বিশ্বমানব শিক্ষায় পবিত্র কুরআনের আলো। [ সুরা—৩ আলে- ইমরান—৪৬ থেকে ৫০
আয়াত।]
৪৬) সে (ঈসা) দোলনায় থাকা অবস্থায়ও পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলবে এবং
সে হবে পুণ্যবানদের একজন।
মর্মার্থঃ—যখন কোন পুণ্যাত্মা মায়া দেহধারণ করেন ঈশ্বরের শক্তি নিয়ে তখন তাঁর
শৈশব- কৈশোর – যৌবন সব অবস্থাতেই সমান চেতনা শক্তি কাজ করে, সাধারণ মানুষ এই
পুণ্যাত্মার লীলা বুঝতে সক্ষম হয় না। এসব পুণ্যাত্মার আগমন হয় মানুষকে সত্যজ্ঞানের আলোতে আলোকিত করার
জন্য। এই সত্য জানানোর জন্য এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।
৪৭) সে
বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কোন কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি, আমার সন্তান হবে
কিভাবে? তিনি (আল্লাহ্ ) বললেন, এভাবেই। আল্লাহ্ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনি যখন
কিছু স্থির করেন তখন বলেন ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়।
মর্মার্থঃ—পুণ্যাত্মাদের এই পৃথিবীর বুকে দেহ ধারণ করার জন্য কোন পুরুষ বা
নারীর দেহের আশ্রয় নিতে হয় না, কেবল দেহ ধারণ করার জন্য একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে
হয়। এই পরিবেশের সকলেই হয় পবিত্র, তাদের মাতৃগর্ভও হয় মায়ার আশ্রয়ে, তাই তাদেরকে
মাতৃগর্ভেও থাকতে হয় না এবং মাতৃ যোনিকে আশ্রয় করেও জন্ম নিতে হয় না। সাধারণ
মানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়েই তাদের জন্ম হয়ে যায় অলৌকিক শক্তির প্রভাবে কোন এক
মনোনীত বিশেষ পরিবারে। ঐশ্বরিক শক্তির প্রভাবেই এই জগতের সবকিছু সৃষ্টি হচ্ছে
কিন্তু সাধারণ মানুষের জ্ঞানে ও দৃষ্টিতে তা পরিলক্ষিত হয় না, তাই ভাবে সবকিছুর
কর্তা মানুষ।
৪৮) আর তিনি (আল্লাহ্ ) তাকে
শিক্ষা দেবেন কিতাব, প্রজ্ঞা, তওরাত ও ইঞ্জিল।
মর্মার্থঃ—ঈশ্বরের মন থেকে যাদের সৃষ্টি হয় এই পৃথিবীতে, তারা জন্মসিদ্ধ
পুরুষ। তাদেরকে অবতীর্ণ হয়ে আর এই জগতের কোন শিক্ষায় গ্রহণ করতে হয় না, সব জ্ঞান-
বিজ্ঞান নিয়েই তাঁদের আবির্ভাব ঘটে। ঈশ্বর তাঁদেরকে জ্ঞানের গ্রন্থ, প্রজ্ঞা,
তওরাত, ইঞ্জিল ইত্যাদি পুরাণ পুরুষের সাথে যুক্ত করেই প্রেরণ করেন,
জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো দিয়ে পৃথিবীর বুক থেকে কিছু আবর্জনা সরিয়ে ফেলার জন্য।
৪৯) এবং ( তিনি) বনী ইস্রাঈলদের
জন্য তাকে রসুল করবেন। সে বলবে, আমি তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমাদের কাছে
নিদর্শন এনেছি। আমি তোমাদের জন্য মাটি দ্বারা একটি পাখি সদৃশ আকৃতি গঠন করব। অতঃপর
আমি তাতে ফুঁ দেব, ফলে আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে সেটা পাখি হয়ে যাবে। আমি জন্মান্ধ ও
কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্তকে নিরাময় করব এবং আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে মৃতকে জীবন্ত করব। আর
তোমরা তোমাদের গৃহে যা আহার কর ও জমা করে রাখ তা তোমাদেরকে বলে দেব; এতে তোমাদের
জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।
মর্মার্থঃ—রসূল হচ্ছেন ঈশ্বরের প্রেরিত এক আলোক বর্তিকা। এই আলোক বর্তিকাকে
যারা মানুষ ভাববে তারা তাঁর জ্ঞান- বিজ্ঞানের জগৎ দেখতে পাবে না। এই আয়াতে রসূল এই
পৃথিবীর বুকে ভবিষ্যতে যা ঘটবে তার নিদর্শন প্রদর্শন করেছেন। জ্ঞানীরা তা উপলব্ধি
করেই আধুনিক বিজ্ঞানের আলোতে আলোকিত করে তোলেন মহাকাশ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান,
দূরদর্শনের মতো আলোক বিজ্ঞান ইত্যাদি। রসূল এসে কেবল ঈশ্বরের আদেশে বিজ্ঞানের বীজ
ছড়িয়ে দিয়ে যান কিছু ক্ষেত্রে, সেই বীজই বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয় সময়ের তালে তালে। ৫০) আর আমি এসেছি আমার কাছে যে
তওরাত আছে, তার সমর্থকরূপে ও তোমাদের জন্য যা নিষিদ্ধ ছিল তার কতকগুলোকে বৈধ করতে,
এবং আমি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের নিকট নিদর্শন এনেছি, সুতরাং
আল্লাহ্কে ভয় কর, আর আমাকে অনুসরণ কর।
মর্মার্থঃ—রসূল আল্লাহ্র আলোক বর্তিকা হয়ে আসেন, পূরানোকে নূতন রূপ দিয়ে, এই
পৃথিবীর পরিবেশকে নব রূপে সাজিয়ে তোলার জন্য। তিনি নিজেকে অনুসরণ করার কথা বলেন, এর অর্থ
তিনি যে জ্ঞানের আলো নিয়ে এসেছেন তাকে অনুসরণ করতে বলেন এবং সেই জ্ঞান দিয়ে নিজের
অন্তর্জগতকে শাসন করে এই পৃথিবীর বুকে শান্তির পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে বলেন। তাঁরা সহজ
সরল পথে বিশাল জ্ঞানের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে যান, মানুষের অন্তর থেকে কতকগুলি
আবর্জনাকে পরিষ্কার করে দিয়ে ও অন্তরে জ্ঞানের আলো জ্বেলে দিয়ে এক অনাবিল শাস্তির
জগত প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করে দিয়ে যান। এর ফলে মানুষের সংকীর্ণ হৃদয়
প্রসারিত হতে থাকে মহাকাশের ন্যায় বিশাল হয়ে, তখনি মানুষের অন্তর থেকে সমস্ত কুসংস্কার ছিন্ন- ভিন্ন হয়ে যায় এবং মানব
জীবন নব সূর্যের আলোকে আলোকিত হয়।
জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের আলোর জয়।
No comments:
Post a Comment