Monday, 1 October 2018

বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান ৪২১ তাং ০১/ ১০/ ২০১৮


      বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান(৪২১) তারিখঃ—০১/ ১০/ ২০১৮
আজকের আলোচ্য বিসয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ কালে ও পিতৃতর্পণকালে বার বার পিতামহ ভীষ্মকে স্মরণ করে নিজাত্মাকে পবিত্র রাখবে, তাহলেই তাঁর গুণে নিজেকে বিভূষিত করতে পারবে।]
পিতামহ ভীষ্মকে নিয়ে চারদিন যজ্ঞ হয়েছে, আজ পঞ্চমদিনে যজ্ঞ শেষ করবো। মহানুভব ভীষ্ম শুধুমাত্র আদর্শ পিতৃভক্ত, আদর্শ সত্যপ্রতিজ্ঞ, এবং আদর্শ বীরই ছিলেন না, তিনি ছিলেন মহান শাস্ত্রজ্ঞ, ধর্ম ও ঈশ্বর তত্ত্ব জ্ঞাতা এবং মহান ভগবদ্ভক্তও। তাঁর অগাধ জ্ঞানের প্রশংসা করে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—‘ আপনি ইহলোক ত্যাগ করলে সমস্ত জ্ঞান লুপ্ত হয়ে –যাবে। জগতে যেসব সন্দেহগ্রস্থ বিষয় আছে, আপনি ছাড়া তার সমাধান করার আর কেউ নেই’। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রেরণায় তিনি একনাগাড়ে কয়েকদিন ধরে যুধিষ্ঠিরকে বর্ণাশ্রমধর্ম, রাজধর্ম, আপদধর্ম, মোক্ষধর্ম, শ্রাদ্ধধর্ম, দানধর্ম, স্ত্রীধর্ম ইত্যাদি বহু মহত্ত্বপূর্ণ বিষয়ের উপদেশ প্রদান করেন, সেগুলি মহাভারতের শান্তিপর্বে এবং অনুশাসনপর্বে সংগৃহীত আছে। সাক্ষাৎ ধর্মের অংশ থেকে উৎপন্ন এবং ধর্মের প্রত্যক্ষ মূর্তি মহারাজ যুধিষ্ঠিরের ধর্মবিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের মীমাংসা করা একমাত্র পিতামহ ভীষ্মের পক্ষেই সম্ভব ছিল। তাঁর উপদেশ শোনার জন্য ব্যাসদেব আদি বহু মহর্ষি সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন।
   ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাহাত্ম ও প্রভাব সম্বন্ধে ভীষ্ম যা জানতেন তখনকার বহু ব্যক্তিই তা জানতেন না। তিনি বহুবার ধৃতরাষ্ট্র এবং দুর্যোধনকে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা জানিয়েছিলেন। রাজসূয় যজ্ঞে অগ্রপূজার জন্য শ্রীকৃষ্ণকেই সর্বোত্তম পুরুষ প্রমাণ করতে তিনি সেই পরিপূর্ণ যজ্ঞস্থলে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা কীর্তন করেছিলেন এবং তাঁকে সাক্ষাৎ ঈশ্বর বলে জানিয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ যখন অর্জুনের রথ থেকে নেমে চক্র নিয়ে তাঁর দিকে ধাবিত হন, তখন ভীষ্ম তাঁর হাতে মৃত্যুলাভকে গৌরবজনক মনে করে অস্ত্র দ্বারা তাঁকে পূজা করার জন্য আবাহন করেন। তিনি যুধিষ্ঠিরকে ভগবান বিষ্ণুর যে সহস্র নামস্তোত্র শুনিয়েছেন, তাতে তাঁর ভগবদ্ভক্তি এবং ভগবদ- তত্ত্ব জ্ঞানের স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। এখনও ভক্তগণ অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে সেই বিষ্ণুসহস্রনাম স্মরণ করেন। শ্রীশংকরাচার্য গীতা, উপনিষদ এবং ব্রহ্মসূত্রের মতো এই বিষ্ণুসহস্রনাম স্তোত্রের ওপরও বিস্তৃত ভাষ্য লিখেছেন। শংকরাচার্যের ভক্তির ফল হল এই যে, সাক্ষাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অন্তিম সময়ে তাঁকে দর্শন দিয়ে কৃতার্থ করেছিলেন। এইভাবে ভক্তি, জ্ঞান, সদাচার যেদিকেই আমরা তাকাই, সেদিকেই আমরা ভীষ্মকে আদর্শ রূপে পাই। ভীষ্মের ন্যায় মহাপুরুষ জগৎ -সংসারের ইতিহাসে পাওয়া দুর্লভ। ভীষ্ম যদিও অপুত্রক ছিলেন, তবুও সমস্ত ত্রৈবর্ণিক হিন্দু আজও পিতৃতর্পণ করার সময় তাঁকে জল- অর্পণ করেন। এই গৌরব ভারতের ইতিহাসে আর কারোরই নেই। তাই সমগ্র জগৎ আজও তাঁকে পিতামহ বলে সম্বোধন করে। ভীষ্মের এই অপুত্রকত্ব বড়ো বড়ো পুত্রবান ব্যক্তিরও ঈর্ষার বিষয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত পিতামহ ভীষ্ম নিজের মহৎ কর্মের দ্বারা সবার অন্তরে এখনও বিরাজ করছেন এবং সবার বিবেককে জাগ্রত করে গৃহযুদ্ধ থেকে মুক্ত থেকে শান্তির জগৎ রচনার কথা বলে চলেছেন। প্রণাম পিতামহ। জয় বেদযজ্ঞের জয়।

No comments:

Post a Comment