Thursday, 21 December 2017

বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান ১৪৫ তাং ২১/ ১২/ ২০১৭

আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ গো- সেবার আদর্শ – মহারাজ বিক্রমাদিত্য।]
পরদুঃখকাতর, পরম উদার সম্রাট বিক্রমাদিত্য প্রজার কষ্টের খোঁজ নিতে প্রত্যহ ঘুরে দেখতেন। একদিন মহারাজ একটি গোরুর কান্নার ধ্বনি শুনতে পান। সন্ধ্যার সময় সম্রাট তাঁর ঘোড়াকে কান্নার আওয়াজের দিকে এগিয়ে দিলেন। তখন বর্ষাকাল, গিয়ে দেখেন একটি নালার কাদায় গোরুটি আটকে রয়েছে। তার চারটি পা পেট পর্যন্ত কাদায় ডুবে ছিল। নড়তে না পেরে সে হাঁক পাড়ছিল। মহারাজ বিক্রমাদিত্য ঘোড়াকে খুলে দিলেন। কাদায় নেমে তিনি গোরুকে তোলার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু একলা গোরুকে টেনে তোলা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। অন্ধকারে কাজটি আরও কঠিন হয়ে উঠলো। গোরুর হাঁক শুনে এক সিংহ তাকে খাবার জন্য এসে পড়ে। বিক্রমাদিত্য তখন তাঁর তরোয়াল ওঠালেন। গোরুটিকে সকাল পর্যন্ত রক্ষা করা প্রয়োজন ছিল। সিংহ আক্রমন করছিল এবং তিনি তাকে আটকাচ্ছিলেন।
  কাছেই একটা বড় বটগাছ ছিল। তার ওপর থেকে একটি শুকপাখির আওয়াজ শোনা গেল—‘রাজন! গোরুটির মৃত্যু সময় তো এসে গেছে। সে যদি আজ না মরে, তবে কালকের মধ্যে এই কাদায় ডুবে সে মারা যাবে। আপনি বৃথা তার জন্য কেন প্রাণপাত করছেন? এখন এই সিংহ একা আছে। কিছু পরে সিংহী বা অন্য বন্য জন্তু এসে যেতে পারে। সুতরাং আপনি তাড়াতাড়ি এই স্থান ছেড়ে কোনো সুরক্ষিত স্থানে চলে যান। এই বটগাছের ওপর চড়লেও আপনি সুরক্ষিত থাকতে পারেন’।
মহারাজ বললেন—‘ শুক! আমার প্রতি তোমার এই করুণার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ; কিন্তু তুমি আমাকে অধর্মের পথ দেখিও না। নিজের প্রাণরক্ষার চেষ্টা তো কীট- পতঙ্গও করে। অন্যের জন্য যে জীবনদান করতে পারে, তার জীবন ধন্য। যার মধ্যে দয়া নেই, তার সব পুণ্যকর্মই বৃথা। আমাকে আমার নিজ শক্তি অনুযায়ী চেষ্টা করা উচিত। এই গোরুকে রক্ষা করা আমার ধর্ম। আমি প্রাণ দিয়েও একে রক্ষা করার চেষ্টা করব’।
  সারারাত সম্রাট বিক্রমাদিত্য গোরু রক্ষার জন্য সেখানে থাকলেন। কিন্তু সূর্যোদয়ের আগে যখন আলো ফুটতে লাগল, তখন তাঁর সামনে সিংহ দেবরাজ ইন্দ্রের রূপে দণ্ডায়মান হলেন। শুকের রূপধারণকারী ধর্মও নিজরূপে উপস্থিত হলেন। সাক্ষাৎ ভূদেবী গোরুরূপে রাজাকে পরীক্ষা করার জন্য মিলিত হয়েছিলেন। তিনিও তাঁকে দিব্যরূপে দর্শনদান করেন। গোমাতা ও বিশ্বমাতার মধ্যে কোন তফাৎ নেই। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়।



No comments:

Post a Comment