বিশ্বমানব শিক্ষা ও বেদযজ্ঞ অভিযান(৪৩০)
তারিখঃ—১০/ ১০/ ২০১৮
আজকের আলোচ্য বিষয়ঃ—[ বেদযজ্ঞ করে জগজ্জননী
কালীমাতার তত্ত্ব অন্তরে ধরে রেখে শ্রদ্ধাশীল হও ও নির্ভয়ে বিশ্বমানব শিক্ষার
কর্মী হয়ে সর্বত্র বিচরণ করো। ]
কালী মহাকালের
শক্তি মুর্তি। যা কিছু কালে ছিল, আছে ও থাকবে—সকলই মহাকালীতে বিরাজমান। অনন্ত অতীত
ও অনন্ত ভবিষ্যৎ একটি নিত্য মুর্তির মধ্যে শাশ্বতভাবে বিরাজিত। সৃষ্টি ও ধ্বংস,
প্রকাশ ও বিনাশ, একই মহাশক্তির পরস্পর- সাপেক্ষ বিবিধ বিকাশ। বীজ ধ্বংসে বৃক্ষের
জন্ম, বাল্যের ধ্বংসে যৌবনের উদয়, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অমৃতত্বের আস্বাদন। ভারতীয়
ঋষিদের ইহা অপরোক্ষ অনুভুতির বিষয়। ধ্বংসের মধ্যে তাঁরা অনুপম সৌন্দর্য দেখেছেন,
অপার করুণা প্রত্যক্ষ করেছেন। সেই করুণাময়ী সৌন্দর্যময়ী ধ্বংসের মহাশক্তির বিগ্রহ
মুর্তিই কালিকা। কেবল ধ্বংসের নয়, বিশ্বের সৃজন, পালন, বিনাশকারী যাবতীয় শক্তিই
কালিকাতে বিরাজিত। বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে যতগুলি ভাব অভিব্যক্ত হয় মানুষের কাছে,
শ্রীকালিকাতে সে সকলই বিরাজমান। মহাপ্রকৃতির পরিপুর্ণ চিত্র কালিকা। এই স্বরূপ
ভক্তের ধ্যাননেত্রে দর্শনীয়।
কালীর হস্ত
চারখানি। দুই হাতে পালন করেন, দুই হাতে নিধন করেন। বামদিকের খড়গ এবং মুণ্ড ভীষণ
ধ্বংসের চিহ্ন। দক্ষিণ দিকের দুই হস্তে বর ও অভয় মুদ্রায় পরম কল্যাণ প্রকটিত। এক হাতে আঘাত, আর এক হাতে সান্ত্বনা। এক হাতে
ভীতি – প্রদর্শন, অপর হাতে সন্তানকে ক্রোড়ে ধারণ। এমন বিরুদ্ধতার অপুর্ব সমন্বয়,
সামগ্রিকতার পুর্ণ অভিব্যক্তি—সমগ্র প্রাকৃতিক শক্তির এমন পুর্ণতম প্রতীক সারা
বিশ্বে কুত্রাপি দৃষ্ট হয় নাই। দেবীর গলদেশ মুণ্ডমালায় বিভূষিত । মুণ্ড হচ্ছে
জ্ঞান- শক্তির আধার। জ্ঞানরূপ মুণ্ডমালায় মহাশক্তির কণ্ঠ বিভূষিত। মুণ্ড সংখ্যা
পঞ্চাশৎ । ইহা পঞ্চাশটি সংস্কৃত বর্ণমালার প্রতীক। বর্ণমালা শব্দ- ব্রহ্মের
বহিরঙ্গ প্রকাশ। আর্যঋষি শব্দব্রহ্ম তত্ত্বের গভীর তলদেশ বিচরণ করে মহাশক্তির রত্ন
উদ্ধার করেছেন। কালিকার কণ্ঠে নরমুণ্ড সুগভীর মন্ত্রশক্তির প্রতীক চিহ্ন। জয় বেদযজ্ঞের জয়। জয়
মা কালী, জয় মা তারা, জয় মা কালী জয়।
No comments:
Post a Comment