Tuesday, 24 July 2018

বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান ৩৫২ তারিখঃ-- ২৪/ ০৭/ ২০১৮


   বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান(৩৫২) তারিখঃ—২৪/ ০৭/ ২০১৮ আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ-- [বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী হয়ে বেদযজ্ঞ বেদীতে বসে  এক অক্ষর ওঁ শব্দকে যজ্ঞে আহুতি দিয়ে জেগে উঠো। ]
  ওঁ এই এক অক্ষর থেকেই বহুর সৃষ্টি হলেও সে কিন্তু এক হয়েই রয়েছে। এই এক অক্ষর-ই অনাদি-অনন্ত। অ-উ-ম অর্থাৎ ওঁ এই আদি অনন্ত অক্ষরকেই ঘিরে সমস্ত শক্তির লীলা চলছে আকাশে ও পৃথিবীতেশব্দ থেকেই সবকিছুর উৎপত্তি। শব্দই সবকিছুকে ধরে রাখে। শব্দই সবকিছুকে বিনাশ করে। তাই এই শব্দ বা অক্ষরকেই পরমপুরুষ বলা হয়ে থাকে। এই অক্ষর পরমপুরুষ মানব দেহে ইড়া- পিঙ্গলা- সুষুম্না নারী যোগে অবস্থান করে। প্রত্যেক মানুষ অজানতে শ্বাসে ও প্রশ্বাসে এই অক্ষর ২৪ ঘণ্টায় ২১৬০০ বার উচ্চারন করে। অর্থাৎ মিনিটে ১৫বার এই শব্দ( হংস) উচ্চারন না করলে সে মানুষ সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। এখন যে এই রহস্য জেনে জ্ঞান বা চেতনা সহকারে তা মনে মনে উচ্চারন করে, তার জ্ঞান শক্তি বেড়ে যায়। তখন সে অনুভব করে দেহে যে সাতটি চক্র বা আকাশ বা সমুদ্র আছে তার কার্‍্য্যকলাপ। এই সাতটি চক্র হচ্ছে—মুলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মনিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ, আজ্ঞাচক্র ও সহস্রার। ইড়া- পিঙ্গলা- সুষূন্মা নাড়ী যোগে মূলাধার থেকে সহস্রাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। এই সাতচক্র না জাগ্রত হলে মানুষের ঘুমন্ত দশা কাটেনা। আর ঘুমন্ত অবস্থা না কাটলে মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গ হয় না। স্বপ্ন না ভাঙ্গলে মানুষ প্রকৃত সত্য জানতেও পারে না। তাই জাগ্রত হও- জাগ্রত হও। যতক্ষন স্বপ্ন ততক্ষন ভয়- জেগে উঠলেই সব ভয়- সব অজ্ঞান দুরীভুত হবে। রাত্রির অবসান ঘটবে-দিনের আলো প্রস্ফুটিত হবে। আলো আর অন্ধকার এক শয্যায় শয়ন করার ইচ্ছা থাকলেও তারা যেমন নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে পারে না, তেমনি অজ্ঞানী জ্ঞানীর সান্নিধ্য লাভ করবো বললেই লাভ করতে পারে না, তাঁর সান্নিধ্য লাভ করার জন্য তাকে অজ্ঞানের খোলস বা পোশাক ত্যাগ করতে হয়।
