[ শ্রীশ্রীগীতা কেবল
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ও মহাত্মা অর্জ্জুনের পরম গুরু নন। তিনি মানবজাতির সমস্ত বর্ণের
গুরু। গুরু কোন দিন তাঁর শিষ্য- ভক্তকে কুপথ দেখাতে পারেন না, অন্যায় কর্ম্ম করার
নির্দেশ দিতে পারেন না। গুরু সর্বদা নিরপেক্ষ- সত্য ও উদার হয়ে সকলের মঙ্গল হয় এমন
কর্মেই শিষ্যকে নিয়োজিত করেন। গীতা হচ্ছেন
সেই পরমগুরু যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাধ্যমে জগতের সকলের মঙ্গলের জন্য অবতীর্ণ হয়
কুরুক্ষেত্র- ধর্ম্মক্ষেত্রের সংগ্রাম মঞ্চে। আজকে গীতার প্রথম অধ্যায়—অর্জ্জুন- বিষাদযোগঃ এর ২১ থেকে ২৩ পর্যন্ত শ্লোক পাঠ করবো।]
২১—২৩) অর্জ্জুন বললেন—হে কৃষ্ণ, যুদ্ধের
জন্য যারা এখানে এসেছেন, তাঁদের যতক্ষণ না ভাল করে দেখে নিই ততক্ষণ তুমি দুই
সেনাদলের মাঝখানে আমার রথ রাখ। এই যুদ্ধ ব্যাপারে আমাকে কাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে
হবে আমি দেখতে চাই। এই যুদ্ধে পাপমতি ধৃতরাষ্ট্রপুত্র দুর্যোধনের প্রিয় কাজ করতে
ইচ্ছুক হয়ে যারা এখানে সমবেত হয়েছেন, সেই সকল যুদ্ধার্থীকে আমি দেখব।
অর্জ্জুন কত বড়
উদার মহাত্মা ছিলেন তাঁর এই কথার মধ্যেই প্রকাশ পায়। তিনি যুদ্ধ করতে এসেও নিজের
মানবিক সত্তাকে জাগরিত করে রেখেছেন। নির্ভয়ে তিনি উভয় সেনাদলের মধ্যে নিজেকে দাঁড়
করলেন এবং দেখতে চাইলেন দুর্যোধনের মতো অমানবিক, পাপী, কদাচারী ও অত্যাচারী রাজার
পক্ষ অবলম্বন করে কারা এখানে ধর্মযুদ্ধ করতে এসেছেন। অর্জ্জুনের মানবিক সত্তার কথা
ও মহান উদারতার কথা বিশ্বব্যাপী প্রচারিত ছিল। তাঁর এই সৎ মুর্তির দিকে তাকিয়ে কেউ
আর অন্যায় কাজ করার সাহস পেতেন না। বর্তমান যুগ হলে অর্জ্জুনকে এই অবস্থায়
শত্রুপক্ষের সৈন্যরা ছেড়ে দিতেন না। দেখা যাচ্ছ বর্তমানে পাঁচ বছর আগেও যারা দেশ ও
দেশবাসীর স্বার্থে সৎ ও মহানদের পক্ষে ছিলেন হঠাৎ তাঁরা নিজ স্বার্থে তাঁদেরকে
শত্রু বলে ঘোষণা করছেন এবং কোনরকম মানবিকতার পথে না গিয়ে পিছন থেকে তাঁদের হত্যা
করছেন। যার বাড়িতে সেই দলের প্রধানমন্ত্রী নিজে উপস্থিত হন দলবল সহকারে, তিনি আবার
কোন স্বার্থে সেই দল ত্যাগ করে তাঁদের বিরুদ্ধে যেতে পারেন? যে কোন ধর্ম শাস্ত্রে
বলা হয়েছে – যদি একবার কাউকে বন্ধু বলে স্বীকার করে নাও তবে চিরকাল তাঁর সাথে হাতে
হাত মিলিয়ে কাজ করবে, বন্ধুর বিপদ- আদপ- সুখ- দুঃখে কখনও তাঁকে ত্যাগ করবে না। তাই
গীতার বাণী এখন সব পক্ষের জন্য অপরিহার্য হয়ে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে সাংবাদিক থেকে
শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলি বলছেন কোন এক রাজনৈতিক দল ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করছেন। আবার
দেখা যাচ্ছে সেই দলের নেতারায় দলবল সহকারে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ মহাসমারোহে উদ্ভোধন
করছেন। তাঁরা যদি সত্যই সৎ ও উজ্জ্বল মুর্তির উদার মানবিকতার নেতা মন্ত্রী হতেন
তবে নিশ্চয় মহাত্মা অর্জ্জুনের ন্যায় উভয় দলের মাঝে গিয়ে নির্ভয়ে দাঁড়িয়ে সত্যকে
দেখে সত্যের জয় ঘোষণা করতেন। তাই কোন পক্ষের সাথে সংগ্রাম করতে হলে আগে নিজেকে
নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে হয়। নিজের স্বার্থে কখনো মহানরা কোন প্রকার সংগ্রামে লিপ্ত
হন না। জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের জয়।
No comments:
Post a Comment