[ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গীতা হলো যেকোন রোগের
ঔষধ দাতা মহা- চিকিৎসক। প্রত্যেক মানুষ কম বেশী রোগের শিকার, একথা কেউ অস্বীকার
করতে পারবে না। মহামতি অর্জ্জুনও রোগের শিকার হয়ে মোহবিষ্ট হয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে
ফেলেছিলেন। তিনি গীতার ন্যায় ঔষধ পেয়ে সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে উঠেছেন। অর্জ্জুন নিজে
তা স্বীকার করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বলছেন—আমার স্মৃতি ফিরে পেয়েছি। আমি যে ক্ষত্রিয়ের সন্তান তা ভুলেই
গিয়েছিলাম। সমাজের ক্ষত নিরাময় করে তোলা ক্ষত্রিয়ের ধর্ম্ম। যেখানে অন্যায় সেখানে
আঘাৎ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সমাজের সেবা করায় স্বধর্ম, নচেৎ সমাজে
শান্তি- সাম্য- সত্য- ঐক্যকে ধরে রাখা সম্ভব নয়। সত্যের মনের সাথে নিজের মনকে
যুক্ত করে রাখায় হচ্ছে মানুষের স্বধর্ম্ম। গীতা আরম্ভের প্রথম থেকেই অর্জ্জুনের
দেহ, মন ও বুদ্ধি তিনটিই অসুস্থ ছিল। এই অসুস্থতার চিকিৎসক রোগের নামকরণ করেছেন
ক্লীবতা, কশ্মল, অজ্ঞান- সংমোহ। রোগ নির্ণয়ের পর হতেই চিকিৎসক ঔষধ দান করছেন।
চিকিৎসক এখন খুব আনন্দিত রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ দেখে। তিনি দেখলেন—অর্জ্জুন সুস্থ
হয়েছেন, স্বস্থ হয়েছেন, আত্মস্থ হয়েছেন। আজকে আমরা পবিত্র গীতার মোক্ষযোগের ৪৭
থেকে ৬০ মন্ত্র উচ্চারণ করে অর্জ্জুনের ন্যায় রোগমুক্ত হয়ে উঠবো। হরি ওঁ তৎ সৎ।]
৪৭) পরধর্ম্ম উত্তমরূপে অনুষ্ঠান করার চেয়ে
নিজ ধর্ম্ম অঙ্গহীন হলেও শ্রেষ্ঠ। কারণ, স্বভাবজাত কর্ম্ম করলে মানুষ পাপভাগী হয়
না।
৪৮) হে অর্জ্জুন, স্বধর্ম্ম জাত কর্ম্ম
দোষযুক্ত হলেও তা ত্যাগ করতে নেই। অগ্নি যেমন ধূম দ্বারা আবৃত থাকে তেমনি সকল
কর্ম্মই দোষযুক্ত থাকে।
৪৯) যিনি সর্ব্ব বিষয়ে অনাসক্ত, জিতেন্দ্রিয়
ও নিঃস্পৃহ, তিনি কর্ম্মফল ত্যাগ দ্বারা নৈষ্কর্ম্ম্য সিদ্ধিলাভ করেন অর্থাৎ
কর্ম্মবন্ধন থেকে মুক্ত হন।
৫০) হে অর্জ্জুন,
এইরূপে সিদ্ধিলাভ করে মানুষ কি ভাবে ব্রহ্মকে পায়, তা সংক্ষেপে বলি, শুন। এটি
জ্ঞানের পরম সীমা।
৫১- ৫২- ৫৩)
বিশুদ্ধ- বুদ্ধিযুক্ত হয়ে, ধৈর্য্যসহ স্থির চিত্তে, ইন্দ্রিয় সংযত করে, আসক্তি ও
বিদ্বেষ ছেড়ে, নির্জ্জন স্থানে বাস করে, পরিমিত আহার করে, বাকসংযমী হয়ে, দেহ ও
মনকে সংযত করে, ধ্যান ও বৈরাগ্য আশ্রয় করে এবং অহংকার, বল, দর্প, কাম, ক্রোধ ও
অন্যের কাছ থেকে দানগ্রহণ প্রভৃতি পরিত্যাগ করে, মমত্ব- বুদ্ধিহীন ও প্রশান্তচিত্ত
হতে পারলে, সাধক ব্রহ্মসাক্ষাৎকারলাভে সমর্থ হন।
৫৪) ব্রহ্মভাব-
প্রাপ্ত ব্যক্তি সর্ব্বদা প্রসন্নচিত্ত। তিনি কোনকিছুর জন্য শোক করেন না বা কোন কিছু
আকাঙ্ক্ষা করেন না। তিনি সর্ব্বভূতে সমদর্শী হয়ে আমাতে পরমভক্তি লাভ করেন।
৫৫) সেই
পরমভক্তিবশতঃ আমি যে সর্ব্বব্যাপী ও সচ্চিদানন্দ স্বরূপ, তা তিনি প্রকৃত ভাবে
জানতে পারেন। এইরূপে আমার স্বরূপ জানতে পেরে তিনি আমাতেই লয় প্রাপ্ত হন।
৫৬) সর্ব্বদা
সর্ব্বপ্রকার কর্ম্মে নিযুক্ত থেকেও আমার শরণাগত ব্যক্তি আমার অনুগ্রহে শ্বাশ্বত অব্যয় ব্রহ্মপদ লাভ করেন।
৫৭) অতএব তুমি মনে
মনে সর্ব্বকর্ম্ম আমাতে সমর্পণ করে মৎপরায়ণ হও এবং সমত্ব- বুদ্ধিরূপ নিষ্কাম-
কর্ম্ম- যোগ অবলম্বন করে আমাতে নিবিষ্ট হও।
৫৮) তুমি মদগতচিত্ত
হলে আমার অনুগ্রহে সকল প্রকার দুঃখ
অতিক্রম করবে। কিন্তু অহংকারের বশীভূত হয়ে যদি আমার কথা না শোন তবে তুমি বিনাশ
প্রাপ্ত হবে।
৫৯) “ আমি যুদ্ধ
করব না”—অহংকারবশতঃ তুমি মনে মনে যে এই সংকল্প করছ, তোমার সেই সংকল্প ব্যর্থ। কারণ
প্রকৃতিই তোমাকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করাবে।
৬০) হে কৌন্তেয়,
মোহবশতঃ যে কার্য্য থেকে তুমি বিরত হতে চাইছ, স্বভাবজাত কর্ম্মবশে তাও তোমাকে
নিরুপায় হয়ে করতে হবে। [জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র গীতার জয়।]
No comments:
Post a Comment