Wednesday, 13 September 2017

গীতা মোক্ষযোেগ ২৩ থেকে ৩৫ শ্লোক

[ গীতার জ্ঞান মানুষকে পবিত্র করে তোলে, শক্তিহীনকে শক্তিবান করে তোলে। অযোগ্য ব্যক্তিকেও উৎসাহ দিয়ে, শুভবুদ্ধি দিয়ে যোগ্য করে তোলে। গীতা যারা পাঠ করেন তাঁদেরকে ঈশ্বরকে খুঁজতে যেতে হয় না, ঈশ্বরই গীতা পাঠকের নিকটে এসে ধরা দেন। তিনি কোথায় থাকেন? তিনি সকল প্রাণীগণের অন্তঃহৃদয়ে বাস করেন। গীতার জ্ঞান মানুষকে সেই আলোর প্রদেশে নিয়ে যেতে সক্ষম, যেখানে তাঁর প্রাণের প্রিয় ঈশ্বর বাস করেন। তিনি বিশ্বময় আছেন। সর্ব্বত্র সকল বস্তুতে আছেন। তাই সর্ব্বত্র সকল বস্তুতে তাঁর স্থিতি শুনা যায়, বলা যায়, বিশ্বাস করা যায়তবে তাঁকে পেতে হলে অবস্থায় তাঁর কথার উপর বিশ্বাস করে আমাদেরকে সাত্ত্বিক গুণেরও উর্ধ্বে উঠে তাঁকে পেতে হবে। আজকে মোক্ষযোগের ২৩ থেকে ৩৫ শ্লোক আমরা পাঠ করে ত্রিগুণাতীত হয়ে তাঁকে লাভ করার চেষ্টা করব। হরি ওঁ তৎ সৎ।]
২৩) নিষ্কাম ব্যক্তি অনাসক্তভাবে রাগদ্বেষ –বর্জিত হয়ে যে সকল অবশ্যকরণীয় কর্ম্ম করেন, সেই কর্ম্মকে সাত্ত্বিক কর্ম্ম বলে।
২৪) ফললাভে অভিলাষী বা কর্ত্তৃত্বাভিমানী ব্যক্তি বহু ক্লেশে যে কর্ম্ম করেন তাকে রাজস কর্ম্ম বলা হয়।
২৫) ভাবী পরিণাম, বিত্তক্ষয়, জীবহিংসা ও প্রকৃত সামর্থ্য বিচার না করে মোহবশতঃ যে কর্ম্ম আরম্ভ করা হয় তাকে তামস কর্ম্ম বলে।
২৬) যিনি আসক্তিবর্জ্জিত, যার কর্ত্তৃত্বভিমান ও মমত্ববোধ নাই, যার ধৈর্য্য ও উৎসাহ আছে, সিদ্ধি ও অসিদ্ধিতে যিনি নির্বিকার, সেই কর্ত্তাকে সাত্ত্বিক কর্ত্তা বলে।
২৭) যিনি বিষয়ে আসক্ত, কর্ম্মফলে যার স্পৃহা আছে, যিনি লোভী, হিংসুক, অপবিত্র এবং হর্ষশোকযুক্ত, তিনি রাজসিক কর্ত্তা।
২৮) যিনি অসমাহিত, বিবেকহীন, অবিনয়ী, শঠ পরবৃত্তিনাশক, অলস, অবসন্নচিত্ত ও দীর্ঘসূত্রী, তাকে তামস কর্ত্তা বলে।
২৯) হে অর্জ্জুন, যে আমি তোমাকে বুদ্ধি ও ধৃতির গুণানুসারে তিন প্রকার ভেদ কি, তা পৃথগভাবে বলছি।
৩০) হে অর্জ্জুন, যে বুদ্ধির বলে মানুষ প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি, কার্য্য ও অকার্য্য, ভয় ও অভয়, বন্ধন ও মুক্তি প্রভৃতি তত্ত্ব অবগত হয়, তাই সাত্ত্বিকী।
৩১) হে পার্থ, যে বুদ্ধির দ্বারা ধর্ম্ম ও অধর্ম্ম, কার্য্য ও অকার্য্য যথার্থরূপে বুঝা যায় না তা রাজসী বুদ্ধি।
৩২) হে পার্থ, যে বুদ্ধির ফলে লোকে অধর্ম্মকে ধর্ম্ম বলে মনে করে এবং সব কিছু পদার্থই বিপরীতভাবে গ্রহণ করে, তমোগুণে আবৃত সেই বুদ্ধি তামসী বুদ্ধি।
৩৩) হে পার্থ, যে অবিচলিত ধৃতি দ্বারা মন, প্রাণ ও ইন্দ্রিয়ের ক্রিয়া, সমদর্শন- রূপ যোগবলে নিয়মিত হয়, তা-ই সাত্ত্বিকী ধৃতি।
৩৪) হে অর্জ্জুন, যে ধৃতি ধর্ম্ম, অর্থ ও কামকেই মুখ্য ভাবে চায়, এবং যাতে ফলাকাঙ্ক্ষা থাকে, তাকে রাজসিক ধৃতি বলে।
৩৫) হে অর্জ্জুন, যে ধৃতির বলে নির্বোধ ব্যক্তি নিদ্রা, ভয়, শোক- বিষাদ ও অহংকারের প্রভাব কখনো ত্যাগ করতে পারে না, তাকে তামসিক ধৃতি বলে।
[ জয় বেদভগবান শ্রীকৃষ্ণের গীতার জয়।]

No comments:

Post a Comment