     এই এক অক্ষরের প্রশংসা ব্যতীত কবিদের কণ্ঠে দ্বিতীয় কিছুই থাকতে পারে না। সমস্ত প্রশংসায় বহুবিধরূপে সেই এক বিশ্বব্যাপী অক্ষরের জন্যই। তিনিই জ্যোতিরূপে –জ্ঞানরূপে- অগ্নিরূপে এই ভূমণ্ডলের নাথ বা প্রাণস্বরূপ। তিনিই সর্বব্যাপী পুরাণপুরুষ। আমিও সেই পরমপুরুষ- পরমাত্মা। তাই তো আমি তাঁর –ই কেবল প্রশংসা করি- জ্ঞানে-বিজ্ঞানে-সাহিত্য-কলা- কবিতায়।
     এক অক্ষরের দুটি রূপ একটা ভুতাত্মা অপরটি অন্তরাত্মা। কর্ম হলেন সেই ভুতাত্মা কিন্তু কারণাদির দ্বারা জীবাত্মাকে সবকিছু করাচ্ছেন। লৌহপিন্ড আগুনে পুড়ে যেমন নানান বস্তুর আকার প্রাপ্ত হয়, তেমনি ভুতাত্মা অন্তরাত্মার দ্বারা বিভিন্ন গুনে গুনাম্বিত হতে পারে। চৌরাশি লক্ষ প্রজাতির জীব জলে- স্থলে-অন্তরীক্ষে রয়েছে তা সকলি  এক অক্ষর বা আত্মার প্রকাশ। তাই মনে রাখতে হবে আত্মা-ব্রহ্ম বা সত্তার রূপ হল দুটি—মূর্ত ও  অমূর্ত। যা মূর্ত তা অসত্য, আর যা অমূর্ত তা সত্য- তাই অক্ষর। এই বিজ্ঞানময় অক্ষর পরমপুরুষ দুধের মধ্যে ঘৃতের মতন নিগুড় হয়ে জীবে জীবে বাস করেন। মনরূপ মন্থনদণ্ড দ্বারা সতত সেই পরমপুরুষের ধ্যান করা জীবের একান্ত কর্তব্য। এই এক অক্ষরের চিন্তা করতে করতেই মানুষ একমুখী হয়ে পড়েন। তখন তার মূর্ত ভাব বিনষ্ট হয়ে যায়। কোন আকারে আর সে আবদ্ধ হয়ে থাকতে পারে না। সে তখন মুক্ত হয়ে অমূর্ত ভাব নিয়ে পরমপুরুষের সাথে এক হয়ে পরমজ্ঞান বা অক্ষর জ্ঞানের অধিকারী হয়ে উঠে। তাই আমরা বিশ্বাস করি আর না করি, আমরা জ্ঞানে বা অজ্ঞানে সকলেই এক ব্রহ্ম বা এক অক্ষরের উপাসনা করে চলেছি নানাভাবে। যতক্ষন আমরা কথা বলি, ততক্ষন আমরা শ্বাস নিতে পারিনা। সেই শ্বাস বাক্যে তখন উৎসর্গীকৃত হয়। আবার যখন শ্বাস নিই তখন আমরা কথা বলতে পারি না।তখন সেই কথা শ্বাসে উৎসর্গীকৃত হয়। এই অনন্ত অমৃত প্রশংসা দ্বয় আমাদের জাগ্রত ও নিদ্রা অবস্থায় সর্বদা চলছে। এই আন্তর কর্ম যা বিশালের উদ্দেশ্যে, আমাদের সচেতন প্রয়াস ছাড়াই আপনিই অন্তরে ভিতরে ভিতরে হয়ে চলেছে। এখানে আমাদের কোন সচেতন প্রয়াস নেই। এই কর্মযজ্ঞ কে করছে—খোঁজ নিলেই জানতে পারবো এক অক্ষর ছাড়া দ্বিতীয় কেউ এই কর্মযজ্ঞের কর্তা নেয়। তাই বিশ্বকবির ভাষায় বলি----
একটি নমস্কারে প্রভু, একটি নমস্কারে
সকল দেহ লুটিয়ে পড়ুক তোমার এ সংসারে।
হংস যেমন মানস-যাত্রী তেমনি সারা দিবস রাত্রি
একটি নমস্কারে প্রভু, একটি নমস্কারে
সমস্ত প্রাণ উড়ে চলুক,মহামরণ পারে।
[জয় বিশ্বমানব শিক্ষার জয়]                                                         


No comments:

Post a Comment