Wednesday, 27 December 2017

গীতা দ্বিতীয় অধ্যায় ১ থেকে ৩ শ্লোক

[পবিত্র গীতার প্রথম অধ্যায়ের পাঠ আমরা শেষ করেছি। আজ পুনঃ সাংখ্যযোগঃ দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করবো। আজকে দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১ থেকে ৩ পর্যন্ত শ্লোকের ব্যাখ্যা –সহ পাঠ করবো। আমরা কলি যুগের বস্তু বিজ্ঞানের যুগে বসে গীতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারছি না। গীতা মানব-বোমা তৈরী করে মানুষ খুনের পক্ষপাতী নয়। গীতা এমন এক মানবিক পারমাণবিক অস্ত্র যার আঘাতে মানুষের মানবিক চৈতন্যের উদয় হয় এবং মানুষ দেবত্বের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। ধর্ম্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রের পবিত্র ময়দানে আঠারো অক্ষৌহিণী সৈন্য উপস্থিত হয়েছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জ্জুনকে কেন্দ্রভূমিতে রেখে দেবত্বের অভিমুখে যাত্রা করার জন্য গীতা রথের উপর ভর করে।
অর্জ্জুন ধর্মযুদ্ধক্ষেত্রে সকল অমানবিক যোদ্ধা- বীর- রথী- মহারথীদের দেখে বিষণ্ণ হয়ে পড়েছেন। এইসব বীরদের সামাজিক মর্যাদা বিশাল হলেও হৃদয় বিশাল নয়। সারা রাষ্ট্র অমানুষে পরিপুর্ণ হয়ে গেছে। তাঁরাই আবার তাঁর আত্মীয়- স্বজন- বন্ধু, কিভাবে তাঁদের সাথে তিনি মানুষ হয়ে ধর্মযুদ্ধ করবেন? তাই তিনি মোহিত হয়ে তাঁদের জন্যই অশ্রু বিসর্জন করছেনসেইসাথে যুদ্ধ না করারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেছেন। এই অবস্থায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর পাশে থেকে উৎসাহ দিয়ে চলেছেন। কারণ অর্জ্জুন যদি এই ধর্মযুদ্ধে এই অমানুষগুলোকে বধ না করেন তবে এই অমানুষের সংখ্যা পৃথিবীর বুকে বাড়তেই থাকবে। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার জন্যই এইসব আগাছা স্বরূপ মানুষের আকৃতি অমানুষগুলির বংশকে লোপ করতে হবে। আজকের পাঠ ১ থেকে ৩ শ্লোক পর্যন্ত প্রদত্ত হলো। আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করে মতামত লিখুন এবং গীতা যে প্রত্যেক মানুষের জীবন দর্শন তা জেনে কেবল গীতার প্রচার করতে থাকেন। এতেই সকলের মঙ্গল হবে।
১)  সঞ্জয় উবাচ—ত্বং তথা কৃপায়াবিষ্টমশ্রুপূর্ণাকুলেক্ষণম। বিষীদন্তমিদং বাক্যমুবাচ মধুসূদন।। অনুবাদঃ--সঞ্জয় বললেনমোহাবিষ্ট, অশ্রুপূর্ণনয়ন ও বিষণ্ণ অর্জ্জুনকে মধুসূদন এই কথা বললেন।
২) শ্রীভগবানুবাচ—কুতস্ত্বা কশ্মলমিদং বিষমে সমুপস্থিতম। অনার্য্যজুষ্টমস্বর্গ্যমকীর্ত্তিকরমর্জ্জুন।। অনুবাদঃ- শ্রীভগবান বললেনহে অর্জ্জুন, এই সংকটকালে কোথা থেকে তোমার এই অনার্য্যজনোচিত, স্বর্গের প্রতিবন্ধক ও অকীর্ত্তিকর মোহ উপস্থিত হল?
৩) ক্লৈবং মাস্ম* গমঃ পার্থ নৈতৎ ত্বয্যুপপদ্যতে। ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্ব্বল্যং ত্যক্ত্বোতিষ্ঠ পরন্তপ।। অনুবাদঃ-- হে পার্থ, ক্লীবত্ব প্রাপ্ত হয়ো না। এই রূপ কাতরতা তোমার সাজে না। হে পরন্ততপ, হৃদয়ের তুচ্ছ দুর্ব্বলতা পরিত্যাগ করে ওঠো।
[ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জ্জুনকে সৎ কাজের জন্য উৎসাহ প্রদান করছেন অসৎকে ধ্বংস করার জন্য। আর্য্যদের কেনো অনার্য্যদের ন্যায় মোহ আসবে? যারা অনার্য্যজাতি তাঁদের এই পার্থিব জগতের চাকচিক্যতার প্রতি মোহ থাকে কিন্তু যারা আর্য্যত্ব লাভ করেছেন তাঁদের অসতের প্রতি তো মোহ আসার কথা নয়? জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়।]



No comments:

Post a Comment