বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান(৫২)
তারিখঃ—১৯/ ০৯/ ২০১৭
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞে
মাতৃসাধনা সনাতন ধর্মকে মানবিকতার উচ্চশিখরে ধরে রেখেছেন এবং নারী- পুরুষকে
একই আত্মার ভিন্ন ভিন্ন রূপে পূজার বেদীতে বসিয়েছেন।]
বেদযজ্ঞের দ্বারাই আমরা জানতে পারি, ঈশ্বর
স্রষ্টা, জীব সৃষ্ট – জীব ও ঈশ্বরের এই সম্বন্ধ পৃথিবীর বুকে চিরন্তন সত্য।
একমাত্র সনাতন বা হিন্দু ধর্ম ছাড়া ঈশ্বরের পরম মাতৃত্বের চিরন্তন সত্য রূপ কোথাও
খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই যারা সনাতন ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন ধর্ম মতের
সৃষ্টি করেছেন, তাঁরা নারীজাতিকে দেবীর আসনে বসিয়ে পূজা করতে নারাজ। তাঁরা নারীকে
কেবল নিজেদের লালসার বস্তু মনে করেন। একমাত্র হিন্দু ঋষিরা ঈশ্বরের রাজত্বে পিতা অপেক্ষা মাতার সঙ্গে পুত্র- কন্যার সমন্ধ নিবিড়তর জ্ঞাননেত্রে দেখেছেন। মাতৃ- সম্বোধন অধিকতর
প্রাণস্পর্শী এবং সান্ত্বনাদায়ক তাও অনুভব করেছেন। ক্রীড়াক্লান্ত শিশু মাতৃবক্ষে আরাম ও বিশ্রান্তি
লাভ করে। আর্য ঋষিরা তাই পরমকারণকে কেবল মা বলেই ক্ষান্ত হন নি—বিশ্বের সর্বভূতে এ
মাতৃত্বের প্রকাশ দেখিয়েছেন—“ যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা”। মায়ের
মুর্তির দিকে দৃষ্টি সম্পাত করে ভক্ত সাধক দেখেন বজ্রকঠোর পুস্পকোমল শাসন, গর্জন,
পালন, পোষণ – অতি সৌম্য অতি রৌদ্র ব্রহ্মময়ী শক্তির এক করুণাস্নিগ্ধ বিরাট
মাতৃত্ব। সনাতন বা হিন্দু ধর্মের মানুষরা এই ব্রহ্মময়ী শক্তির ও মাতৃত্বের অর্চনা
করেন—আর্য ঋষিদের পথকে অনুসরণ করে। তাঁরই চরণে ক্ষুদ্র আমিত্ব বা অহংকারকে
জলাঞ্জলি দিয়ে, তাঁরই ক্রোড়ে আরোহণ করে হিন্দু সাধকগণ বিশ্বমানবকে ভাই বলে, নিজের
আত্মীয় বলে সম্বোধন করেন। সর্বভূতে মাতৃত্বের দর্শনে সাধক কামজিৎ হন। মাতৃজাতির
চরণতলে নিজেকে সমর্পণ করে জাতীয় জ্ঞান, মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিক জ্ঞান ও আত্মিক
জ্ঞানের আলোতে আলোকিত হন, এই সনাতন ধারা সনাতন বা হিন্দু ধর্মে যুগ যুগ ধরে চলে
আসছে। এই সনাতন ধারার সাথে যুক্ত হলেই মানুষ সত্যজ্ঞান লাভ করে কামের বিনাশ ঘটান—কামের
বিনাশে হয় অন্তরে প্রেমের উদয়। প্রেম আসিলে ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতার বিনাশ ঘটে। সেই
সাথে মানবজাতির ঐক্য দৃঢ়তর হয়। আজ এই ক্ষয়িষ্ণু মানব সমাজে সর্বাধিক প্রয়োজন জাতীয়
একতার। সনাতন পন্থীদের জাতীয় একতা মা দুর্গার আরাধনার মধ্যেই রয়েছে। ভগবান
রামচন্দ্র মা দুর্গার আরাধনা করেই জাতীয় ঐক্যকে প্রতিষ্ঠা করে অশুভ শক্তির বিনাশ
ঘটান। মা দুর্গা আসছেন সপরিবারে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে এই
ভারতের জাতীয় ঐক্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। বিশ্বে শান্তি- সাম্য- সত্য ও ঐক্যের প্রতিষ্ঠা করার জন্য। জয়
মা দুর্গা। জয় বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞের জয়।
No comments:
Post a Comment