বিশ্বমানব
শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান(১৫০) তারিখঃ—২৬/ ১২/ ২০১৭
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করে প্রত্যেকেই মনুষ্যত্ব লাভ করে মানুষ হবে,
অপরের মনুষ্যত্ব লাভের সহায়ক হবে। এটাই মানুষের শ্রেষ্ঠ বেদযজ্ঞ ও সেবা।]
মানব জীবনের পরিপূর্ণতা মনুষ্যত্ব লাভে।
মনুষ্যত্ব লাভ করতে পাঁচটি গুণ অর্জন করতে হবে। অহিংসা, অচৌর্য, শুচিতা, সংযম ও
সত্য। কাকেও হিংসা করবে না। কারও দ্রব্য চুরি করবে না। দেহ ও মন পবিত্র রাখবে।
নৈতিক চরিত্রে সংযম থাকবে। কার্যে ও বাক্যে কখনও অসত্যতার স্পর্শ থাকবে না। মানুষ
হিসাবে সকল মানুষের এই একটি ধর্ম—মনুষ্যত্ব লাভ। প্রত্যেকেই মনুষ্যত্ব লাভ করে
মানুষ হবে, অপরের মনুষ্যত্ব লাভের সহায়ক হবে। এটাই তো মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ বেদযজ্ঞ
ও কর্মযজ্ঞ।
মনুষ্যত্ব লাভের পর আসবে ভাগবত জীবন। নিখিল
বিশ্বের মূলে একটি বিরাট শক্তি আছে। সেই শক্তি চৈতন্যময় করুণাময়। তাঁর সঙ্গে যুক্ততায়
জীবের আনন্দময়তা। সেই পরম তত্ত্ব বস্তুর সাথে যোগসূত্র রেখে চলতে হবে বেদযজ্ঞের
মাধ্যমে। এর নামই ভাগবত- জীবন, এরই নাম বেদের জীবন।
ভাগবত- জীবন বা বেদময় জীবন লাভ হলেই মানুষ
ঈশ্বরপ্রেমে ও মানবপ্রেমে ভরপুর হয়ে যায়। এই ভূমিতে পৌঁছানোই মানব জীবনের চরমতা,
ভূমিরূপ দেহ তখন ভূমায় পরিণত হয়। এই জীবন লাভ হলে মানুষের ব্রত হয় বিশ্বের কল্যাণ
সাধন, বিশ্বমানব শিক্ষার কর্মী হয়ে। আর তখন তাকে আর এই জগতের কোন ধর্ম স্পর্শ করতে
পারে না। সেই অবস্থায় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণীই কেবল তাঁর জীবনে প্রতিফলিত হয়---
“ সর্ব্বধর্ম্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ। অহং ত্বাং সর্ব্ব পাপেভ্যো
মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ”।। সর্ব্ব ধর্ম্ম পরিত্যাগ করে তুমি একমাত্র আমারই শরণাপন্ন
হও। আমি তোমাকে সকল পাপ, সকল অপরাধ থেকে মুক্তি দেব। শোক করো না।
সকলেই যখন এক ঈশ্বরের আশ্রয়েই রয়েছেন তখন
তাঁকে ঘিরে মনুষ্যত্ব ছাড়া দ্বিতীয় কোন ধর্মের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। সেই জন্যই
বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণ জাগতিক মানব সৃষ্ট ধর্ম ত্যাগ করে কেবল ঈশ্বরের শরণাপন্ন হবার
উপদেশ দিয়েছেন। জন্মহেতু মানুষে মানুষে কোন ভেদ আছে ইহা সম্পূর্ণ অসত্য। গুণ ও
কর্মানুসারেই মানুষের শ্রেষ্ঠতা বা হীনতা। জাতিভেদ, ধর্মভেদ মানা কাকেও অস্পৃশ্য
মনে করা মনুষ্যত্বনাশক কুসংস্কার।
তাই কোনও সম্প্রদায়ের বা ধর্মের নিন্দা
চর্চা করার অর্থ নিজেকেই দুর্বল করে তোলা। প্রত্যেক সম্প্রদায় ও প্রত্যেক ব্যক্তি
একটি বিরাট বিশ্বযজ্ঞের অংশ সাধন করে চলেছেন জানতে বা অজানতে এক ঈশ্বরের আশ্রয়ে
থেকে। একই বৃক্ষের ফুলে সৌগন্ধ, পাতায় তিক্ততা, ফলে মিষ্টতা – কিন্তু বৃক্ষ একটিই।
বিভিন্নতা বিশ্বের বৈচিত্র্য। বহুত্বের মধ্যে একত্ব দর্শন, এটাই সনাতন ধর্মের
বা মানবিক ধর্মের বিশিষ্টতা। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়।
No comments:
Post a Comment