[ শ্রীগীতার
বিভূতিযোগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জ্জুনকে বললেন—বিশ্বে যা যা বিভূতিময়—ঐশ্বর্যযুক্ত,
যার যার সত্তা আছে, যাতে যাতে শ্রী আছে, যা যা তেজঃপূর্ণ তা সকলই আমার মহাতেজের
অংশ হতে প্রকটিত জানবে। এই নিখল বিশ্বপ্রপঞ্চ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একপাদ বিভূতিতে
বিরাজিত। আর বাকী তিনপাদ বিভূতি রয়েছে অমৃতময় লীলালোকে। তাঁর দুটি লীলা। একটি
সৃষ্টিলীলা, অপরটি নিত্যলীলা। সৃষ্টিলীলা পরিবর্ত্তনশীল, মরণধর্ম্মী মৃত্যুময়।
নিত্যলীলা অপরিবর্ত্তনীয়, অমরধর্ম্মী অমৃতময়। সৃষ্টিলীলায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাত্র
এক- চতুর্থাংশ শক্তি ব্যয়িত হয়। আর অবশিষ্ট তিন- চতুর্থাংশ শক্তি নিত্যলীলায়
স্বানুভবানন্দে বিভোর থাকেন। তাঁর এই সৃষ্টিলীলার সমগ্রতার নামই বিশ্বরূপ।
বিশ্বরূপের বিভূতির কথা অর্জ্জুন অন্তর দিয়ে শুনলেন। শুনেই অন্তরে লালসা জেগে উঠলো
বিশ্বরূপ দর্শনের জন্য। কার না এই লালসা জাগে? হিমালয়ের বর্ণনা শুনে হিমালয় দর্শন
করতে কার না প্রাণে ইচ্ছা জাগে? আজকে বিভূতি যোগের শেষ ৩৪ থেকে ৪২ মন্ত্র আমরা
উচ্চারিত করবো এবং শ্রীভগবানের বিশ্বরূপ দেখার জন্য অবশ্যই প্রস্তুতি গ্রহণ করবো।]
৩৪) আমি সর্ব্ব
সংহারক মৃত্যু এবং ভবিষ্যদ বস্তু সমূহের উদ্ভব স্বরূপ। আমিই নারীগণের শ্রী, বাক,
স্মৃতি, মেধা, ধৃতি ও ক্ষমা। [ ঈশ্বর এখানে নিজ মুখে স্বীকার করেছেন যে নারীজাতির
মধ্যে যেসমস্ত দৈবী গুণ দেখা যায় তা তিনি। আমরা ভারতের মাটিতে মাতৃসাধনা করি,
মাতৃজাতিকে দেবীর আসনে বসিয়ে পূজা করি, এ ঈশ্বরেরই পূজা। পুরুষের সমস্ত গুণ নারী
বা মাতৃশক্তি নির্ভর এ কথা আমরা কিভাবে অস্বীকার করবো?]
৩৫) তাছাড়া আমি
সামবেদোক্ত মন্ত্রসমূহের মধ্যে বৃহৎ সামগান। ছন্দসমূহের মধ্যে আমি গায়ত্রী,
মাসসমূহের মধ্যে আমি অগ্রহায়ণ এবং ষড় ঋতুর মধ্যে আমি ঋতুরাজ বসন্ত।
৩৬) ছলাকলার মধ্যে আমি দ্যূতক্রীড়া, আমি তেজস্বীদের তেজ, বিজয়ীদের বিজয়,
উদ্যোগীদের উদ্যম এবং সাত্ত্বিক ব্যক্তিদের সত্ত্বগুণ।
৩৭) আমি যদুবংশীয়দের মধ্যে বাসুদেব, পাণ্ডবগণের মধ্যে ধনঞ্জয়, মননশীল
সর্ব্বজ্ঞদের মধ্যে আমি ব্যাস এবং কবিদের মধ্যে আমি উশনাঃ নামক কবি।
৩৮) দমনকারিগণের আমি দণ্ড,বিজয় লাভে ইচ্ছুকদের আমি নীতি, গোপনীয় বিষয়
সমূহের মধ্যে আমি নীরবতা এবং জ্ঞানীদের জ্ঞানও আমি।
৩৯) হে অর্জ্জুন সকল ভূতের যা কিছু বীজ, তাই আমি। চর, অচর, স্থাবর, জঙ্গম
প্রভৃতি বস্তু সমূহের মধ্যে এমন কোনই বস্তু থাকতে পারে না, যার মধ্যে আমি নেই।
৪০) হে পরন্তপ, আমার দিব্য বিভূতি সমূহের অন্ত নাই। তোমার নিকট এগুলির
যৎকিঞ্চিত মাত্র বললাম।
৪১) যে যে বস্তু বিভূতিসম্পন্ন, ঐশ্বর্যযুক্ত ও বিশিষ্ট শক্তিসম্পন্ন বা
বিশেষ প্রভাবের অধিকারী, আমার তেজ থেকেই সেই সেই বস্তু উৎপন্ন বলে জানবে।
৪২) অথবা হে অর্জ্জুন, এত কথা তোমার জেনেই বা কি লাভ? তোমার এটুকু জানলেই
যথেষ্ট যে, আমি নিজের মাত্র একাংশ দ্বারা এই সমস্ত জগৎ জুড়ে বিদ্যমান আছি। অথবা যা
শুনেছ, তোমার এত কথা শুনেই বা কি লাভ? হে অর্জ্জুন, তুমি মাত্র এটুকু জেনে রাখ যে,
আমার একাংশ দ্বারা এই সমস্ত জগৎ ব্যাপ্ত করে রয়েছি। ইতি বিভূতিযোগঃ নামক দশম
অধ্যায়।
[ জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়। জয় বেদমাতা, বিশ্বমাতা ও ভারতমাতার
জয়। জয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীশ্রীগীতার জয়।]
No comments:
Post a Comment