বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ
অভিযান(৩৫৬) তারিখঃ—২৮/ ০৭/ ২০১৮ আজকের
আলোচ্য বিষয়ঃ-- [বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞে শক্তি নিয়ে আলোচনা।]
শক্তিই হচ্ছেন স্রষ্টা। এই শক্তির আরাধনা বা
উপাসনা সকলেই করছেন বিভিন্ন মতে ও পথে। সেই শক্তিই মানুষের দেহে ও মনে মঙ্গলদায়িনী
রূপে রয়েছে। এই শক্তিবলেই মানুষ প্রাণবন্ত হয়ে বেঁচে আছে। কাজ করছে। চিন্তা করছে।
কল্পনা করছে। সৃষ্টি করছে। সৃষ্টিকে ধরে রাখছে। আবার সংহার করছে। এই শক্তি নিত্য
শক্তি রূপে বিরাজমান।এই শক্তির জন্মও নেই, মৃত্যুও নেই। ত্রিকালাতীত এই শক্তি সর্ব
জীবে ও বস্তুতে তিনরূপে বিরাজ করেন। শক্তির রূপ সত্ব; রজ; তমঃ এই তিনটি প্রকাশিত
হয় সর্বক্ষেত্রে। এই শক্তিই জ্যোৎস্নারূপা, চন্দ্ররূপা ও সুখরূপা রূপে
বিরাজমান মানবদেহে। কল্যাণময়ী, বুদ্ধিরূপা, ও সিদ্ধিরূপা এই শক্তির যে যত চর্চা
করে তার তত উন্নতি হয়। এই শক্তিই কারো নিকট অলক্ষীরূপে বিরাজ করে। এই শক্তিই
জ্ঞানরূপে অতি সৌম্যা আবার অজ্ঞান বা অবিদ্যা রূপে অতি ভীষণা বা রৌদ্রা হয়ে দুঃখের
কারণ হয়। জগতের আশ্রয়রূপিনী এই শক্তি। সমস্ত ক্রিয়া কলাপের মূলে এই শক্তি চেতনা
রূপে কাজ করছে তাই এই শক্তির নাম চেতনাময়ী। সর্বভূতে এই শক্তি বুদ্ধি রূপে কাজ
করছে বলে তা বুদ্ধিমতী। এই শক্তিই নিদ্রা রূপে, স্বপ্ন রূপে্, ক্ষুধা রূপে, ছায়া
রূপে, বিরাজমানা। এই শক্তির উপাসনা সকলেই করে চলেছে জ্ঞানে বা অজ্ঞানে। সর্ব
প্রাণীতে ও বস্তুতে এই শক্তি নিত্য অধিষ্ঠান করছে। বিষয় বাসনা বা তৃষ্ণার মূলেও এই
শক্তি। মানুষের সমস্ত গুণ রূপে এই শক্তি মানব দেহের মন-বুদ্ধি- অহংকারকে পরিচালিত
করছে। তাই মানুষের ক্ষমা, জাতি, লজ্জা, শান্তি, শ্রদ্ধা, ভক্তি,প্রেম, কান্তি,
লক্ষী প্রভৃতি রূপ বা গুণ ফুটে উঠছে। এই শক্তিই কৃষি, গোরক্ষা, বা পশুরক্ষা ও
ব্যবসা-বাণিজ্যাদি বৃত্তি বা জীবিকা রূপে কাজ করে চলেছে। এই শক্তিই জীবের স্মৃতি
শক্তি রূপে জীবদেহে অবস্থান করছে। এই শক্তি নিত্য বিরাজমান থেকে দয়ারূপে,
সন্তোষরূপে, মাতৃরূপে, ভ্রান্তিরূপে জীব জগতের সব প্রাণীতে অধিষ্ঠান করছে। এই
শক্তিই চতুর্দশ ইন্দ্রিয়কে সকল প্রাণি মধ্যে ধরে রেখেছে। এই চোদ্দটি ইন্দ্রিয় হলো—পঞ্চ
জ্ঞানেন্দ্রিয়- চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা,জিহ্বা ও ত্বক। পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় হলো—বাক,
পানি,পাদ, পায়ু ও উপস্থ। অন্তর ইন্দ্রিয় হলো—মন, বুদ্ধি, অহংকার ও চিত্ত।
এই
শক্তিই আদি পঞ্চ স্থুল ভূত ও আদি পঞ্চ সুক্ষ ভূতের প্রেরণাদাত্রী। এই শক্তি
বিশ্বব্যাপিকা ও ব্রহ্মশক্তি রূপা। এই শক্তি ঘণ্টা,শূল, লাঙ্গল, শঙ্খ, মুষল, চক্র,
ধনু, বান, বন্ধুক, পরমানবিক শক্তি সর্বত্র অধিষ্ঠান করছেন। মেঘের সৃষ্টি করে
বারিবর্ষণ করে পৃথিবীকে শষ্য—শ্যামলা করে তুলছে এই শক্তি।ত্রিভুবনের আধার
স্বরূপিনী এই শক্তি। আমরা এই বিশ্বভুবনে যা দেখছি সবই হলো শক্তির রূপ। এই শক্তিই
রাজাকে অধিকার শূন্য, রাজ্যচ্যুত ও পরাজিত করে ফকির করছে আবার ফকিরকে রাজা- উজীর
করছে। এই শক্তি বলেই কেউ দেবতা- কেউ মহামানব- কেউ শয়তান – কেউ অসুর- কেউ রাক্ষস
ইত্যাদি হচ্ছে। সমস্ত ভাষা- সাহিত্য-কলা সৃষ্টির মূলে একই শক্তি কাজ করে চলেছে। এই
শক্তি সাত্ত্বিক রূপে প্রকাশিত হলে দেবত্ব শক্তির প্রভাব বিস্তার ঘটে এবং পৃথিবীতে
শান্তি বিরাজ করে। সর্বক্ষেত্রে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। এই শক্তি রাজসিক রূপে
প্রকাশিত হলে পৃথিবীতে অসুর, শয়তান, রাক্ষস শ্রেণির প্রভাব ঘটে এবং সর্বত্র
অশান্তি দেখা যায়। এই শক্তি তামসিক রূপে প্রকাশিত হলে অজ্ঞানের অন্ধকারে পৃথিবী
ঢেকে যায়। পশুত্ব শক্তির আধিপত্য ঘটে এই শক্তির প্রভাবে।
এই
শক্তি একটা ক্ষেত্র থেকেই উৎপন্ন হয়। এই ক্ষেত্রকেই আমরা কেউ গড, কেউ ঈশ্বর, কেউ
আল্লা, কেউ ভগবান, কেউ ব্রহ্মা, কেউ বিষ্ণু, কেউ শিব, কেউ কালি, কেউ দুর্গা
ইত্যাদি নামে ভূষিত করে থাকি। এই পবিত্র সত্তা সকল শক্তির সঙ্গে যুক্ত থেকেও তিনি
মুক্ত। আমরা যে শক্তি লাভ করছি তা কেবল সেই পবিত্র সত্তা বা শক্তির আধারকে জানার
জন্যে। তাই পরিশেষে বলতে হয়, সবই হলো এক শক্তির ভিন্ন ভিন্ন রূপ—আর সেই শক্তির উৎস
এক পবিত্র সত্তা যিনি চিরজ্যোতি রূপে সর্বত্র অধিষ্ঠান করছেন এবং সমস্ত শক্তিকে
তিনিই নিয়ন্ত্রন করছেন নিজের প্রভাবে। তাই তিনি সর্বশক্তিমান। জয় মা দুর্গা। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযানের জয়।
No comments:
Post a Comment