[ গীতা বিশ্বমানবের সত্যদর্শন। নিখিল বস্তুকে অখণ্ডভাবে দেখা, এই বিরাট
দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গরূপে দেখাই ঠিক দেখা। সেই দেখার নাম বিশ্বরূপ দর্শন। বিশ্বের
যেটি প্রকৃত রূপ, তা যে মহাচৈতন্য—সত্তার অভিভক্ত বিশাল রূপ—তা দেখাই বিশ্বরূপ
দর্শন। সমগ্র জগৎ ভগবানের। জগতের যা কিছু সবই তাঁর কাজ। যা করার তিনিই করেন। আমি
নিমিত্তমাত্র—এই একটি উপদেশই বিশ্বমানবের জীবনের শান্তির বাতাস বইয়ে দেবার পক্ষে
যথেষ্ট শক্তিশালী। আমরা শুধু এই একটি কথা নিয়ত স্মরণপথে রেখে এগিয়ে যাবো। এই
বিশ্বরূপ—বিশ্বের যা কিছু আমি, আপনি, বিশ্বেশ্বরেরই রূপ। তিনিই কর্ত্তা, তিনিই
কর্ম্ম, তিনিই কারণ। আমরা সকলে তাঁর হাতের ক্রীড়নক। তাঁর হাতের ক্রীড়াযন্ত্র।
যন্ত্রী যেমন বাজাবেন, ঠিক তেমনি বাজবো। তাঁর সত্তায় আমার সত্তা। তাঁর
কর্ত্তৃত্বেই আমার কর্ত্তৃত্ব। আমি অধীন, তিনিই স্বাধীন। তাঁর স্বাধীনতার সাথে এক
হওয়ায় আমার স্বাধীনতা, তাঁর সাথে যুক্ততাতেই আমি কৃতার্থ। বিযুক্ততায় অপদার্থ।
আজকে আমরা বিশ্বরূপ দর্শনযোগঃ এর ১ থেকে ১০ মন্ত্র উচ্চারণ করে ঈশ্বরের বিশ্বরূপ
দেখার জন্য সকলেই দিব্য দৃষ্টি পাবার ইচ্ছা করবো।।]
১) অর্জ্জুন বললেন—আমার প্রতি অনুগ্রহবশতঃ তুমি যে পরম গুহ্য অধ্যাত্ম
তত্ত্ব বর্ণনা করলে তাতে আমার এই মোহ বিদূরিত হয়েছে।
২) হে পদ্মপলাশলোচন! প্রাণিগণের উৎপত্তি, তোমার অক্ষয় মহিমার কথা তোমার কাছ
থেকে বিস্তৃতভাবে শুনলাম।
৩) হে পরমেশ্বর, তুমি তোমার বিভূতি সম্পর্কে যা বলবে, তা এরূপই বটে। হে
পুরুষোত্তম, আমি তোমার ঐ ঐশ্বরিক রূপ দেখতে ইচ্ছা করি।
৪) হে প্রভু, তুমি যদি মনে কর যে আমি এই রূপ দর্শনের যোগ্য, তবে হে
যোগেশ্বর, তুমি তোমার নিজের অব্যয় স্বরূপ আমাকে দেখাও।
৫) শ্রীভগবান বললেন—হে পার্থ, নানা বর্ণ ও নানা আকৃতি বিশিষ্ট শত শত সহস্র
সহস্র বিভিন্ন অবয়ববিশিষ্ট দিব্য রূপ দেখো।
৬) হে ভারতকুলগৌরব, আমার এই দেহে দ্বাদশ আদিত্য, অষ্ট বসু, একাদশ রুদ্র,
যুগল অশ্বিনীকুমার এবং ঊনপঞ্চাশ মরুৎ দর্শন কর। পূর্ব্বে যা কখনো দেখ নাই, তেমন
বহুবিধ আশ্চর্য্য বস্তু এখানে দেখতে পাবে।
৭) হে অর্জ্জুন, আমার এই দেহে একত্র অবস্থিত সমস্ত চর এবং অচর জগৎ দেখে
নাও। অপর যা কিছু তুমি দেখতে ইচ্ছা কর তাও এখন দেখে নাও।
৮) কিন্তু তুমি তোমার এই চর্ম্মচক্ষু দ্বারা আমাকে দেখতে পারবে না। এই জন্য
তোমাকে দিব্য দৃষ্টি দিচ্ছি। ইহা দ্বারা আমার এই ঐশ্বরিক যোগ সামর্থ্য দেখো।
৯) সঞ্জয় বললেন—হে রাজন, মহাযোগেশ্বর হরি এসব কথা বলে তারপর পার্থকে পরম
ঐশ্বরিক রূপ দেখালেন।
১০) সেই বিশ্বরূপ অনেক মুখ ও অনেক নেত্রযুক্ত, অনেক অদ্ভুত আকৃতি ও অসংখ্য
দিব্য অলংকার বিশিষ্ট এবং অনেক দিব্য অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত।
[ জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়। জয় বেদমাতা, বিশ্বমাতা ও ভারতমাতার
জয়। জয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপের জয়। জয় শ্রীশ্রীগীতা মাতার জয়।]
No comments:
Post a Comment