[ পবিত্র গীতার
একাদশ অধ্যায়ে বিশ্বরূপ দর্শন হয়ে গেল। এই অধ্যায় শেষ হলে মনে হলো যে, বক্তার আর
কিছু বক্তব্য নেই। সবকিছু বলা ও শোনা শেষ হয়েছে। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র মনে করেছিলেন
একাদশ অধ্যায়ের পর আর গীতা না হলেও চলতো। যা বলার ও শোনার একাদশ অধ্যায়েই চরমতায়
পৌঁছেছে। কথাটা অনেকাংশে ঠিক হলেও গীতার গান ওখানে শেষ হতে পারে না। গীতার মহানায়ক
গীতার গানকে উপযুক্ত “মান” দিয়ে অর্জ্জুনকে সাথে নিয়ে তাঁর জীবনকে গীতাময় করে
তোলার জন্য আঠারো অধ্যায় পর্যন্ত চলেছেন। সখারূপী কৃষ্ণ আর বিশ্বরূপী কৃষ্ণ, দুই-ই
সুন্দর। দুই-ই উজ্জ্বল, দুই-ই মহান। তবু কাকে ধরে সাধন ভূমিতে অর্জ্জুন অগ্রসর
হবেন—এই তত্ত্ব জানতে তাঁর একান্ত আগ্রহ। তাই প্রশ্ন করেছেন দ্বাদশ অধ্যায়ের প্রথম
শ্লোকে। তাই বিশ্বরূপ দর্শনের পর নীরবতা ভেঙ্গে শুরু হয়ে গেল দ্বাদশ অধ্যায়ের
ভক্তিযোগ। এই অধ্যায়ে কুড়িটি মন্ত্র আছে। প্রথম মন্ত্র অর্জ্জুনের জিজ্ঞাসা এবং
শেষ মন্ত্র উত্তরের উপসংহার। আমরা ভক্তিভাবে আজকে ভক্তিযোগের ১ থেকে ১০ মন্ত্র
উচ্চারণ করে সকলেই বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের আপনজন হয়ে উঠবো।]
১) অর্জ্জুন
জিজ্ঞাসা করলেন—এভাবে সর্ব্বদা তোমাতে চিত্ত সমর্পণ করে যে সকল ভক্ত তোমার উপাসনা
করেন এবং যাঁহারা অব্যক্ত অক্ষরের উপাসনা করেন, তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে?
২) শ্রীভগবান
বললেন—যারা সম্পূর্ণভাবে আমাতেই মন নিবিষ্ট করেন, নিত্যযুক্ত হয়ে পরম শ্রদ্ধাভরে
আমার উপাসনা করেন, তাঁরা আমার মতে শ্রেষ্ঠ সাধক।
৩—৪) কিন্তু যারা
সর্ব্বদা সকলের কল্যাণ সাধন করেন, সকলকে সমান দৃষ্টিতে দেখেন, ইন্দ্রিয়গুলি সংযত
করে ইন্দিয়ের অতীত, চিন্তার অতীত, বর্ণনার অতীত সর্ব্বব্যাপী, সকল মূলে অবস্থিত
স্থির ও নিত্য ব্রহ্মকে উপাসনা করেন তাঁরাও আমাকেই প্রাপ্ত হন।
৫) তবে যারা
নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসনা করেন তাঁদের কষ্ট বেশী। কারণ, ব্রহ্মে মনঃস্থির করা
মানুষের পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য।
৬—৭) কিন্তু যারা
সমস্ত কর্ম্মফল আমাতে অর্পণ করেন, একমাত্র আমাতেই চিত্ত স্থির রেখে একনিষ্ঠ ভক্তি
দ্বারা আমার ধ্যান ও উপাসনা করেন, হে পার্থ, আমি তাদিগকে শীঘ্রই মৃত্যুরূপ সাগর
থেকে উদ্ধার করি।
৮) তুমি আমাতেই
মন স্থির রাখ এবং আমাতেই বুদ্ধি নিবিষ্ট কর। তাহলে দেহান্তে তুমি আমাকেই পাবে। এতে
কোন সন্দেহ করো না।
৯) হে অর্জ্জুন,
যদি কোন প্রকারেই আমাতে চিত্ত স্থির রাখতে না পারো, তাহলে পুনঃপুনঃ অভ্যাস দ্বারা
চিত্তকে সমাহিত করে আমাকে পেতে চেষ্টা কর।
১০) এই অভ্যাস
যোগেও যদি অক্ষম হও তাহলে সর্ব্বদা আমার উদ্দেশ্যে কাজ কর। আমার কথা বল, আমার কথা
শুন, শোনাও। যখন যে কর্ম্ম কর, উদ্দেশ্য রাখ আমার প্রীতিবিধান। তাহলেই অভিলষিত
ভক্তিসম্পদ লাভ করবে।
[ জয় বেদভগবান
শ্রীকৃষ্ণের জয়। জয় গীতামাতার জয়। জয় বেদমাতা, বিশ্বমাতা ও ভারতমাতার বেদযজ্ঞের
জয়।]
No comments:
Post a Comment