Friday, 29 December 2017

গীতা দ্বিতীয় অধ্যায় ৪ থেকে ১০ শ্লোক

[পবিত্র গীতা পাঠ করলেই মানুষের হৃদয় পবিত্র- শ্রদ্ধাশীল- কোমল হয়ে উঠে। অধিকাংশ মানুষ এইসব গুণের অধিকারী হয়েই জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু গুরুর সৎ উপদেশ না পাওয়ার জন্য সেসব গুণের প্রকাশ- বিকাশ তাঁদের জীবনে ঘটে না। তাই যারা বুদ্ধিমান তাঁরা শ্রীশ্রীগীতাকে সদগুরুর আসনে বসিয়ে তাঁর নিকট থেকে প্রতিনিয়ত উপদেশ গ্রহণ করেন এবং জীবনকে পবিত্র- শ্রদ্ধাশীল- কোমল করে ধরে রাখেন, সবার মঙ্গলার্থে উৎসর্গ করার জন্য। আজকে গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়—সাংখ্যযোগঃ এর  ৪ থেকে ১০ পর্যন্ত শ্লোক নিয়ে আলোচনা করবো।
অর্জ্জুন মহাবীর কিন্তু তাঁর অন্তর অতি শ্রদ্ধাশীল, কোমল ও পবিত্র। তিনি ভাবতেও পারছেন না কিভাবে তিনি পূজনীয় ভীষ্ম ও দ্রোণের সঙ্গে বাণ দিয়ে যুদ্ধ করবেন। বর্তমানকালে আমরা প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখতে পাচ্ছি, ছেলে মা –বাবাকে, ভাইপো কাকা, জ্যেঠাকে, ছাত্র শিক্ষককে সামান্য স্বার্থের জন্য খুন করছেএমনকি স্ত্রী সামান্য স্বার্থের জন্য স্বামী- শ্বশুর- শাশুরীকে খুন করছে। শিক্ষার অভাবহেতু মানবিক মুল্যবোধ একেবারে তলানিতে চলে গেছে। কতটা মানবিক মুল্যবোধ তলানিতে গেলে মানুষ তীর্থযাত্রীদের খুন করতে দ্বিধা করে না ভেবে দেখুন। এরা যদি শ্রীশ্রীগীতার শিক্ষা ও জ্ঞান পেতো তবে কখনোও মানুষ খুন তো দূরের কথা একটা গাছের পাতাকেও ছিঁড়তে গিয়ে বিবেকের তাড়নায় ছটপট করতো। আজকের পাঠ সকলের জন্য দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৪ থেকে ১০ পর্যন্ত। আশা করি গীতা পাঠ করে আপনারা ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হলে আপনাদেরও অন্তর মহাত্মা অর্জুনের ন্যায় হয়ে উঠবে এবং বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের করুণাধারা আপনাদের জীবনে বর্ষিত হবে।
৪) অর্জ্জুন উবাচঃ-কথং ভীস্মমহং সংখ্যে দ্রোণঞ্চ মধুসূদন। ইষুভিঃ প্রতিযোৎস্যামি পূজার্হাবরিসূদন।। অনুবাদঃ- ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অর্জ্জুন বললেন—হে শত্রুদমনকারী মধুসূদন, যুদ্ধে কি করে আমি পূজনীয় ভীষ্ম ও দ্রোণের সঙ্গে বাণ দিয়ে প্রতিযুদ্ধ করবো?
৫)গুরূনহত্বা হি মহানুভাবান। শ্রেয়ো ভোক্তুং ভৈক্ষ্যমপীহ লোকে। হত্বার্থকামাংস্তু গুরূনিহৈব ভুঞ্জীয় ভোগান রুধিরপ্রদিগ্ধান।। অনুদাবঃ-- মহানুভব গুরুজনদিগকে বধ না করে ইহলোকে ভিক্ষান্ন ভোজন করাও ভাল। গুরুজনদিগকে বধ করে ইহলোকে যে অর্থ ও কাম ভোগ করবো, তা তো হবে [ গুরুজনদের] রুধিরলিপ্ত।
