[ গীতার বাণী বা
তত্ত্বকথা বিজ্ঞানের আলোতে আলোকিত। তাই শ্রীশ্রীগীতা মানব জীবনের জয়গান। গীতার
সংগীত বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণ সরাসরি তাঁর শিষ্য, সখা ও ভক্তকে গীতাগ্রন্থে উপদেশ দেন,
যা বিশ্বের কোন শাস্ত্রগ্রন্থে পাওয়া যায় না। গীতাশাস্ত্র এই কারণে জীবন্ত দর্শন।
অর্জ্জুনের পাশে জ্ঞানমুদ্রাধারী গীতামৃতদোহনকারী ভগবানকে দেখতে হলে মানবজাতিকে
গীতার আশ্রয় নিতেই হবে। আজকে গীতার দ্বিতীয় অধ্যায় সাংখ্যযোগের ১১ থেকে
১৫ শ্লোক সকলের পাঠের জন্য প্রদত্ত হল।]
১১)অশোচ্যানম্বশোচস্ত্বং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে। গতাসূনগতাসূংশ্চ নানুশোচন্তি
পণ্ডিতাঃ। অনুবাদঃ-- শ্রীভগবান অর্জ্জুনকে বললেন—যাদের জন্য শোক করার কোন কারণ
নেই, তুমি তাদের জন্য শোক করছ, আবার কথা বলছ পণ্ডিতের মত। কিন্তু যারা
তত্ত্বজ্ঞানী, তাঁরা কি মৃত, কি জীবিত কারোর জন্যই শোক করেন না।
১২) ন ত্বেবাহং জাতু নাসং ন ত্বং
নেমে জনাধিপাঃ। ন চৈব ন ভবিষ্যামঃ সর্বে বয়মতঃ পরম।। অনুবাদঃ--আমি যে পুর্ব্বে
কখনো ছিলাম না, বা তুমি ছিলে না, বা এই রাজন্যবর্গ ছিলেন না, এমন নয়। পরেও যে আমরা
সকলে থাকব না তাও নয়।
১৩) দেহিনোহস্মিন যথা দেহে কৌমারং যৌবনং জরা। তথা
দেহান্তরপ্রাপ্তির্ধীরস্তত্র ন মুহ্যতি।। অনুবাদঃ-- জীবের এই দেহেই যেমন বাল্য,
যৌবন ও বার্ধক্য দেখা দেয়, তেমনই দেহান্তর প্রাপ্তি বা মৃত্যু ঘটে। জ্ঞানী ব্যক্তি
তাতে মোহগ্রস্থ হন না।
১৪) মাত্রাস্পর্শাস্তু কৌন্তেয় শীতোষ্ণসুখদুংখদাঃ।
আগমাপায়িনোহনিত্যাস্তাংস্তিতিক্ষস্ব ভারত।। অনুবাদঃ-- হে কৌন্তেয়, ইন্দ্রিয়ের
সঙ্গে রূপ- রস প্রভৃতি বিষয়ের সংযোগের ফলেই শীত- উষ্ণ, সুখ- দুঃখ প্রভৃতি অনুভূতির
সৃষ্টি করে। সেগুলির উৎপত্তি আছে, বিনাশ আছে। সুতরাং সেগুলি অনিত্য। হে ভারত, তা
সহ্য কর।
১৫) যং হি ন ব্যথয়ন্ত্যেতে পুরুষং পুরুষর্ষভ। সমদুঃখসুখং ধীরং সোহমৃতত্বায়
কল্পতে।। অনুবাদঃ-- হে পুরুষশ্রেষ্ঠ, যে জ্ঞানী ব্যক্তি সুখ ও দুঃখকে সমান ভাবে
গ্রহণ করেন তাঁকে শীত –গ্রীষ্মাদি ব্যথা দিতে পারে না। তিনি অমৃতত্ত্ব লাভে সমর্থ
হন।
[ আমরা কথায় কথায় হত্যা হানাহানিতে লিপ্ত হই। কেউ মারা গেলে শোকে কাতর হয়ে
উঠি। এগুলি সবই অনিত্য মায়ার খেলা। এখানে আমরা সকলেই ছিলাম- আছি ও থাকবো, এতে কোন
ভুল নেই, তবে বার বার রূপের পরিবর্তন ঘটতে থাকবে। উন্নত মানুষ, অবনত মানুষ, পশু-
পক্ষী- গাছ-পালা বিভিন্ন যোনীতে দেহ—গঠন করতে হয় এক দেহ ত্যাগ করে অন্য দেহ পাবার
জন্য। এই জন্মের কর্মফল অনুযায়ী উন্নত- অবনত জীবন লাভ হতেই থাকে। যেমন বাল্য, যৌবন
ও বার্ধক্যকে কেউ রোধ করতে পারে না তেমনি মৃত্যুকেও কেউ রোধ করে রাখতে পারে না।
কার কিভাবে মৃত্যু হবে তাও কেউ জানে না। যার যে জন্য উৎপত্তি তার কাজ শেষ হলেই
তাকে দেহত্যাগ করতেই হবে নব দেহ ধারণ করার জন্য। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়।]
No comments:
Post a Comment