Friday, 25 August 2017

গীতা বিশ্বরূপ দর্শন যোগঃ ৪১ থেকে ৪৯ শ্লোক


[ গীতার প্রথম দিকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জ্জুনকে বলেছেন—অর্জ্জুন, কর্ম্ম তোমার, ফল তোমার নহে, “মা ফলেষু কদাচন”। তারপর বলেছেন—কর্ম্ম তোমার—ফল আমার। “ তৎ কুরুস্ব মদর্পণম”। তারপর বলেছেন—কর্ম্ম আমার, ফলও আমার। জীবের জীবত্ব, আমিত্ব, স্বামিত্ব, কর্ত্তৃত্ব সবই আমার। জীব তুমি নিমিত্ত মাত্র। তুমি আমার হাতে ক্রীড়নক মাত্র। তুমি আমার চরণের পাদুকা মাত্র। সত্যসত্যই জীবের প্রকৃত স্বরূপ তাঁর পায়ের পাদুকা হওয়া। তিনি কৃপা করে পায়ে পরলে আমি চলতে পারি। নতুবা আমি জড়ের মত ঘরের কোণে পড়ে থাকতে পারি মাত্রতিনি আমার সেবা নিলে, কৃপায় পাদপদ্মে ঠাই দিলে, আমি পারি একটু খানিক তাঁর সেবা করতে। নতুবা আমার এই বিশাল ব্রহ্মাণ্ডে আর কোন কাজই নেই। কেবল কুকুরের ন্যায় ভক্ষণ করা আর সংসারকে পাহারা দেওয়া। এই জগতের চরাচরের পিতার কাছে, কি আমাদের করার থাকতে পারে? তিনি প্রসন্ন হয়ে যদি আমাদেরকে কোন সৎ কর্ম্ম করার অধিকার দেন তবেই জীবন সার্থক। আজকে আমরা বিশ্বরূপদর্শনযোগঃ এর ৪১ থেকে ৪৯ শ্লোক বা মন্ত্র উচ্চারণ করবো এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বার বার দশদিক থেকে প্রণাম করবো।]
৪১—৪২) তোমার এই বিশ্বরূপ ও অপার মহিমার কথা না জেনে তোমাকে সখা বলে ভেবেছি এবং কখনো বা প্রণয়বশতঃ তোমায় ‘ হে কৃষ্ণ, হে যাদব, হে সখা’ বলে সম্বোধন করেছি। হে অচ্যুত! আহার, বিহার, শয়ন ও উপবেশন কালে একা অথবা বন্ধুজনের সম্মুখে পরিহাসচ্ছলে তোমায় কত না অমর্য্যাদা করেছি। তোমার প্রভাব বুঝবার ক্ষমতাই বা আমার কোথায়? তোমার নিকট এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
৪৩) এই চরাচর জগতের পিতা তুমিই। তুমি পূজনীয় এবং গুরুরও গুরু অর্থাৎ পরম গুরু। হে অমিতপ্রভাব, ত্রিভুবনে তোমার সমান কেউ নাই। তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ থাকবে কি প্রকারে?
৪৪) হে প্রভু, আমি অপরাধী। তাই অবনত মস্তকে তোমাকে প্রণাম করছি, ক্ষমা ভিক্ষা করছি তোমার কাছে। তুমি পরম পূজ্য, পরম ঈশ্বর, পিতা যেমন পুত্রের, সখা যেমন সখার, প্রিয় যেমন প্রিয়ার অপরাধ ক্ষমা করেন, তুমিও সেইরূপ আমার সকল অপরাধ ক্ষমা কর।
৪৫) হে দেব, পূর্ব্বে কখনো যা দেখিনি, সেই রূপ দেখে আমার আনন্দ হয়েছে বটে, কিন্তু ভয়ে আমার মন ব্যাকুলও হয়েছে। হে জগন্নিবাস, হে দেবাদিদেব, তোমার সেই পূর্ব্ব রূপটি আমায় দেখাও তুমি প্রসন্ন হও।
৪৬) আমি তোমার চির পরিচিত কিরীটধারী, গদা ও চক্র- হস্ত রূপটি দেখতে চাই। অতএব হে সহস্রবাহু, বিশ্বরূপ, তুমি তোমার চতুর্ভুজ মূর্তি ধারণ কর।
৪৭) শ্রীভগবান বললেন—হে অর্জ্জুন, তোমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে স্বীয় অলৌকিক যোগপ্রভাবে এই তেজোময় অনন্তানন্তময় যে আদি রূপ তোমায় দেখালাম, তুমি ভিন্ন এ রূপ আর কেউ এর আগে দেখেনি।
৪৮) কারণ বেদপাঠ, যাগ যজ্ঞের অনুষ্ঠান, দান, ব্রত, দুষ্কর ক্রিয়াকর্ম্ম, তপ- জপ, সাধন –ভজন কিছুরই সামর্থ্য নাই ঐ বস্তু দেখাবার। হে কুরুপ্রবীর, মনুষ্যলোকে আমার এই রূপ, তুমি ভিন্ন আর কেউ দেখতে পায়নি।
৪৯) আমার এই ঘোর রূপ দেখে তোমার ভয় পাওয়ার বা কম্পিত হওয়ার কোন কারণ নেই। তুমি এখন অন্তর হতে ভীতি ত্যাগ কর। পরম প্রীতমনে পুনরায় দর্শন কর আমার পুর্ব্ব রূপ। জয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপের জয়।

No comments:

Post a Comment