Thursday, 14 September 2017

গীতা মোক্ষযোগঃ ৩৬ থেকে ৪৬ শ্লোক




[ পবিত্র গীতা মানব জাতির আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান ও পবিত্র গ্রন্থ। আধ্যাত্মিক জ্ঞান- গুণ ও কর্ম্ম অনুসারে স্রষ্টা মানবজাতিকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। এই ভাগ কোন জাতি প্রথা প্রচলনের জন্য নয়। সকল মানুষকে শ্রীভগবানের পাদপদ্মে শরণাগত হয়ে কল্যাণকর কর্ম্মে নিয়োজিত হয়ে মোক্ষ লাভ করার জন্যই এই বর্ণাশ্রম প্রথার সৃষ্টি। এই বর্ণাশ্রমের মধ্যে থেকে আত্মসমর্পণ পর্য্যন্তই সকলের কার্য্য। হৃদয়ের কপাট খুলে গেলেই মুক্তি। তখন যে যে বর্ণেরই মানুষ হৌক না কেনো তাঁর উপর বর্ষিত হতে থাকবে করুণার ধারা, এই করুণার স্পর্শে জুড়ে দিবে জন্ম- জন্মান্তরের সন্তপ্ত জীবন। তখন আর এই বর্ণাশ্রম দোষও থাকবে না। আজকে মোক্ষ লাভের জন্য মোক্ষযোগের ৩৬ থেকে ৪৬ মন্ত্র আমরা পাঠ করবো শ্রদ্ধা সহকারে। হরি ওঁ তৎ সৎ।]
৩৬) হে অর্জ্জুন, এখন তিন প্রকার সুখের কথা শোন। ক্রমে ক্রমে অভ্যাসবশতঃ এই সুখে আনন্দ লাভ হয় এবং ইহা লাভ হলে দুঃখের অন্ত হয়।
৩৭) প্রথমে বিষের ন্যায় বোধ হলেও পরিণামে যা অমৃততুল্য, যা আত্মবিষয়িণী বুদ্ধির প্রসন্নতা থেকে জন্মে, তা সাত্ত্বিক সুখ।
৩৮) বিষয় ও ইন্দ্রয়ের সংযোগবশতঃ যে সুখ প্রথমে অমৃততুল্য, কিন্তু পরিণামে বিষবৎ, সেই বৈষয়িক সুখকে রাজসিক সুখ বলে।
৩৯) যে সুখ প্রথমে এবং পরিণামেও বুদ্ধির মোহ জন্মায় এবং যা নিদ্রা, আলস্য ও প্রমাদ থেকে উৎপন্ন হয়, তাকে তামসিক সুখ বলে।
৪০) পৃথিবীতে বা স্বর্গে অথবা দেবগণের মধ্যে এমন কোন প্রাণী বা বস্তু নাই যা প্রকৃতিজাত সত্ত্বাদি গুণ থেকে মুক্ত।
৪১) হে পরন্তপ, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্রদিগের কর্ম্ম সকল স্বভাবজাত গুণানুসারেই পৃথক পৃথগ বিভক্ত হয়েছে।
৪২) শম, দম, তপস্যা, শুচিতা, ক্ষমা, সরলতা, শাস্ত্রজ্ঞান, পরমাত্মবিষয়ক অনুভূতি ও বেদবাক্যে বিশ্বাস—এইগুলি ব্রাহ্মণের স্বাভাবিক কর্ম্ম।
৪৩) শৌর্য্য, তেজ, ধৈর্য্য, দক্ষতা, যুদ্ধ থেকে অপলায়ন, দান, প্রভুত্ব করার প্রবৃত্তি—এইগুলি ক্ষত্রিয়ের স্বভাবজাত কর্ম্ম।
৪৪) কৃষি –কার্য্য, গোপালন, বাণিজ্য—এইগুলি বৈশ্যের স্বভাবজাত কর্ম্ম। আর ব্রাহ্মণ- ক্ষত্রিয়- বৈশ্যের সেবা শূদ্রের স্বভাবজাত ধর্ম্ম।
৪৫) নিজ নিজ কর্ম্মে নিষ্ঠাবান থাকলে, মানুষ সিদ্ধি লাভ করে। নিজ কর্ম্মে নিষ্ঠাবান ব্যক্তি কিরূপে সিদ্ধিলাভ করে তা শ্রবণ কর।
৪৬) যার ইচ্ছায় মানুষের সকল কর্ম্মে প্রেরণা জাগে, যিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ব্যাপ্ত করে আছেন, মানুষ নিজ কর্ম্ম দ্বারা তাঁর অর্চনা করলে সিদ্ধি লাভ করে থাকে।
[ জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়। জয় পবিত্র গীতার জয়।]

No comments:

Post a Comment