৬)  ন চৈতদ্বিদ্মঃ কতরন্নো গরীয়োযদ্বা জয়েম যদি বা নো জয়েয়ুঃ। যানেব হত্বা ন জিজীবিষামস্তেহস্থতাঃ প্রমুখে ধার্তরাষ্ট্রাঃ।। ৬।। অনুবাদঃ—যদি বা জয়ী হই, অথবা আমাদিগকে যদি এঁরা জয় করেন এই দুইটির মধ্যে যে কোনটি শ্রেয়স্কর তা যে বুঝতে পারছি না। যাঁদের বধ করে বেঁচে থাকতে চাই নে, সেই ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণ তো আমার সম্মুখেই রয়েছেন।
৭)কার্পণ্যদোষোপহতস্বভাবঃ পৃচ্ছামি ত্বাং ধর্মসংমূঢ়তেতাঃ। যচ্ছ্রেয়ঃ স্যান্নিশ্চিতং ব্রুহি তন্মে শিষ্যস্তেহহং শাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম।। অনুবাদঃ-- যা আমার পক্ষে নিশ্চিত শ্রেয়ঃ আমায় বল। আমি তোমার শিষ্য, তোমার শরণাগত, আমায় উপদেশ দাও।
৮) ন হি প্রপশ্যামি মমাপনুদ্যাদ যচ্ছোকমুচ্ছোষণমিন্দ্রিয়াণাম। অবাপ্য ভূমাবসপত্নমৃদ্ধং রাজ্যং সুরাণামপি চাধিপত্যম।। অনুবাদঃ-পৃথিবীতে নিষ্কণ্টক সমৃদ্ধ রাজ্য এবং সুর- লোকের আধিপত্যও যদি আমি পাই, তাহলেও আমি এমন কিছু দেখি না যা আমার এই ইন্দ্রিয়শোষণকর শোক দূর করতে পারবে।
৯) সঞ্জয় উবাচঃ—এবমুক্ত্বা হৃষীকেশং গুড়াকেশঃ পরন্তপ। ন যোৎস্য ইতি গোবিন্দমুক্ত্বা তূষ্ণীং বভূব হ।। অনুবাদঃ-- সঞ্জয় বললেন—শত্রুবিজয়ী জিতনিদ্র অর্জ্জুন হৃষীকেশ গোবিন্দকে এই কথা বলে শেষে বললেন, “ আমি যুদ্ধ করব না”। তারপর তিনি নীরব হলেন।
১০) তমুবাচ হৃষীকেশঃ প্রহসন্নিব ভারত। সেনয়োরুভয়োর্মধ্যে বিষীদন্তমিদং বচঃ।। অনুবাদঃ-- হে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র, শ্রীকৃষ্ণ তখন উভয় সেনার মধ্যে বিষাদগ্রস্ত অর্জ্জুনকে যেন ঈষৎ হেসেই এই কথাগুলি বললেন।
[ অর্জুন সহ পাণ্ডবদের উপর কত অত্যাচার করেছেন দুর্যোধন- দুঃশাসন, তবুও অর্জ্জুনের মহৎ হৃদয় তাঁদেরকে বধ করে বেঁচে থাকার কোন সুখ খুঁজে পাচ্ছেন না। বর্তমান রাজনীতিতে কি ঘটছে ভোটে জেতার জন্য তা নিশ্চয় আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। পদের লোভে সাধারণ মানুষ যারা কোনদিন কারো ক্ষতি করেন নি, তাদেরকেও বধ করতে ক্যাডাররা কোনরূপ দ্বিধা করেন না। এই রূপ নেতাদের অধীনে রাষ্ট্র থাকলে সেই রাষ্ট্রে কোন প্রজায় নিরাপদে জীবন- যাপন করতে পারেন না। গীতা এই পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের এক মহামূল্যবান সংবিধান। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়।]

No comments:

Post a Comment