Tuesday, 22 August 2017

গীতা একাদশ অধ্যায় ১১ থেকে ২০ শ্লোক

[ পবিত্র গীতার ন্যায় উজ্জ্বল নক্ষত্র আর দ্বিতীয় এই পৃথিবীর বুকে অবতীর্ণ হয় নি। অর্জ্জুন ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে মধুর আত্মিক সম্পর্ক ছিল বলেই আজ বিশ্ববাসী শ্রীগীতার ন্যায় দর্শনের স্বাদ আস্বাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন। বিশ্বের তিনটি অবস্থা। সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়। তিনি সৃষ্টি করেন, পালন করেন ও সংহার করেন। ভগবান সৃষ্টরূপটি দেখান নি, তাঁর বিশ্বরূপ দর্শনে। স্থিতরূপটি দেখিয়েছেন। একেবারে সমগ্র স্থিতরূপটি দেখাইতেছেন। তা দেখে অর্জ্জুনের মনে আনন্দের সীমা নেই। তিনি চিনেছেন, তাঁর সখা সারথি মানুষ নহেন, তিনি সনাতন ধর্ম্মের আশ্রয় ও রক্ষক, তিনিই এক সনাতন সুত্রে অনন্ত কোটি জগতের সকলকে গেঁথে রেখেছেন। সহস্র সূর্যের প্রভা যদি আকাশে একই সময়ে উদিত হয় তা হলে সেই দীপ্তি উক্ত বিশ্বরূপের প্রভাবের সামান্যতমর অংশের সমান হতে পারে—এই দৃশ্য দেখে অর্জ্জুন বিস্ময়ে আবিষ্ট। আজ পবিত্র বিশ্বরূপদর্শনযোগঃ অধ্যায়ের ১১ থেকে ২০ মন্ত্র উচ্চারিত হবে তাঁকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার জন্য।]
১১) এই রূপ দিব্য মাল্য ও দিব্য বস্ত্রে ভূষিত, দিব্য গন্ধ দ্বারা অনুলিপ্ত ও অত্যন্ত আশ্চর্যজনক। তা ছিল জ্যোতির্ময়, অনন্ত ও সর্ব্বতোমুখী।
১২) সহস্র সূর্যের প্রভা যদি আকাশে একই সময়ে উদিত হয় তাহলে সেই দীপ্তি উক্ত বিশ্বরূপের প্রভার সামান্যতম অংশের সমান হতে পারে।
১৩) তখন অর্জ্জুন সেই দেবদেবের বিরাট দেহে দেবগণ, পিতৃগণ ও মনুষ্য প্রভৃতি নানা ভাবে বিভক্ত জগৎ একত্র ও অবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দেখতে পেলেন।
১৪) সেই বিশ্বরূপ দেখে অর্জ্জুন আশ্চর্যান্বিত ও রোমাঞ্চিত হলেন এবং অবনত মস্তকে বিশ্বরূপধারী ভগবানকে করজোড়ে বললেন।
১৫) অর্জ্জুন বললেন—হে দেব, আপনার এই বিশ্বরূপ সমস্ত দেবতা, চরাচর জগৎ, বশিষ্ঠ প্রমুখ ঋষিগণকে, ও পদ্মাসনে অবস্থিত সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে দেখতে পাচ্ছি।
১৬) হে অনন্তানন্তময় প্রভু, হে বিশ্বরূপ, আমি সর্ব্বত্রই তোমার বিরাট মূর্তি দেখছি। সর্ব্বত্রই তোমার বহু বাহু, বহু উদর, বহু মুখ ও বহু নেত্র। কোথায় তোমার আদি, কোথায় মধ্য আর কোথায় বা অন্ত—আমি এর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
১৭) কিরীট, গদা ও চক্রধারী, সর্ব্বত্র দীপ্তিমান ও তেজোময় তোমার রূপ। যে দিকে তাকাই সেই দিকে দেখি অগ্নি ও সূর্যের মত তোমার তেজ, তোমার দিকে তাকানো যায় না, তোমার সীমা পাওয়া যায় না।
১৮) তুমি অক্ষর পরব্রহ্ম এবং একমাত্র জ্ঞাতব্য তত্ত্ব। তুমি বিশ্বের পরম আশ্রয়, তুমি অব্যয় ও সনাতন ধর্ম্মের রক্ষক। তুমি সনাতন হরিপুরুষ, ইহাই আমার অভিমত।
১৯) আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমার আদি নেই, অন্ত নেই। তুমি অনন্ত শক্তিশালী ও অসংখ্য বাহুবিশিষ্ট। চন্দ্র ও সূর্য্য তোমার নেত্র, তোমার মুখমণ্ডলে প্রদীপ্ত অগ্নির জ্যোতি। তুমি নিজের তেজে এই জগৎকে সন্তপ্ত করে রাখছো।
২০) হে ভগবান, স্বর্গ ও মর্ত্ত্যের মধ্যবর্ত্তী অন্তরীক্ষ এবং দশ দিক তুমি পরিব্যাপ্ত করে আছ। তোমার এই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে ত্রিভুবন অতিশয় ভীত হয়ে পড়েছে।
[ জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপের জয়।]

No comments:

Post a Comment