Wednesday, 30 August 2017

গীতা ক্ষত্রক্ষেত্রজ্ঞযোগ ত্রয়োদশ অধ্যায় ১৩ থেকে ২৪ স্ক্লোক

[ শ্রীগীতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সকলের আপনজন। তিনি সত্ত্ব  রজঃ তমোময় প্রকৃতির অন্ধকারের পরপারে থেকে সকলকে নিজের আশ্রয়ে ধরে রেখেছেন। তিনি নিখিল জ্যোতির জ্যোতি শুদ্ধসত্ত্বময়। সকলের হৃদয়ে তিনি চির বিরাজমান। তিনিই জ্ঞান, তিনিই জ্ঞেয়, তিনিই জ্ঞানগম্য। জীবের হৃদয়ে প্রীতির উদয় হলেই জীব কৃষ্ণভাবে বিভাবিত হয় এবং তাঁকে ভাবতে ভাবতেই তাঁর ভাব লাভ করে, সেইসাথে সর্ব্বধর্ম ত্যাগ করে তাঁর ধর্ম্ম লাভ করে তাঁতেই লীন হয়। আজকে ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগের ১৩ থেকে ২৪ মন্ত্র ভগবানের সাথে এক হয়ে আমরা উচ্চারিত করবো এবং তাঁর স্বধর্ম্মেই আমরা তাঁর কাছে দীক্ষা নিয়ে জীবন ধন্য করবো।]
১৩) এখন জ্ঞেয় কাকে বলে তা বলছি। ইহা জানতে পারলে অমৃত লাভ করা যায়। এই জ্ঞেয় বস্তু পরব্রহ্মস্বরূপ, এর আদি নাই। এর সম্বন্ধে বলা হয় যে ইনি সৎ-ও নহেন, অসৎ- ও নহেন।
১৪) সকল দিকে তাঁর হস্তপদ, সকল দিকে তাঁর চক্ষু, মস্তক ও মুখ, সকল দিকেই তাঁর কর্ণ। তিনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত স্থান ব্যাপিয়া অবস্থিত আছেন।
১৫) তিনি সমস্ত ইন্দ্রিয়—বৃত্তিতে প্রকাশমান অথচ ইন্দ্রিয়বিবর্জ্জিত, সর্ব্বসঙ্গশূন্য অথচ সকলের আধারস্বরূপ, নির্গুণ অথচ সমুদয় গুণের আশ্রয়।
১৬) তিনি সকল জীবের অন্তরে ও বাহিরে আছেন। তিনি স্থাবর ও জঙ্গমরূপে আছেন। তিনি সূক্ষ্মতর—তিনি কাছে থেকেও দূরে আছেন বলে মনে হয়।
১৭) তিনি তত্ত্বতঃ অখণ্ড ও অপরিচ্ছিন্ন কিন্তু সর্ব্বভূতে ভিন্ন ভিন্ন বলে প্রতীত হন। তাঁকে সর্ব্বভূতের পালনকর্ত্তা, সংহারকর্ত্তা ও সৃষ্টিকর্ত্তা বলে জানবে।
১৮) তিনি সকল জ্যোতির জ্যোতিঃ অবিদ্যারূপ অন্ধকারের অতীত বুদ্ধিবৃত্তিতে প্রকাশমান জ্ঞান। তিনি ক্ষেত্রতত্ত্বজ্ঞান দ্বারা লভ্য সর্ব্বভূতের হৃদয়ে অবস্থিত।
১৯) এতক্ষণ আমি তোমাকে ক্ষেত্র, জ্ঞান ও জ্ঞেয় বিষয়ে সংক্ষেপে বললাম। আমার ভক্তগণ ইহা বিশেষ রূপে অবগত হয়ে আমার ভাব বা স্বরূপ বুঝতে পারেন।
২০) প্রকৃতি ও পুরুষ, উভয়কেই অনাদি বলে জানবে। গুণ ও বিকার উভয়েই প্রকৃতি থেকে জাত তা জেনো।
২১) দেহ ও ইন্দ্রিয়ের উভয়ের যে কর্ত্তৃত্ব, তার কারণ প্রকৃতি। আবার সুখ ও দুঃখের কারণ হল পুরুষ।
২২) পুরুষ প্রকৃতিতে অবস্থান করে প্রকৃতি হতে জাত সুখ- দুঃখাদি ভোগ করেন এবং এই গুণ- সংসর্গবশতঃ পুরুষের সৎ ও অসৎ যোনিতে জন্ম হয়।
২৩) এই দেহে অবস্থান করেও পুরুষ দেহ( প্রকৃতি) হতে ভিন্ন। তিনি শুধু উপদ্রষ্টা ও সাক্ষী, অনুমন্তা বা অনুমোদনকারী এবং ভর্ত্তা বা বিধানকর্ত্তা। তিনি ভোক্তা, পরমাত্মা বা মহেশ্বর বলে অভিহিত হন।
২৪) যিনি এইভাবে পুরুষ ও প্রকৃতির গুণসকলকে জানেন, তিনি সকল সময়ে যেরূপ আচরণ করুন না কেন, দেহ অন্তে আর তিনি জন্মগ্রহণ করেন না।
[ জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়। জয় বেদমাতা, বিশ্বমাতা ও ভারতমাতার জয়। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের গীতামাতার জয়।]

No comments:

Post a Comment