Wednesday, 27 December 2017

গীতা প্রথম অধ্যায় ৩৭ থেকে ৪৬ শ্লোক

[ গীতার প্রথম অধ্যায়ে ৪৬ টি শ্লোক আছে, প্রত্যেকটি শ্লোক আমাদের জীবনে মহামূল্যবান। অনেক জ্ঞানী –গুণী ব্যক্তিরাও গীতার প্রথম অধ্যায়কে গুরুত্ব দেন না। অর্জ্জুন তাঁর সমগ্র সমাজ ও রাষ্ট্রের দাবী পূর্ণ করতে কৃতসংকল্প হয়ে ধর্মযুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়েছেন। তখনি তাঁর অন্তরে জেগে উঠলো পারিবারিক স্নেহের দাবী। এই দাবী বড় প্রবল দাবী। তাঁর চিত্তের তলভূমি পর্যন্ত তাতে আলোড়িত হল। এই দুটি দাবীর বিরোধীতা ( conflict of values) অর্জ্জুনকে একেবারে ভেঙ্গে চুরমার করে ফেললো। আমাদের সকল মানুষের সকল দুঃখের মূল কারণ এটাই। যার জীবনের কুরুক্ষেত্র বা কর্মক্ষেত্র যতখানি বিস্তৃত, তাঁর দুঃখের বা বিষাদের তীব্রতা তদনুপাতে কম বা বেশী দেখা যায়। মানুষের চিরন্তন দুঃখ বা বিষাদের ছক হচ্ছে শ্রীশ্রীগীতার প্রথম অধ্যায় ‘ অর্জ্জুন- বিষাদ –যোগঃ’। বিশ্বের প্রত্যেক রাষ্ট্রের সমাজে- পরিবারে এই বিষাদ ও দুঃখ যেমন চিরন্তন সত্য, তেমনি এই দুঃখ ও বিষাদের রাজত্ব থেকে মুক্তির খোঁজে সকলেই ছূটে চলেছেন এক অজানা সংগ্রামক্ষেত্রে আনন্দসাগরে ভেসে থাকার জন্য, এটাও চিরন্তন সত্য। আঠারো অক্ষৌহিণী সৈন্য ধর্ম্মক্ষেত্রে ও কুরুক্ষেত্রে উপস্থিত হয়েছেন সেই অজানা আনন্দসাগরের সন্ধানে বিষাদ ও দুঃখ থেকে মুক্ত হবার জন্য।  আজকে ৩৭ থেকে ৪৬ শ্লোক সকলের পাঠের জন্য প্রদত্ত হলো। ]
৩৭—৩৮) যদ্যপ্যেতে ন পশ্যন্তি লোভাপহচেতসঃ। কুলক্ষয়কৃতং দোষং মিত্রদ্রোহে চ পাতকম।।৩৭।। কথং ন জ্ঞেয়মস্মাভিঃ পাপাদস্মান্নিবর্ত্তিতুম। কুলক্ষয়কৃতং দোষং প্রপশ্যদ্ভির্জনার্দ্দন।।৩৮।। অনুবাদঃ--অর্জ্জুন বললেন—যদিও এরা লোভে জ্ঞান সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলে কুলক্ষয়জনিত দোষ এবং বান্ধবনাশে পাপ দেখতে পাচ্ছেন না, তবু হে জনার্দন, আমরা কুলক্ষয়জনিত দোষ দেখেও সে পাপ থেকে নিবৃত্ত হব না কেন?
৩৯)কুলক্ষয়ে প্রণশ্যন্তি কুলধর্ম্মাঃ সনাতনাঃ। ধর্ম্মে নষ্টে কুলং কৃৎস্নমধর্ম্মোহভিবত্যুত।। অনুবাদঃ-- কুলক্ষয় হলে সনাতন কুলধর্ম্ম নষ্ট হয়। ধর্ম্ম নষ্ট হলে সমগ্র কুলই অধর্ম্মে গ্রাস করে।
৪০) অধর্ম্মাভিভবাৎ কৃষ্ণ প্রদুষ্যন্তি কুলস্ত্রিয়ঃ। স্ত্রীষু দুষ্টাসু বার্ষ্ণেয় জায়তে বর্ণসঙ্কর।। অনুবাদঃ--হে বৃষ্ণিবংশসম্ভূত কৃষ্ণ, কুল অধর্ম্মগ্রস্ত হলে কুলনারীগণ দূষিতা হয় এবং কুলনারীগণ দুষ্টা হলে বর্ণসঙ্কর জন্মে।
৪১)সঙ্করো নরকায়ৈব কুলঘ্নানাং কুলস্য চ। পতন্তি পিতরো হ্যেষাং লুপ্তপিণ্ডোদকক্রিয়াঃ।। অনুবাদঃ-- বর্ণসংকর কুলনাশকদের এবং বংশজাত সন্তানের নরকের কারণ হয়। সেই জন্য তাদের পিতৃপুরুষগণ পিণ্ডলোপ ও তর্পণের অভাবে নরকগামী হয়ে থাকেন।
৪২)দোষৈরেতৈঃ কুলঘ্নানাং বর্ণসংকরকারকৈঃ। উৎসাদ্যন্তে জাতিধর্ম্মাঃ কুলধর্ম্মাশ্চ শাশ্বতাঃ।। অনুবাদঃ-- কুলনাশকারীদের এই সব বর্ণসংকরকারক দোষে সনাতন জাতিধর্ম্ম ও কুলধর্ম্ম সমূলে বিনষ্ট হয়।
