বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান(৫৪)
তারিখঃ—২১/ ০৯/ ২০১৭
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করে নিজের প্রাণ মায়ের চরণে বলি দিয়ে
মাতৃ-প্রতিমায় প্রাণপ্রতিষ্ঠা করো।]
বেদযজ্ঞ করে মায়ের প্রতিমায় প্রাণপ্রতিষ্ঠা
না করতে পারলে পূজার সকল অঙ্গই ব্যর্থ হয়। মৃতব্যক্তির শরীরকে অবলম্বন করে যত কথাই
তাকে বলা হোক না কেনো তা যেমন ব্যর্থ রোদন ছাড়া কিছু নয়, তেমনি মায়ের প্রতিমাতে
প্রাণপ্রতিষ্ঠা না করতে পারলে সেই প্রাণহীন প্রতিমাকে নিয়ে পূজা করার মাতামাতিই
সার হয়, কোন লাভ হয় না, সবই ব্যর্থ হয়। মায়ের মূর্ত্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হলেই আসে
তাতে জীবন্ত দেবত্ব। তখন সেই জীবন্ত মায়ের নিকট সন্তান যা চাইবে তাই পাবে। আমাদের
সনাতন ধর্ম্মে প্রাণতত্ত্বের সাধনার জন্যই প্রতিমা পূজা। আমরা প্রাণের সাধনার
দ্বারা নিজের মন- প্রাণ- আত্মাকে সর্ব্বভূতে দেখতে সমর্থ হই। উপনিষদে ঋষি এই
প্রাণের সাধনা করতে গিয়ে বলেছেন—“ এই পৃথিবীতে স্বর্গাদিতে যা কিছু আছে তা প্রাণেই
প্রতিষ্ঠিত আছে, তা প্রাণেরই অধীন। হে মহাপ্রাণ, মাতা যেমন তার সন্তানকে রক্ষা করে
তুমি আমাদিগকে সেইরূপ রক্ষা কর। তুমি আমাদিগকে সম্পদ ও প্রজ্ঞা দান কর। রথচক্রের
নাভিতে(কেন্দ্রে) যেমন শলাকা সমূহ প্রতিষ্ঠিত বা যুক্ত থাকে সেইরূপ প্রাণে সব
প্রতিষ্ঠিত। ঋক, সাম, যজু বেদসমূহ এবং যজ্ঞ, ক্ষত্রিয় ও ব্রাহ্মণগণ এই প্রাণে
প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ এই মহাপ্রাণ হতেই সমস্ত বিশ্বের, বেদমন্ত্রসমূহের, যজ্ঞ,
ক্ষত্রিয়ত্ব ও ব্রাহ্মণত্বের উদ্ভব হয়েছে এবং এই প্রাণেই সব প্রতিষ্ঠিত আছে”।
প্রাণপ্রতিষ্ঠার অধিকারী হওয়া আর দিব্য জীবন লাভ করা একই কথা। পার্থিব জীবন হচ্ছে
মৃত্যুলোকের জীবন, এই জীবনের মোহ ত্যাগ করে যারা নিজের জীবন মায়ের চরণে বলি দেয়
তাঁরাই দিব্য জীবন লাভ করেন। এই দিব্য জীবনের সাথে মায়ের দিব্যপ্রাণ এক হয়ে যায়। তখন
সাধক বা পূজক মাকে যা দান করেন, তাই গ্রহণ করেন। আবার সাধক মায়ের কাছে যা আবদার
করেন তাই অনায়াসে পেয়ে যান। জয় মা দুর্গা। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়।
No comments:
Post a Comment