম হবে। সেই সাথে নিজের আনন্দ- সত-সত্য –সুন্দর
ও জ্যোতির্ময় রূপ ফুটিয়ে তুলতে পারবে বিকশিত পদ্মের ন্যায় মানব সমাজের বুকে।
আমি আর বেশি বক্তব্য বাড়াতে চাই না। পরিশেষে
বলতে চাইঃ---
আমি সৎ- তুমি সৎ- সেও সৎ আমার কাছে।
এ জ্ঞান পেয়েছি আমরা বিশ্বমানব শিক্ষার কাছে।।
আমি সত্য- তুমি সত্য- সেও সত্য আমার কাছে।
এ শিক্ষা পেয়েছি আমরা বিশ্বমানব শিক্ষার কাছে।।
আমি সুন্দর- তুমি সুন্দর- সেও সুন্দর আমার
কাছে।
এ জ্ঞান পেয়েছি আমরা বিশ্বমানব শিক্ষার কাছে।।
আমি আনন্দ- তুমি আনন্দ—সেও আনন্দ আমার কাছে।
এ জ্ঞান পেয়েছি আমরা বিশ্বমানব শিক্ষার কাছে।।
আমি মধুর- তুমি মধুর- সেও মধুর আমার কাছে।
এ জ্ঞান পেয়েছি আমরা বিশ্বমানব শিক্ষার কাছে।।
আমি জ্ঞানী- তুমি জ্ঞানী- সেও জ্ঞানী আমার
কাছে।
এ জ্ঞান পেয়েছি আমরা বিশ্বমানব শিক্ষার কাছে।।
আমি একই ব্রহ্ম, তুমি একই ব্রহ্ম, সেও একই
ব্রহ্ম আমার কাছে।
এ জ্ঞান পেয়েছি আমরা বিশ্বমানব শিক্ষার কাছে।।
তাই সবাই বলো বিশ্বমানব শিক্ষার জয়।
আমাদের কোথাও কখনো হবে না পরাজয়।।
No comments:
Post a Comment