৪৩)উৎসন্নকুলধর্ম্মাণাং মনুষ্যাণাং জনার্দ্দ। নরকেহনিয়তং বাসো ভবতীত্যনুশুশ্রুম।। অনুবাদঃ-- যাদের কুলধর্ম্ম বিনষ্ট হয়েছে সেই সকল লোকের সুদীর্ঘ নরকবাস হয়—আচার্য্যদের মুখে আমি শুনেছি।
৪৪)অহো বত মহৎ পাপং কর্ত্ত্বং ব্যবসিতা বয়ম। যদ রাজ্যসুখলোভেন হন্তুং স্বজনমুদ্যতাঃ।। অনুবাদঃ-- হায়, আমরা কি ভীষণ পাপ কার্য্য করতেই না উদ্যত হয়েছি, যেহেতু আমরা রাজ্যলোভে ও ঐহিক সুখভোগের আশায় আত্মীয়গণকে বধ করতে উদ্যত হয়েছি।
৪৫) যদি মামপ্রতীকারমশস্ত্রং শস্ত্রপাণয়ঃ। ধার্ত্তরাষ্ট্রা রণে হন্যুস্তন্মে ক্ষেমতরং ভবেৎ।। অনুবাদঃ-- আমি শস্ত্র ত্যাগ করে প্রতিকারে বিরত হয়ে থাকব, তাতে যদি সশস্ত্র দুর্যোধনাদি আমাকে নিরস্ত্র ও যুদ্ধ বিমুখ দেখে বধও করে, তাও আমার পক্ষে অধিকতর মঙ্গলজনক হবে।
৪৬) এবমুক্ত্বার্জ্জুনঃ শঙ্খে রথোপস্থ উপাবিশৎ। বিসৃজ্য সশরং চাপং শোকসংবিগ্নমানসঃ।। অনুবাদঃ-- সঞ্জয় বললেন, শোকে একান্ত আকুল হয়ে অর্জ্জুন এই সমস্ত কথা বলে যুদ্ধক্ষেত্রে ধনুর্ব্বান পরিত্যাগ করে রথের উপরে বসে পড়লেন।
  ইতি অর্জ্জুন- বিষাদযোগ নামক প্রথম অধ্যায়।।
[ রাজ্যলোভে পদ লোভে মোগল আমল থেকেই সনাতন ধর্মের মহানরা কুলনাশকারী হয়ে উঠেছিলেন। সনাতন ধর্মের হিন্দুনারীরা নিজের ধর্ম ও কুল ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকেন। তাঁরা কেউ তখন ভাবতেও পারেন নি, তাঁরা কি পাপ করতে চলেছেন। একজন সনাতন ধর্মত্যাগী নারী কোটি কোটি সনাতন ধর্ম বিরোধী শত্রুর সৃষ্টি করেন এবং নিজের কুলের সর্বনাশ করে তাঁদের পুর্বপুরুষদের নরকগামী করেন। মহাত্মা অর্জ্জুন ছিলেন দূরদর্শী সম্পূর্ণ পুরুষ। তিনি জানতেন যুদ্ধে সৈনিকরা মারা গেলে বা পঙ্গু হয়ে গেলে তাঁদের স্ত্রী পরিবার অসহায় হয়ে বিধর্মীদের হাতে বন্দী হয়ে যায়, তখন তাঁরা আর নিজের সনাতন ধর্ম্ম রক্ষা করতে সক্ষম হন না। ক্ষত্রিয় নারীরা গীতার এই মহান বাণীর কথা জানতেন। তাই তাঁরা স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে নিজেও মৃত্যু বরণ করতেন। কিন্তু মৃত্যুকে দেখে সবায় ভয় করে, যারা ভীতু তাঁরা এই পথ অবলম্বন না করে নিজের সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে বিধর্মীদের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে তাঁদের বংশবিস্তার করতে সাহায্য- সহযোগিতা করেন। বর্তমানে আধুনিক নারীদের কুলনাশ করে বর্নসংকর সন্তান – সন্ততির জন্ম দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। সনাতন ধর্ম বিরোধী ছেলেরা ওঁত পেতে থাকছে এই সব মেয়েদের কুলনাশ করার জন্য এবং নরক ভর্তি করার জন্য। তাই সনাতন ধর্মের প্রত্যকের উচিত গীতাকে আশ্রয় করে নিজের জীবন দর্শন পবিত্র পথে গড়ে তোলা। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়।

No comments:

Post a Comment